ক্যাম্পাস

মা বড্ড একঘেয়ে একটা মানুষ

মাকে নিয়ে লিখতে বসে আমার পুরো স্বত্ত্বা যেন একটা উষ্ণ আলিঙ্গন অনুভব করতে পারছে। একটা চাঁদের অবয়ব দেখতে পাচ্ছে, যেখানে দুটো চোখ শান্ত নদীর মতো চেয়ে আছে। প্রতিবার বাড়ি থেকে ক্যাম্পাসে ফেরার সময় মা যখন বুকে জড়িয়ে ধরেন, আমার পুরো শরীর ভিন্ন অনুভূতিতে শিরশির করে। তখন মনে হয়, পৃথিবীতেও স্বর্গ আছে।

মা মানে আমার কাছে নির্ভরতার এক বিশাল আকাশ, প্রাণবন্ত এক সবুজ দিগন্ত এবং তীব্র গরমে এক পশলা বৃষ্টি। মাকে খুব বলতে ইচ্ছে হয়, “জানো মা, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনযাপন যখন আমার বড্ড একঘেয়ে লাগে, ফুসফুসে অগণিত ধূলিকণা আর হাজার হাজার অমীমাংসিত প্রশ্ন নিয়ে ক্লান্তিতে যখন শরীর চলতে চায় না, তখন আনমনে তুমি নামক বট গাছের ছায়া খুঁজি আশেপাশে।

মাঝে মাঝে সবকিছু ছেড়ে দিয়ে তোমার কাছে চলে যেতে ইচ্ছে করে খুব। উনুনের তাপে তোমার ঘামে ভেজা শরীরের ঘ্রাণ নিতে ইচ্ছে করে, মা। তোমার আদর মাখা শাসনের কণ্ঠ খুব শুনতে ইচ্ছে হয়। তুমি কি আমার হৃদয় থেকে বলা কথাগুলো শুনতে পাও? হঠাৎ দুঃস্বপ্ন দেখে যখন তোমাকে শব্দ করে ডেকে উঠি, তুমি শুনতে পাও মা?”

আমি ঝাড়ফুঁকে বিশ্বাসী না। তবে মা যখন জায়নামাজে বসে দোয়া পড়ে আমাকে ফুঁ দিয়ে দেন, তখন নিজেকে সবচেয়ে বেশি নিরাপদ মনে হয়।

মাকে আমি বড্ড ভালোবাসি। আমার মা আমার জীবনের ধ্রুবক। এই ছোট যাত্রায় যত অর্জন, সবকিছুর আড়ালে আছে আমার এই মহীয়সী নারী। মাকে নিয়ে লেখার যোগ্যতা হয়তো আমি রাখি না। তবে কিছুটা অনুভব করি, মা বড্ড একঘেয়ে একটা মানুষ। জীবনের সুখের সময়টা সবার মাঝে বিলিয়ে দিলেও দুঃখটা যেন তার একারই।

ছেঁড়া জামা-কাপড় কিংবা খালি হাঁড়িতেও যার কোনো অভিযোগ ছিল না কখনো। কিংবা অভিযোগ নেই আমার অসুস্থতার রাতে ঘুমে ঢুলুঢুলু চোখে সারারাত পাশে বসে থাকতে! মা কখনো মুখে ভালোবাসা প্রকাশ করেননি। তবে তা প্রকাশ পেত আমার পরীক্ষার রাতে সেজদায় তার নির্ঘুম রাত কাটানোতে অথবা যেদিন বাড়ি ফিরব সেদিন নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে অপেক্ষার প্রহর গুণাতে।

সত্যিই মায়ের মতো আপনজন এ পৃথিবীতে আর কেউ নেই। মা করুণাময়ী ও স্নেহের খনি। মায়ের ভালোবাসার ন্যায় অকৃত্রিম ভালোবাসা ও স্নেহ পৃথিবীতে দুর্লভ। মায়ের স্নেহ-মমতা যে কী অসীম, তা কল্পনাতীত। মায়ের ভালোবাসা স্বর্গীয় ও স্বতঃস্ফূর্ত। জগতের আর কারো কাছ থেকে এই নিঃস্বার্থ ও পবিত্র ভালোবাসা আশা করা যায় না। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তাঁর এই নিঃস্বার্থ ভালোবাসা চলতে থাকে। 

আল্লাহর কাছে খুব করে চাই, আমার আয়ু মায়ের হোক! না হলে মা অব্দি আমার আয়ু হোক। হঠাৎ খুব ডাকতে ইচ্ছে করছে, মা, ও মাআআআ.......!

(লেখক: শিক্ষার্থী, দ্বিতীয় বর্ষ, আইন ও বিচার বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়)