ক্যাম্পাস

মা কখনো তার স্বপ্নের কথা বলেননি

‘আমার মা’- এর মধ্যেই লুকিয়ে আছে এক বিশালতার গল্প। এই মানুষটি শুধু আমার জন্মদাত্রী নন, তিনি আমার জীবনের আশ্রয়, সাহস, ভালোবাসা আর নির্ভরতার সবচেয়ে বড় উৎস।

আমার মায়ের জীবন ছিল এক নিঃশব্দ সংগ্রাম। মাত্র ৬ বছর বয়সে বাবাকে হারান এবং এরপর থেকেই তার জীবন শুরু হয় কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে। নয় ভাই-বোনের মধ্যে সবচেয়ে ছোট হলেও জীবনের প্রতিটি ধাপে অসীম সহনশীলতা নিয়ে এগিয়ে গেছেন। অল্প শিক্ষিত, সরল অথচ মজবুত মানসিকতার এই নারী ১৬ বছর বয়সে সংসার জীবনে প্রবেশ করেন। স্বামী তখন থেকেই অসুস্থ, সংসারের দায়িত্ব তার কাঁধে এসে পড়ে।

ছোটবেলায় আমি খুব চঞ্চল ছিলাম, কারো কথা শুনতাম না। পরিবারে যেকোনো সমস্যা শুরু হত প্রায়ই আমার কারণে, আর দোষ পড়ত মায়ের ওপর। আব্বু ছিলেন কঠোর মেজাজের, আর মা অতিমাত্রায় নম্র ও সরল। তবুও মা সবকিছু হাসিমুখে সহ্য করতেন। কারণ তার কাছে সন্তান ছিল জীবনের সবচেয়ে বড় ভালোবাসা।

আমাদের চার ভাই-বোনের সংসারে মা কখনো নিজের কথা ভাবেননি। আব্বুর অসুস্থতা, বোনদের দেখভাল, পড়াশোনার খরচ, সংসারের সমস্ত কাজ সবকিছু একাই সামলিয়েছেন তিনি। আমাদের মঙ্গল কামনায় বহুবার প্রার্থনা করেছেন, রোজা রেখেছেন, মানত করেছেন। এমনকি শুনেছি, আমি জন্মানোর আগে তিনি আল্লাহর কাছে দোয়া করেছিলেন, যেন একটি ছেলে সন্তান হয়; তার সেই দোয়া কবুলও হয়।

আমি আজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর মা থেকে দূরে থাকা শুরু হলো। তখন প্রতিনিয়ত অনুভব করছি মা কত বড় আশীর্বাদ ছিলেন, কত বড় ছায়া হয়ে আগলে রেখেছিলেন আমাকে। কিন্তু যখন মায়ের মুখ মনে পড়ে, তার স্নেহ আর আত্মত্যাগের কথা ভাবি, তখন মন কেঁদে ওঠে। মা আমাকে কখনো দোষ দেননি, কখনো বলেননি তোর জন্য আমি এত কষ্ট পেয়েছি।  তিনি সবসময় আগলে রেখেছেন, ভালোবেসেছেন, এমনকি নিজের চোখের জল লুকিয়ে রেখেছেন আমাদের অজান্তে।

আমার মা আজো একজন গৃহিণী। তবে আমার চোখে তিনি একজন সত্যিকারের মহামানবী। কোনো দামি ডিগ্রি নেই, তবুও জীবনের পাঠ যেভাবে শিখিয়েছেন, সেটা কোনো বিশ্ববিদ্যালয় দিতে পারে না। কখনো নিজের স্বপ্ন বলেননি, কারণ তিনি আমাদের স্বপ্ন পূরণেই খুশি। তার নিজের জীবনে হয়তো অনেক অপূর্ণতা রয়ে গেছে, কিন্তু আমাদের পূর্ণতা দেখেই তিনি তৃপ্ত।

আজ মা দিবসে আমি তাকে কিছু উপহার দিতে পারি না। কিন্তু তার জন্য আমার প্রার্থনা আছে। শুধু চাই আমার মা যেন চিরকাল সুস্থ থাকেন, সুখী থাকেন। তার ত্যাগ আর ভালোবাসা যেন আল্লাহ কবুল করেন। 

মা, তুমি শুধু আমার জীবনের আলো নও, তুমি আমার সমস্ত পরিচয়ের উৎস। তোমার ভালোবাসা, সাহস ও নিরব স্নেহ আমাকে প্রতিটি ধাপে পথ দেখিয়েছে এবং দেখাচ্ছে। তোমাকে ভালোবাসি মা; অশেষ, নিঃস্বার্থ ও অতল।

(লেখক: শিক্ষার্থী, তৃতীয় বর্ষ, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়)