ক্যাম্পাস

ইবির পুকুরে মিলল শিক্ষার্থীর মরদেহ

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শাহ আজিজুর রহমান হল সংলগ্ন পুকুর থেকে এক শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

নিহত বিশ্ববিদ্যালয়ের আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সাজিদ আব্দুল্লাহ। তিনি শহীদ জিয়াউর রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার আহসান হাবিবুল্লাহর সন্তান। 

বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৬ টার দিকে পুকুরের পানিতে মরদেহটি ভাসতে দেখে পুলিশে খবর দেন শিক্ষার্থীরা। পরে ইবি থানা পুলিশের উপস্থিতিতে মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

এদিকে, রাত ৮টায় কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ড. সুতাপ রায় উদ্ধার করা মরদেহের ব্যাপারে তিনি জানান, ডুবে যাওয়ার কারণে তার মৃত্যু হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুরের দিকে অনেকে পুকরের মাঝখানে মরদেহটি একটু ভেসে থাকতে দেখেন। তবে ময়লা মনে করে তারা গুরুত্ব দেননি। পরে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে মরদেহটি পাড়ের দিকে এলে বিষয়টি জানাজানি হয় এবং দ্রুত ক্যাম্পাসে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

খবর পেয়ে দ্রুত ইবি থানা পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্তব্যক্তিরা ঘটনাস্থলে পৌঁছালে তাদের উপস্থিতিতে মরদেহটি পুকুর থেকে উদ্ধার করা হয়। পরে মরদেহটি বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হলে সেখান প্রাথমিক পরীক্ষা-নীরিক্ষা শেষে অ্যাম্বুলেন্সে করে কুষ্টিয়া মেডিকেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। 

পুকুর পাড়ে অবস্থিত দোকানী আকমল বলেন, “দুপুর ১টার দিকে দেখি কি যেন একটা উঁচু হয়ে আছে। মনে হচ্ছিলো প্যান্ট ভেসে আছে। পরে আসরের দিকে দেখি, মাথা ভেসে উঠেছে। তখন বিষয়টি জানাজানি হয়।”

শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের ২০২১-২২ বর্ষের শিক্ষার্থী জাফর বলেন, “আমি হল ডাইনিংয়ে যাওয়ার সময় সাজিদকে দেখি। তখন মনে হচ্ছিল ওর খুব মন খারাপ।”

তবে দাওয়াহ অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ বর্ষের শিক্ষার্থী ইনসানের দাবি, “মৃত্যুর খবরের আগে সাজিদকে বিকেল ৫টার দিকে কল দেই। কল রিসিভ করা হলেও কয়েক সেকেন্ড হ্যালো হ্যালো করি। কিন্তু সাজিদের ফোন থেকে কেউ কথা বলেনি।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. শাহেদ বলেন, “লাশটি দেখে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা যাচ্ছে, কমপক্ষে ৩-৪ ঘণ্টা আগেই মারা গেছে। উদ্ধার করার পর তার মধ্যে জীবনের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তার শরীর ফুলে গিয়েছিল এবং নাক দিয়ে রক্ত বের হচ্ছিল। তবে কিছু মেডিকেল নিয়ম ও আইনি বিষয়ের কারণে আমরা এখানেই মৃত ঘোষণা করতে পারি না। ডিক্লেয়ারেশনের জন্যই তাকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।”

ইবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী হাসান বলেন, “ঘটনার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। আমরা লাশটি উদ্ধার করে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে পাঠাই। সেখানে নিশ্চিত হওয়া না গেলে তাকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানকার কর্তৃপক্ষই মৃত্যুর বিষয়টি চূড়ান্তভাবে নিশ্চিত করবে।”

তবে তার শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন ওসি।

এ ঘটনায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সাজিদের মৃত্যু কীভাবে ঘটল—তা নিয়ে এখনো কেউ নিশ্চিত নয়। পুলিশ বলছে, ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন এবং পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে কেউ এ ব্যাপারে বিস্তারিত কথা বলতে চাচ্ছেন না।