ক্যাম্পাস

ইবি শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় নতুন মোড়, কমপ্লিট শাটডাউনের হুঁশিয়ারি

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থী সাজিদ আব্দুল্লাহর মরদেহের ময়না তদন্তের প্রাথমিক প্রতিবেদনে পাওয়া তথ্যে ঘটনার নতুন মোড় নিয়েছে। এতে করে প্রকৃত রহস্য উদঘাটনে ফের বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা।

বিক্ষোভ থেকে সাত দফা দাবিসহ ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের আহ্বান জানিয়েছেন তারা। দাবি না মানলে আগামী মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে প্রশাসন ভবন চত্বরে অবস্থান কর্মসূচি পালন ও বিশ্ববিদ্যালয়কে শাটডাউন ঘোষণা করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তারা।

সোমবার (২১ জুলাই) বিকেলে ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৭ টার পর্যন্ত ক্যাম্পাসের প্রধান ফটক আটকিয়ে বিক্ষোভ করেন তারা। গত ১৯ জুলাই থেকেই সাজিদের মৃত্যুকে ‘হত্যাকাণ্ড’ দাবি করে সুষ্ঠু তদন্ত ও নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে বিক্ষোভ করছেন তারা।

এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রদল, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ছাত্রশিবির, ছাত্র ইউনিয়ন ও ইসলামী ছাত্র আন্দোলনসহ অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভে অংশ নেন।

এ সময় শিক্ষার্থীদের উত্থাপিত দাবিগুলো হলো- সাজিদ হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক বিচার ট্রাইবুনালের মাধ্যমে ন্যূনতম সময়ে সম্পন্ন করতে হবে, সাজিদ হত্যার জন্য ক্যাম্পাস বাদী হয়ে মামলা করবে ও ক্যাম্পাস সাজিদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিবে, মামালার তদন্তের ভার পিবিআইকে দিতে হবে, অধিকতর তদন্ত ও সাজিদ হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত অন্যান্য প্রশ্নের সমাধানের জন্য বিচার বিভাগীয় তদন্ত করতে হবে, প্রশাসন সম্পূর্ণ ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে ও প্রতি ফ্লোরে সিসি ক্যামেরা লাগাবে, নিরাপত্তা প্রশাসনের পরিপূর্ণ নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে স্পষ্ট বিবৃতি দিবে এবং ক্ষমাপ্রার্থনা করতে হবে, ভিসেরা রিপোর্ট দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রদানের তাগিদ দিতে হবে।

গত ১৭ জুলাই বিকেল সাড়ে ৬টায় শাহ আজিজুর রহমান হল সংলগ্ন পুকুর থেকে আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ বর্ষের শিক্ষার্থী সাজিদের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ১৮ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও হল প্রশাসন থেকে দুইটি তদন্ত কমিটি করা হয়। ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে উভয় কমিটি।

গত ১৮ জুলাই সকাল সাড়ে ৯টায় সাজিদের মরদেহের ময়না তদন্ত করা হয়। এ নিয়ে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. রুমন রহমান জানান, সাজিদের ময়না তদন্তের প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ময়না তদন্তের প্রায় ৩০ ঘণ্টা পূর্বে (অর্থাৎ ১৬ জুলাই আনুমানিক দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার আগে) সাজিদের মৃত্যু হতে পারে। 

অন্যদিকে সাজিদের পাশের রুমের আবাসিক শিক্ষার্থীরা জানান, সাজিদের লাশ উদ্ধারের আগেরদিন বুধবার (১৬ জুলাই) রাত ১১টায় শাহ আজিজুর রহমান হলের পুকুর পাড়ে সাজিদের জুতা দেখার দাবি করেছেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। লাশ উদ্ধারের সময় গায়ে থাকা পোশাকেই এদিন বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বৃষ্টিতে ভিজে ফুটবল খেলতে দেখা গেছে সাজিদকে। ফুটবল খেলার পর বিকেল ৪টার দিকে ক্যাম্পাসের জিয়া মোড়ে এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথাও বলেন তিনি।

এরপর থেকে তার কোন খোঁজ পাওয়া না গেলেও তার ফোনে কল করা হলে কয়েকবার ফোন রিসিভ হয়। এদিকে লাশ উদ্ধারের পর সাজিদের ফোনটি তার কক্ষ থেকে পাওয়ার দাবি করেছেন তার বন্ধু।

তার সঙ্গে থাকা অন্য খেলোয়াড়রা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও জিয়া মোড়ের দোকানী আব্দুল আলীম জানান, প্রায় সোয়া ৪টা পর্যন্ত ফুটবল খেলেছেন তারা। একই পোশাকে ফুটবল খেলার পর তাকে জিয়া মোড়ে দেখেছেন। এ সময় তার শরীর বৃষ্টিতে ভেজা অবস্থায় ছিল। খেলার সময় সাজিদের পরনে যে পোশাক ছিল, সেই পোশাকেই তার লাশ উদ্ধার করা হয়। 

বুধবার রাত ১১টার দিকে পুকুর ঘাটে এক জোড়া কালো জুতা দেখেন সমাজকল্যাণ বিভাগের ২০২৩-২৪ বর্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থী। তাদের একজন জানান, তারা কয়েকজন বন্ধু বুধবার রাতে পুকুর পাড়ে আড্ডা দেওয়ার সময় একজোড়া কালো জুতা দেখেন। সেটা নিয়ে তারা পরস্পর দুষ্টুমিও করেন। পরে তারা সেখান থেকে চলে যান। লাশ উদ্ধারের সময় ওই স্থান থেকেই সেই জুতা জোড়া জব্দ করা হয়।

বুধবার বিকেলের পর সাজিদকে আর তার কক্ষে দেখা যায়নি বলে জানিয়েছেন তার পাশের কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থীরা। সেদিন তার রুমমেটরা কেউ হলে ছিলেন না বলে জানা গেছে।

বুধবার রাতে ও বৃহস্পতিবার সাজিদের ফোনে তার বন্ধুরা কল দিলে তা রিসিভ হলেও অন্য পাশ থেকে কোনো কথা আসেনি বলে জানিয়েছেন তার বন্ধুরা। 

সাজিদের লাশ উদ্ধারের পর তার কক্ষ থেকে সেই ফোন উদ্ধারের দাবি করেছেন তার বন্ধু ইনসান। তিনি বলেন, “লাশ উদ্ধারের পর সাজিদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য আমার এক জুনিয়রের মাধ্যমে তার কক্ষ থেকে ফোনটি নিয়ে আসি।”

প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামান বলেন, “আমরা তদন্তের অগ্রগতির জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। এর আগে শিক্ষার্থীরা অনেকগুলো দাবি দিয়েছিলেন, যেগুলো বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে।”

উপাচার্যের রুটিন দায়িত্বে থাকা উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এয়াকুব আলী বলেন, “তদন্তের বিষয়টি পুলিশের উপর বর্তায়। আর যেহেতু তার বাবা একটি মামলা দায়ের করেছে। তাই এ বিষয়ে পুনরায় মামলা করার পরিকল্পনা নেই। আমরা তার পরিবারের করা মামলায় সর্বোচ্চ সহযোগিতা করব। এছাড়া মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে প্রশাসনের তদন্ত কমিটি কাজ করছে এবং শিক্ষার্থীদের দাবি বাস্তবায়নে প্রশাসন যথেষ্ট আন্তরিক বলে জানান তিনি।