চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের এক বহিরাগত কর্মীকে আটক করেছে প্রক্টরিয়াল বডি ও নিরাপত্তা দপ্তরের সদস্যরা।
আটকের পর তার ল্যাপটপে বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন জায়গার অন্তত ১০-১২ জন নারীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কের ভিডিও পাওয়া গেছে। এছাড়া আরো সহস্রাধিক আপত্তিকর ছবি-ভিডিওসহ জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্মনিবন্ধন জালিয়াতি ও রাষ্ট্রবিরোধী নাশকতার প্রমাণ মিলেছে।
সোমবার (২৮ জুলাই) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয়-২৪ হলের সামনে থেকে দিদারুল ইসলাম শুভ নামের ওই ছাত্রলীগ কর্মীকে আটক করা হয়। পরে মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) প্রক্টরিয়াল বডির দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য।
জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, দিদারুল ইসলাম শুভর বাড়ি ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার করমুল্যাপুর গ্রামে। তিনি দাগনভূঞা উপজেলা ছাত্রলীগের কর্মী। নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী হিসেবে আগস্টের পর থেকে তিনি ছদ্মবেশে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আশ্রয় নেন এবং পার্শ্ববর্তী রেলক্রসিং এলাকায় অবস্থান করে নানা অপকর্ম চালিয়ে আসছিলেন।
ডিভাইস যাচাই করে জানা গেছে, আটক শুভ ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের একাধিক গোপন অনলাইন গ্রুপের সদস্য ছিলেন। এসব গ্রুপে দেশবিরোধী বিভ্রান্তিকর ও উসকানিমূলক প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হত। ল্যাপটপে ‘unity is strength’ নামের একটি গোপন গ্রুপের এক বার্তায় দেখা যায়, অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের বিরুদ্ধে সরাসরি ‘উৎখাতের’ পরিকল্পনা ছড়ানো হয়েছে।
ওই গ্রুপের এক বার্তায় বলা হয়েছে, ‘আগামী মাসের ২০ তারিখ পর্যন্ত সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার অনুরোধ রইলো। প্রশাসনের নজর থেকে নিজেকে যতটা বাঁচিয়ে রাখা যায়, সবাইকে সাবধান করে দিন। অবৈধ সরকারকে উৎখাতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আগামী মাসে ১১ দিন যেকোনো সময়ে কর্মসূচি দিতে পারে। ইউনূস সরকার এই বিষয়ে প্রশাসনকে সর্বোচ্চ হুঁশিয়ারি দিয়েছে। আগামী ১১ দিন সবাই নিজেদের হেফাজত রাখুন এবং অন্যকে সচেতন করুন।”
এছাড়া তিনি ছাত্রলীগের আরো বেশ কয়েকটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের সঙ্গে সংযুক্ত আছেন।
জিজ্ঞাসাবাদে আরো উঠে আসে, নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি রেজাউল হল রুবেলের সঙ্গে শুভর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। মেসেঞ্জারে নিয়মিত চবির বিভিন্ন তথ্য রুবেলকে পাঠানোর প্রমাণ পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারি প্রক্টর নুরুল হামিদ কানন বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নারী শিক্ষার্থী আমাদের কাছে তার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ দিলে আমরা তাকে আটক করি। পরে জিজ্ঞাসাবাদে ও তার ডিভাইস চেক করে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে। সে বিভিন্ন ধর্মের অনেক মেয়ের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করে ভিডিও ধারণ করে। সে ভুয়া এনআইডি কার্ড ও জন্মসনদ তৈরির সঙ্গে জড়িত। এছাড়া তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন দেশবিরোধী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ততার প্রমাণ মিলেছে।”
তিনি বলেন, “আমরা প্রয়োজনীয় জিজ্ঞাবাদ শেষে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুলিশ ফাঁড়িতে হস্তান্তর করেছি। সেখানে থেকে তাকে হাটহাজারী মডেল থানায় নেওয়া হয়েছে। পুলিশ প্রশাসন তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে।”