বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিতে চলমান অনশনে ছাত্রদল, শিবিরসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে সংহতি জানানোর পর শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভেদ দেখা দিয়েছে।
এদিকে, এ অনশনের পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় অনশন প্রত্যাহার করা উচিত বলে মনে করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
জানা গেছে, রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ব্রাকসু) বিশ্ববিদ্যালয় আইনে অন্তভূর্ক্তি ও নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবিতে দুইদিন ধরে আমরন অনশনে আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। অনশনকে কেন্দ্র করে তিন ভাগে বিভক্ত হয়েছে অনশনকারী ও অনশনে নেতৃত্বদানকারীরা।
এক ভাগে আছেন বেরোবির সাবেক ছাত্রলীগ কর্মী রহমত আলী ও আশিক। দ্বিতীয় অংশে আছেন সাবেক সমন্বয়ক শামসুর রহমান সুমন, আরমান, হাজিমুল হক, রুবায়েত, জাহিদ হাসান জয়, রুম্মানুল ইসলাম রাজ এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছে শিবলি সাদিক, কায়সার, আতিকুর।
অভিযোগ উঠেছে, সাধারণ শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ না থাকায় অনশনকে সাপোর্ট দিতে নবাগত শিক্ষার্থীদের ডেকে নেওয়া হয়। নয়জন শিক্ষার্থী শুরুতে অনশনে বসেন। পরে তাদের মধ্যে শিবলি, মুশফিকুর রহমান শুভ নামে দুই শিক্ষার্থী অনশন প্রত্যাহার করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রদল, ছাত্রশিবিরসহ অন্যান্য ছাত্র সংগঠন অনশনে সংহতি জানানোর পর উপাচার্য ১০ দিনের সময় চাইলে ওই দুই শিক্ষার্থী অনশন প্রত্যাহার করেন বলে জানা গেছে।
এতে করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইতোমধ্যেই আলোচনার উদ্যোগ নিলেও অনশনকারীদের বিভক্ত অবস্থান পুরো বিষয়টিকে অনিশ্চিত করে তুলেছে।
সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলেন, ছাত্র সংসদ নির্বাচন আমরা সব শিক্ষার্থীরাই চাই। ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধের মতো ভোগান্তিসূচক সিদ্ধান্ত ও ষড়যন্ত্র এড়াতে অনশন প্রত্যাহার করা উচিত।
অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের শিক্ষার্থী মাসুদ রানা বলেন, “সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কোনো প্রকার আলোচনা ছাড়াই হুটহাট প্রেস ব্রিফিং করেন সমন্বয়করা। সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতামত ছাড়াই বিভিন্ন কর্মসূচি দিয়ে প্রশাসনকে চাপে রাখতে চান তারা। গত সময়ে রাজনীতি নিষিদ্ধ করে একক আধিপত্য বিস্তার করে নানা প্রোগ্রামের আয়োজক হিসাবে কাজ করেছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অপকর্মের খবরও শোনা যায়।”
তিনি বলেন, “গত ১৭ আগস্ট নয়জন অনশনে বসেন। তাদের মধ্যে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও সাবেক শিক্ষার্থীরাও রয়েছেন। জানি না কোন উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্য তারা অনশনের মতো পথ বেছে নিয়েছেন। তবে বিগত কিছুদিন ধরে প্রশাসনের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের টানাপোড়া দেখা যায়, হয়তো এজন্য প্রশাসনকে চাপে রাখতে নতুন কৌশল অবলম্বন করেছেন তারা।”
পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী তুহিন রানা বলেন, “আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, ছাত্রসংসদের দাবিতে চলমান অনশন স্বার্থক। বিশ্ববিদ্যালয় আইনে সংযুক্তি ও রোডম্যাপ ঘোষণার জন্য বেরোবি প্রশাসন ১০ দিন সময় চেয়েছে, যা আমার কাছে যুক্তিসঙ্গত মনে হয়েছে। এরপরও অনশন চালিয়ে যাওয়াকে আমি সমর্থন করি না। কারণ আপনারা লক্ষ্য করলে দেখবেন, এতে বাইরে কিছু সমন্বয়ক ও এনসিপির নেতাকর্মীদের আনাগোনা দেখা যাওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধের মতো ভোগান্তিসূচক সিদ্ধান্ত ও ষড়যন্ত্র এড়াতে অনশন প্রত্যাহার করা উচিত।”
অনশন ত্যাগকারী শিক্ষার্থী শিবলি সাদিক বলেন, “ছাত্র সংসদ আমাদের প্রাণের দাবি। এই দাবির জন্য আমরা ধারাবাহিকভাবে কর্মসূচি দিয়ে আসছি। আমরা সর্বশেষ অনশন কর্মসূচি পালন করছিলাম। উপাচার্য আমাদের কাছে ১০ দিন সময় নেন। আমরা জানতে পেরেছি আন্দোলনে নানা পক্ষ জড়িয়ে গেছে এবং আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রভাবিত করার জন্য চেষ্টা চলছে। তাই আমরা অনশন প্রত্যাহার করেছি।”
তিনি বলেন, “অনশন প্রত্যাহারের সময় আমাদের শিবির ট্যাগ দিলে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছি- আমরা এখানে কোনো দলীয় পরিচয়ে অনশন করতে আসেনি। কাজের সময় সঙ্গী, আর না পাইলেই বলে জঙ্গি।”
এ বিষয়ে বেরোবি প্রক্টর ড. ফেরদৌস রহমান বলেন, “শিক্ষার্থীরা যেকোনো দাবি করতে পারে, এটা তাদের সাংবিধানিক অধিকার। সাধারণ শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে মতামত প্রকাশ করুক- এটাই আমাদের প্রত্যাশা। ছাত্র সংসদের নীতিমালা বিশ্ববিদ্যালয় সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হবে, এজন্য ১০ কর্মদিবস সময় চেয়েছেন উপাচার্য স্যার। এভাবে অনশন না করে উপাচার্যের এ প্রতিশ্রুতি মেনে নেওয়া উচিত।”
এদিকে, মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) বিকেল ৫টায় অনশন প্রত্যাহারকারী শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের দক্ষিণ গেটে প্রেস ব্রিফিং করেন।
এ সময় তারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের প্রতিশ্রুত সময়সীমার মধ্যে ছাত্র সংসদ বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে এবং শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করবে। এ সময় পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে।
ছাত্র সংসদের দাবিতে রবিবার (১৭ আগস্ট) বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্তর গেটে নয়জন শিক্ষার্থী অনশনে বসেন। তারা হলেন, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের আশিকুর রহমান আশিক, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের জাহিদ হাসান জয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের মাহিদ ইসলাম, ফাইন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের কায়সার, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের নয়ন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের রাজ, অর্থনীতি বিভাগের আতিকুর,গণিত বিভাগের আরমান ও ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিবলি সাদিক।
এর দুইদিন পর অনশনে বসেন খোকন নামে পরিসংখ্যান বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী।