ক্যাম্পাস

ব্রয়লারের হিট-স্ট্রেস থেকে রক্ষা করবে গাবা সমৃদ্ধ খাদ্য

বাংলাদেশে ব্রয়লার খামারিদের জন্য তীব্র গরমের মৌসুম একটি বড় চ্যালেঞ্জ। উচ্চ তাপমাত্রা (৩০-৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি) যখন দীর্ঘসময় ধরে থাকে, তখন মুরগির শরীরের স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হয়। এ সময় ব্রয়লারের খাবার গ্রহণের পরিমাণ কমে যায়। ফলে ওজন বৃদ্ধি ধীর হয়ে যায়।

এছাড়া বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস, হাঁপানি ও শ্বাসকষ্ট, কোষ নষ্ট হওয়া এমনকি মৃত্যুহারও বেড়ে যায়। ফলে ব্রয়লারের উৎপাদন কমে যায়, খামারিদের লোকসানের মধ্যে পড়তে হয়। যার প্রভাব পড়ে পুরো পোলট্রি শিল্পের ওপর।

এ অবস্থায় মুরগির হিট-স্ট্রেস মোকাবিলা করে নিরাপদ, রোগ প্রতিরোধসম্পন্ন ও অধিক উৎপাদনক্ষম ব্রয়লার মুরগি পালনে আদর্শ হতে পারে গামা এমাইনোবিউটারিক এসিড (গাবা) সমৃদ্ধ খাদ্য।

গবেষণায় দেখা গেছে, গাবা সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণের ফলে ব্রয়লারের গড় ওজন সাধারণ ব্রয়লারের তুলনায় প্রায় ১২ থেকে ১৫ শতাংশ বেশি হয়। পাশাপাশি খাদ্যের রূপান্তর হার উন্নত এবং গরমে সৃষ্ট তাপমাত্রা জনিত হিট-স্ট্রেস লক্ষণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। ফলে ব্রয়লার মুরগির মৃত্যু হার কমে গেছে এবং অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগের পরিমাণও কমেছে।

গাবা হলো এক ধরনের প্রাকৃতিক অ্যামাইনো অ্যাসিড জাতীয় যৌগ, যা ব্রয়লারের স্নায়ুতন্ত্রকে শান্ত রাখে এবং শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। প্রাকৃতিকভাবে অঙ্কুরিত ধান, ভুট্টা, গম ও সয়াবিনে প্রচুর পরিমাণে গাবা পাওয়া যায়। 

গাবা সমৃদ্ধ বিশেষ খাদ্য সাপ্লিমেন্ট হিসেবে ব্রয়লারে প্রয়োগ করলে এটি ওজন বৃদ্ধির সঙ্গে পুষ্টি শোষণ ও হজম দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। কর্টিসল নামক স্ট্রেস হরমোন কমানোর ফলে তাপমাত্রা জনিত মানসিক ও শারীরিক চাপ কমে। পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ায়। অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে কোষের ক্ষয় রোধ, প্রদাহ হ্রাস ও ইমিউন সেল শক্তিশালী করতে উপযোগী গাবা সমৃদ্ধ খাদ্য।

উষ্ণ পরিবেশে ব্রয়লার পালনের চ্যালেঞ্জ ও গাবা সমৃদ্ধ খাদ্যের সমাধান বিষয়ে গবেষণা শেষে এমনটাই জানিয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ফিজিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহা. ইলিয়াছুর রহমান ভূঁইয়া। তিনি ‘ডেভেলপিং হিট রেসিস্টেন্ট ব্রয়লারস: ইনহেনসিং পারফরম্যান্স উইথ গাবা এনরিচড ফিড’ শীর্ষক গবেষণা প্রকল্পের সহযোগী গবেষক হিসেবে কাজ করেছেন।

ঢাকা ব্যাংক পিএলসির অর্থায়নে গত বছরের সেপ্টেম্বরে গবেষণা প্রকল্পটি শুরু হয়। শের-ই-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ পরীক্ষামূলক ল্যাবরেটরি গবেষণা ও ফিল্ড ট্রায়াল গবেষণায় গাবা সমৃদ্ধ খাদ্যের সাফল্যের দাবি করেন সংশ্লিষ্ট গবেষকেরা।

ড. ইলিয়াছুর রহমান জানান, গামা  সমৃদ্ধ সাপ্লিমেন্ট প্রয়োগ করলে তা তাপ জনিত স্ট্রেস কমায়। ফলে মুরগির গ্রহণকৃত খাদ্যের কার্যকারিতা বাড়ে, যা দ্রুত ওজন বাড়ায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বজায় রাখে। এর ফলে মৃত্যুহার কমে এবং অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়। এটি প্রয়োগকৃত মুরগির স্বাদ ও গন্ধ সাধারণ ব্রয়লার মুরগির মতো নয়, বরং দেশি মুরগির মতো হয়ে থাকে।

তিনি জানান, গাবা সমৃদ্ধ খাদ্যের মাধ্যমে ব্রয়লার উৎপাদের খরচও অনেক কম। গাবা পানিতে মিশিয়েও খাওয়ানো যায়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গাবার চকলেট পাওয়া যায়। গাবা সমৃদ্ধ খাদ্য সহজলভ্য করার জন্য বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে কথা চলছে, যেন খামারীরা উপকৃত হতে পারে।

গবেষণার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রধান গবেষক ও শের-ই-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি অ্যান্ড টক্সিকোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোছা. শরীফা জাহান লাবনী বলেন, “এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল- ব্রয়লার মুরগির বৃদ্ধির উপর উচ্চ তাপজনিত প্রভাব মূল্যায়ন করা, তাপ ও চাপের পরিস্থিতিতে ব্রয়লারদের তাপ স্থিতিস্থাপকতা এবং কর্মক্ষমতা উন্নত করতে সম্ভাবনা যাচাই, ডোজের মাত্রা এবং বিতরণ পদ্ধতি বিবেচনা করে গাবা-সমৃদ্ধ খাদ্যের প্রণয়ন করা এবং বাণিজ্যিক ব্রয়লার উৎপাদন ব্যবস্থায় গাবা-সমৃদ্ধ খাদ্য বাস্তবায়নের জন্য ব্যবহারিক সুপারিশ প্রদান করা।”

তিনি আরো বলেন, “বাংলাদেশের গ্রীষ্মকাল ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে এ উদ্ভাবন ব্রয়লার শিল্পে এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিতে পারে। গাবা সমৃদ্ধ খাদ্যের প্রসার ঘটলে দেশের মাংস উৎপাদন বৃদ্ধি ও খামারিদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়ন সম্ভব হবে। গাবা একটি প্রাকৃতিক অন্তঃসৃষ্ট যৌগ, যা দ্রুত বিপাকিত হয়। তাই সাধারণত এটি অবশিষ্টাংশ হিসেবে কোষ বা টিস্যুতে জমা হয় না।”