শিক্ষার্থীদের অনশনের মধ্যেই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ইউজিসির নির্দেশনার তোয়াক্কা না করে আবারো শিক্ষক নিয়োগের বোর্ড আহ্বান করেছেন।
জানা গেছে, পূর্ব নির্ধারিত গত ১৭ আগস্ট সমাজবিজ্ঞানের অস্থায়ী শিক্ষক নিয়োগের বোর্ডে ইউজিসির অনুমোদন না থাকার বিষয়টি জানাজানি হলে উপাচার্য নিজে গত ১৪ আগস্ট রাতে বাতিল করেন।
অন্যদিকে, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অস্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ বোর্ড গত ১৮ আগস্ট হওয়ার কথা থাকলেও তড়িঘড়ি করে তা গত ১৭ আগস্ট ডাকা হয়েছিল।
সমাজবিজ্ঞান বিভাগের মতো ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বোর্ড বাতিল না করে একদিন এগিয়ে আনায় এ নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়। উপাচার্যের ঘনিষ্ট প্রক্টর ড. ফেরদৌস রহমানের বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ হওয়ায় তিনি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে অনেকেই দাবি করছেন। তড়িঘড়ি করে বোর্ড একদিন এগিয়ে দেওয়াতে অনেক প্রার্থীরই পরীক্ষা কেন্দ্রে আসতে বেগ পেতে হয়েছে।
অন্যদিকে, গত ১৭ আগস্ট সকাল থেকেই শিক্ষার্থীদের ছাত্র সংসদের দাবিতে পূর্বঘোষিত অনশন কর্মসূচি শুরু হয়। এরই মধ্যে একদিন এগিয়ে শিক্ষক নিয়োগের বোর্ড করায় হতবাক শিক্ষার্থীরাও।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, সোমবার (১৮ আগস্ট) ইইই বিভাগের অস্থায়ী ভিত্তিতে শিক্ষা ছুটির বিপরীতে নিয়োগ বোর্ড অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। এছাড়াও বুধবার (২০ আগস্ট) গণিত বিভাগে অস্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ বোর্ড এবং পরদিন বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অস্থায়ী ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগের বোর্ড অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে।
এসব অস্থায়ী পদে নিয়োগ দিতে হলে ইউজিসির অনুমতির প্রয়োজন। তবে ইউজিসির সূত্র বলছে, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এরূপ কোনো অনুমতি নেওয়া হয়নি।
ইউজিসির সুস্পষ্ট নির্দেশনা অমান্য করে উপাচার্য ড.শওকাত আলী একাই এসব বোর্ডের তারিখ নির্ধারণ করেন বলে জানা গেছে।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের জন্য অনুসরণীয় গাইডলাইনসহ একটি পরিপত্র গত ২৮ মে জারি করে ইউজিসি।
ইউজিসির অর্থ, হিসাব ও বাজেট শাখার পরিচালক রেজাউল করিম হাওলাদার স্বাক্ষরিত সেই পরিপত্রে স্পষ্টভাবে খণ্ডকালীন ও শিক্ষা ছুটির বিপরীতে শিক্ষক নিয়োগ না দিতে বলা হয়। আর শিক্ষক নিয়োগ দিলেও সেক্ষেত্রে অবশ্যই মঞ্জুরি কমিশনের পূর্ব অনুমিত নিতে হবে বলে উল্লেখ করা হয়। অন্যথায় এ খাতে বাজেট বরাদ্দ দেওয়া হবে না বলেও পরিপত্রে সতর্ক করা হয়। এছাড়াও এ উপাচার্যের সময়ে দুইটি বিভাগের অস্থায়ী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তিও স্থগিত করার পরামর্শ দেয় ইউজিসি। উপাচার্য সেই নির্দেশনাও মানেননি।
এই পরিপত্র জারি সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইউজিসির পরিপত্রকে উপেক্ষা করে এর পূর্বে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষা ছুটির বিপরীতে একজন শিক্ষককে নিয়োগ প্রদানের জন্য বোর্ডের তারিখ নির্ধারণ করেন। পরে এটা জানাননি হলে তিনি সেই বোর্ড স্থগিত করেন।
এ বিষয়ে জুলাই আন্দোলনে সামনের সারিতে থাকা শিক্ষার্থী এসএম আশিকুর রহমান বলেন, “২৪-এর এই বিপ্লব ও রক্তঝরানো গণঅভ্যুত্থানের পরও বিশ্ববিদ্যালয়ে ইউজিসির নির্দেশনা অমান্য করে শিক্ষক নিয়োগ কোনভাবেই কাম্য নয়। এটি শুধু শিক্ষার্থীদের ত্যাগ ও সংগ্রামের প্রতি চরম অবমাননা নয়, বরং দেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার জন্য একটি বড় হুমকি।”
তিনি বলেন, “আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই এবং স্পষ্টভাবে প্রশাসনকে বলতে চাই, ২৪-পরবর্তী সময়েও যদি আপনারা স্বৈরাচারের মতো নিয়োগ বাণিজ্য এবং দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেন, তবে তা রুখে দিতে আমরা ছাত্রজনতা প্রস্তুত। প্রয়োজনে সব অন্যায় এবং দুর্নীতিকে রুখে দিতে আবারো রাজপথে নামব। তবুও কোনো অন্যায়, দুর্নীতির স্থান এ বেরোবিতে হতে দেব না।”
এ বিষয়ে বেরোবি উপাচার্য ড. শওকাত আলী বলেন, “আমি অনেক আগেই বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিলাম। পরে ২৮ মে ইউজিসি পরিপত্র জারি করেছে। এটা বোর্ড গঠন চূড়ান্ত নয়। সিন্ডিকেটে পাসের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ চূড়ান্ত করা হবে।”
নিয়োগ বোর্ড একদিন এগিয়ে আনার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি রেগে গিয়ে ফোন কেটে দেন।
ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. তানজিম উদ্দিন বলেন, “খণ্ডকালীন বা পূর্ণকালীন শিক্ষক নিয়োগ দিতে হলে অবশ্যই অনুমতি নিতে হয়, যা ইউজিসির আইনে বলা আছে। আমি বিষয়টি দেখছি।”