ক্যাম্পাস

রাকসুর মনোনয়নপত্র বিতরণ কার্যক্রম স্থগিত, শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ

অনিবার্য কারণে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচন ২০২৫ এর মনোনয়নপত্র বিতরণ কার্যক্রম স্থগিত করা করেছে।

মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) রাত ১২টার দিকে রাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মো. আমজাদ হোসেন স্বাক্ষরিত এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

গত ২৮ জুলাই রাকসুর নির্বাচন কমিশনার ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী বুধবার (২০ আগস্ট) সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পযর্ন্ত রাকসু নির্বাচনের মনোনয়নপত্র বিতরণ কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা ছিল।

মনোনয়নপত্র বিতরণ স্থগিত করার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে। শিক্ষার্থীরা এটাকে ষড়যন্ত্র বলে দাবি করছেন।

এ বিষয়ে সাবেক সমন্বয়ক মেহেদী সজীব তার ফেসবুকে লিখেছেন, “রাকসু নির্বাচনের মনোনয়নপত্র বিতরণ কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে, যা রাকসু হওয়ার পথে আরেকটি বাধা। এই ধরনের ষড়যন্ত্রের আভাস পাচ্ছিলাম। অবশেষে হলোও তাই! রাকসু ১৫ সেপ্টেম্বরই অনুষ্ঠিত হতে হবে। এর কোনো ব্যত্যয় ঘটলে তা দীর্ঘমেয়াদে সংকট তৈরি করবে। তফসিল অনুযায়ী বাকি তারিখের কর্মসূচিগুলো বাস্তবায়ন করবে রাকসু নির্বাচন কমিশন- এমনটাই আমাদের জোরালো দাবি।”

সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার তার ফেসবুক লিখেছেন, “অল এবাউট পোষ্য কোটা! আবারো বলতেছি জান দেব জুলাই দেব না। জুলাইয়ের কারণে রাবি প্রশাসনের দুঃখ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছি। ইনসাফের পক্ষে লড়াই চলবে। কোটা ফিরে আসবে না এবং রাকসুও আমরা আদায় করেই নেব।”

আরেক সাবেক সমন্বয়ক আকিল বিন তালেব লিখেছেন, “রাকসু নির্বাচনের মনোনয়নপত্র বিতরণ কার্যক্রম কোনো যৌক্তিক কারণ উল্লেখ না করেই স্থগিত করা হয়েছে। আমরা মনে করি, এটি রাকসু পুনরুদ্ধারের পথে একটি অযৌক্তিক বাধা। শুরু থেকেই যে ষড়যন্ত্রের আভাস পাওয়া যাচ্ছিল, আজকের এই সিদ্ধান্ত তারই বাস্তব প্রতিফলন।”

তিনি আরো লিখেছেন, “আমরা স্পষ্টভাবে জানাতে চাই, রাকসু নির্বাচন অবশ্যই ঘোষিত তারিখ ১৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে হবে। নির্ধারিত তারিখ থেকে কোনো প্রকার ব্যত্যয় ঘটলে তা দীর্ঘমেয়াদে গভীর সংকট তৈরি করবে, যার দায়ভার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেই নিতে হবে। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী বাকি কার্যক্রম যথাসময়ে বাস্তবায়ন করার জন্য আমরা রাকসু নির্বাচন কমিশনের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি। শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার কোনোক্রমেই রুদ্ধ করা যাবে না। রাকসু শিক্ষার্থীদের অধিকার, এটি কোনো দয়া নয়। এটি আমাদের সংগ্রামের অর্জন।”

অনিবার্য কারণ দেখিয়ে হঠাৎ জরুরি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বন্ধ ঘোষণা করা হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু)-এর মনোনয়ন ফরম বিতরণ। এদিকে রাকসু কমিশনের এ সিদ্ধান্তে উদ্বেগ ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবির।

বুধবার (২০ আগস্ট) রাত ২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রশিবিরের প্রচার সম্পাদক মো. শামীম পাটোয়ারীর পাঠানো এক প্রেসবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ উদ্বেগ ও প্রতিবাদ জানান সংগঠনটির নেতাকর্মীরা।

শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ এবং সেক্রেটারি মুজাহিদ ফয়সাল এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, রাকসু শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ প্রায় ৩৫ বছরের এক আকাঙ্ক্ষার নাম। জুলাই বিপ্লব পরবর্তী প্রশাসন নিয়োগ হওয়ার পরেই ঘোষণা করেছিল ৬ মাসের মধ্যে রাকসু বাস্তবায়ন করবে। কিন্তু সেটা নিয়ে বিগত কয়েকমাস ধরে টালবাহানা শুরু করে আসছে। সর্বশেষ গত ২৮ জুলাই সিনেট ভবনে ঘোষিত রাকসুর তফসিলে ২০ আগস্ট মনোনয়ন ফরম বিতরণ শুরু হওয়ার তারিখ নির্ধারিত থাকলেও কোনো কারণ ছাড়াই হঠাৎ বন্ধ ঘোষণা করা হলো। রাকসু নির্বাচন কমিশনের এহেন দ্বিচারিতায় আমরা খুবই উদ্বেগ প্রকাশ করছি, সেইসঙ্গে এই সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, রাবি শাখা ছাত্রশিবির মনে করে রাকসু নির্বাচন কমিশন একটা রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের অছাত্রদেরকে সুযোগ করে দেওয়ার জন্য এ রকম সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, নির্বাচন কমিশন যদি কোনো সংগঠনের সঙ্গে সমঝোতা করে থাকে এবং নির্দিষ্ট সময়ে রাকসুর সব কাজ সমাধান কিংবা শেষ করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে এই ক্যাম্পাসের সব শিক্ষার্থী এর বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে বাধ্য হবে।

হঠাৎ মনোনয়নপত্র বিতরণ কার্যক্রম বন্ধ রাখার বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মো. আমজাদ হোসেন বলেন, “আমাদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন ছিল। চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। গতকাল সকাল থেকে সব ধরনের প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ ছিল। আমাদের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ধর্মঘটে ছিল। হল পর্যায়ে কার্যক্রম বন্ধ ছিল। আমাদের অফিস কিছু সময়ের জন্য বন্ধ ছিল। আমরা ভেতরে ভেতরে কাজ করেছি। এজন্য হল পর্যায়ে মনোনয়নপত্র পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। আজ আমরা নির্বাচন কমিশনের সবাই বসে মনোনয়নপত্র বিতরণের একটা নতুন তারিখ ঠিক করব।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. মাঈন উদ্দিন বলেন, “আগামী রবিবার (২৪ আগস্ট) সকাল ৯টা থেকে যথারীতি নিয়ম অনুযায়ী রাকসুর মনোনয়নপত্র বিতরণ করা হবে। ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর রাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।”