ক্যাম্পাস

সাক্ষাৎকারে সাদিক কায়েম: আমরা চাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হোক সবার

আসন্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন প্যানেলে শিক্ষার্থীদের কাছে পৌছানের চেষ্টা করছে রাজনৈতিক ও স্বতন্ত্র প্যানেলের প্রার্থীরা। ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে নির্বাচন করছেন ছাত্রশিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক আবু সাদিক কায়েম।

চেষ্টা করছেন আচরণবিধি মেনে শিক্ষার্থীদের দ্বারে পৌঁছানোর। ডাকসুর নির্বাচনী পরিবেশ, প্রতিশ্রুতি, সম্ভাব্য কর্মকাণ্ড ও ইশতেহারসহ বিভিন্ন বিষয়ে রাইজিংবিডি ডটকমের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ঢাবি সংবাদদাতা ই এম সৌরভ। 

রাইজিংবিডি: নির্বাচন নিয়ে এখন পর্যন্ত পরিবেশ কেমন দেখছেন? কোনো শঙ্কা আছে কি?

সাদিক কায়েম: বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল প্রশাসন একটি নির্দিষ্ট দলকে বেশি প্রতিনিধিত্ব করছে এবং বিশেষ আদর্শ লালন করছে। অথচ নির্বাচনের প্রধান পূর্বশর্ত হলো ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’। আমরা চাই, সব প্রার্থী ও অংশীজনের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হোক। শিক্ষকরা যদি নিজেদের দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টা করেন, তবে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হবে। তাই গ্রহণযোগ্য নির্বাচনই সবার প্রত্যাশা।

রাইজিংবিডি: ২০১৯ সালের ডাকসু নির্বাচনের সঙ্গে এবারের নির্বাচনের পার্থক্য কোথায়?

সাদিক কায়েম: ২০১৯ সালে ফ্যাসিবাদী শাসন ছিল, ক্যাম্পাসগুলো ছিল সন্ত্রাসীদের ক্যান্টনমেন্ট। শিবিরের হাজার হাজার কর্মী নির্যাতিত হয়েছে, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ছিল না। কিন্তু জুলাই বিপ্লবের পর পরিস্থিতি বদলেছে। আজ শিক্ষার্থীরা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা পাচ্ছে, সহাবস্থানের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। মেধা ও প্রয়োজনের ভিত্তিতে হলে সিট দেওয়া হচ্ছে। এটাই সবচেয়ে বড় সার্থকতা।

রাইজিংবিডি: কেনো আপনাদের প্যানেলকে ইনক্লুসিভ প্যানেল বলছেন?

সাদিক কায়েম: জুলাই বিপ্লব আমাদের শিখিয়েছে- ঐক্যবদ্ধ লড়াই সফলতা আনে। তাই শুধু দলীয়ভাবে নয়, বরং সবার জন্য প্যানেল করেছি। এখানে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী, উপজাতি (চাকমা) শিক্ষার্থী, নারী শিক্ষার্থী, জুলাই বিপ্লবের তরুণ যোদ্ধা, ক্রীড়াবিদ ও গবেষকদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সম্পাদকদেরও দক্ষতার ভিত্তিতে নির্বাচন করা হয়েছে। আমরা চাই- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হোক সবার, যেখান থেকে সবার বাংলাদেশ গড়ে উঠবে।

রাইজিংবিডি: ভিপি পদে আপনার জয়ের সম্ভাবনা কতটা দেখছেন? ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের অবস্থান কী? পুরো প্যানেল কি জয়ী হতে পারবে? 

সাদিক কায়েম: জুলাই বিপ্লবে আমি শুরু থেকে মাঠ পর্যায়ে সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেছি। বিপ্লব-পরবর্তী ১ বছর আমরা শহীদ পরিবার, আহত শিক্ষার্থী ও ক্যাম্পাস সংস্কারের কাজে সক্রিয় থেকেছি। পাশাপাশি মেডিকেল ক্যাম্প, প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা, বিভিন্ন দাবিদাওয়া প্রশাসনের কাছে উপস্থাপন করেছি। শিক্ষার্থীরা বিশেষ করে ছাত্রীদের আস্থা আমাদের ওপর বেড়েছে। তারা পরামর্শ দিচ্ছে, সহযোগিতা করছে। এ কারণেই আমরা আশাবাদী- ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট সফল হবে।

রাইজিংবিডি: ছাত্রী হলগুলো থেকে কেমন সাড়া পাচ্ছেন? 

সাদিক কায়েম: অতীতে ডাকসু-চাকসু নির্বাচনে ছাত্রীরা আমাদের সর্বাধিক সমর্থন দিয়েছে। গত ১ বছরে তাদের অংশগ্রহণও বেশি ছিল। আমাদের মেনুফেস্টোতে নারীদের নিরাপত্তা, গার্ডিয়ান লাউঞ্জ, ক্যান্টিন-হাইজিন সুবিধা, ডে কেয়ার সেন্টার, রাতের জরুরি চিকিৎসা, নারী বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, সংখ্যালঘুদের অধিকার- সবই অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আমরা নারীবান্ধব ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ক্যাম্পাস গড়তে চাই। তাছাড়া, এখন নারী শিক্ষার্থীদের ব্যপক সাড়া পাচ্ছি।

নারীদের কাছে শিবির সম্পর্কে ফ্যাসিবাদী বিষবাষ্প এখন নেই বললেই চলে। দুঃখজনকভাবে রাজনীতি কিংবা রাজনীতির বাইরে ছাত্রীদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ এখনো গড়ে উঠেনি। অব্যাহত কটূক্তি, প্রোপাগান্ডা, বিদ্বেষমূলক প্রচার, সাইবার বুলিং ও ট্যাগিংয়ের শিকার হচ্ছেন নারীরা। ডান-বাম ঘরানার কেউই রেহাই পাচ্ছেন না এই ব্যাধি থেকে। চব্বিশের জুলাই বিপ্লবের সফলতার অন্যতম কারিগর আমাদের ছাত্রী বোনেরা। তাদের সাহসী অবদান ও দুর্নিবার নেতৃত্ব আমাদের বিজয়কে তরান্বিত করেছে। আমরা নারীদের জন্য মসৃণ পথ তৈরি করে দিতে চাই। 

রাইজিংবিডি: ডাকসুতে শিবিরের অংশগ্রহণের ইতিহাস জানতে চাই। 

সাদিক কায়েম: ১৯৭৭ সাল থেকে ইসলামী ছাত্রশিবির ডাকসুর প্রতিটি নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। ১৯৭৯ সালের তাহের-কাদের পরিষদ, ১৯৮০ ও ১৯৮২ সালের এনাম-কাদের পরিষদ, ১৯৮৯ ও ১৯৯০ সালের আমিন-মুজিব-হেলাল পরিষদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে। বহু হামলা-মামলার শিকারও হয়েছি। শুধু ২০১৯ সালে দমন-নিপীড়নের কারণে অংশ নিতে পারিনি। তাই অনেকে বলছে ছাত্রশিবির ‘প্রথমবার অংশ নিচ্ছে’-এটা অপপ্রচার ও বিভ্রান্তি।

রাইজিংবিডি: জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী ডাকসুতে আপনাদের অঙ্গীকার কী?

সাদিক কায়েম: বিপ্লব-পরবর্তী ডাকসু নির্বাচনে আমাদের অন্যতম প্রধান অঙ্গীকার- এমন একটি রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি করা, যেখানে নারীরা মুক্তভাবে ও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে নিজেদের স্বকীয়তা বজায় রেখেই রাজনীতিতে অংশ নিতে পারবেন। এ যাত্রা কণ্টকমুক্ত নয়। কিন্তু প্রতিজ্ঞা করছি, নারীদের জন্য একটি নিরাপদ বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার এই পথযাত্রায় আমরা থামব না।

রাইজিংবিডি: আপনাকে ধন্যবাদ।

সাদিক কায়েম: রাইজিংবিডিকেও ধন্যবাদ।