ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের প্রচারণার প্রথম দিনেই ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের দুটি ব্যানার ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
মঙ্গলবার (আগস্ট) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে দুই ধাপে এ ঘটনা ঘটে। প্রথমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ব্যানার ভাঙচুরের ছবি ছড়িয়ে পড়লে সরেজমিনে গিয়ে এর সত্যতা মেলে।
দুপুর ২টা ১৯ মিনিটে চারুকলায় একটি ভাঙা ব্যানার পড়ে থাকতে দেখা যায়, যদিও ভেতরে আরেকটি ব্যানার তখনো অক্ষত ছিল। পরে বিকাল ৩টার দিকে সহকারী প্রক্টর ইসরাফিল প্রাং সেটিও ভাঙা অবস্থায় দেখতে পান।
এ বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদপ্রার্থী ও ঢাবি শিবির সভাপতি এসএম ফরহাদ বলেন, “প্রচারণার প্রথম দিনই আমাদের ফেস্টুন ফেলে দেওয়া হয়েছে। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। নির্বাচন কমিশনের উচিত দ্রুত তদন্ত করে দায়ীদের শাস্তির ব্যবস্থা করা। এটা সন্দেহাতীতভাবে ফ্যাসিবাদী শক্তির কাজ৷”
সহকারী প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক ইসরাফিল প্রাং বলেন, “আমরা অন্য একটা কারণে শাহবাগ থানায় ছিলাম। খবর পেয়ে এসে এ ধরনের অবস্থা দেখতে পাই। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে।”
ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের বিবৃতি
ফেস্টুন ভাঙচুরের ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে শিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট। তারা বলেন, আমরা অত্যন্ত উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি—একটি কুচক্রী মহল আসন্ন ডাকসু নির্বাচন বানচাল করার উদ্দেশ্যে ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের ব্যানার মাটিতে ফেলে দিয়েছে এবং জোটের কার্যনির্বাহী সদস্য পদপ্রার্থী সাবিকুন নাহার তামান্নার ছবিকে বিকৃত করে তাদের পূর্বের ফ্যাসিবাদী চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে।
তারা আরো বলেন, আমরা নির্বাচন কমিশনের বিধিমালা মেনে নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ব্যানার স্থাপন করেছি। কিন্তু এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠী উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার লক্ষ্যে এ ন্যাক্কারজনক কাজ করেছে। একইসঙ্গে বোরকা পরা একজন নারী শিক্ষার্থীর ছবিকে বিকৃত করার মাধ্যমে প্রমাণিত হয়—এখনো খুনি হাসিনার আমলের ঘৃণা, ইসলামোফোবিয়া ও হিজাবোফোবিয়ার কুৎসিত রাজনীতি টিকে আছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ড নিঃসন্দেহে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত এবং ধর্মীয় প্রতীকের অবমাননার সামিল।
বিবৃতিতে ওই প্যানেলের প্রার্থীরা বলেন, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে আমরা দেখেছি, এই চারুকলা অনুষদের অভ্যন্তরেই একটি গোষ্ঠী খুনি ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার ব্যঙ্গাত্মক ভাস্কর্য পুড়িয়ে ফেলেছিল। আরো দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে—একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর অপরাধকে আড়াল করার জন্য দুষ্কৃতিকারীদের পরিচয় ঢেকে দিয়ে চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীদের ওপর দায় চাপানোর ঘৃণ্য অপচেষ্টা করছে কিছু চিহ্নিত মিডিয়া। আমরা মনে করি এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর দায় চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীদের ওপর চাপানো একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ। আমরা দুষ্কৃতিকারীদের চিহ্নিত করে শাস্তি দাবি করছি।
বিবৃতিতে নির্বাচন কমিশন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট এ ধৃষ্টতাপূর্ণ কর্মকাণ্ডের দ্রুত তদন্ত এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার জোর দাবি জানানো হয়েছে।
ফেস্টুন ভাঙচুরে জড়িত একজনকে শনাক্ত
ডাকসু নির্বাচনে ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের ব্যানার ভাঙচুরের ঘটনায় একজনকে শনাক্ত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। শনাক্ত হওয়া শিক্ষার্থীর নাম তোহান মজুমদার। তিনি চারুকলা অনুষদের ক্রাফ্ট বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী।
এর আগে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ সংক্রান্ত একটি ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায়, তিনজন ব্যক্তি শিবির সমর্থিত প্যানেলের পোস্টার ফেলে দিয়ে তা পা দিয়ে লাথি মারছেন। তবে এখন পর্যন্ত ভিডিওতে দেখা যাওয়া অন্য দুই ব্যক্তির পরিচয় নিশ্চিত করা যায়নি।
শনাক্তের বিষয়টি নিশ্চিত করে চারুকলা অনুষদের সহকারী প্রক্টর মো. ইসরাফিল বলেন, “আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। কারা এটি করেছে, তা শনাক্তের চেষ্টা চলছে। যারা এ কাজ করেছে, তারা অবশ্যই অন্যায় করেছে। তাদের ব্যানারটি আবার ঠিক করে দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।”
তিনি বলেন, “যদি কোনো প্রার্থী আইনি সহায়তা চায়, তাহলে নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ করতে পারেন। নির্বাচন কমিশন আমাদের ব্যবস্থা নিতে বললে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।”
এ বিষয়ে অভিযুক্ত তোহান মজুমদার বলেন, “আমি শুধু ব্যানারটি সরিয়েছি। ভাঙচুরের কাজ আমি করিনি। ভাঙচুরের ঘটনায় আমি জড়িত ছিলাম না।”
শিবির সমর্থিত প্যানেলের ব্যানারে প্রার্থীর চেহারা বিকৃতি
ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণার প্রথম দিনেই নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে চারুকলা অনুষদ এলাকায় শিবির সমর্থিত প্যানেলের দুটি পোস্টার ভাঙচুর ছাড়াও প্রার্থীদের চেহারা বিকৃতির ঘটনা ঘটেছে।
বিকেল তিনটায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অনুষদের গেটের পাশে একটি পোস্টার ভাঙা অবস্থায় পড়ে আছে, তবে সেখানে থাকা প্রার্থীদের ছবি অক্ষত রয়েছে। অন্যদিকে, প্রাচ্যকলা বিভাগের সামনের পোস্টারে ভাঙচুরের পাশাপাশি ছবিগুলোতেও বিকৃতির চিহ্ন স্পষ্ট।
ভাঙা অবস্থায় পড়ে থাকা পোস্টারে দেখা যায়, সদস্য পদপ্রার্থী সাবিকুন্নাহার তামান্নার চেহারাকে রাক্ষসের মতো আকৃতি দেওয়া হয়েছে। সদস্য পদপ্রার্থী মাজহারুল ইসলামের এক চোখে কালো কালি লেপন করা হয়েছে। সদস্য আনাস ইবনে মুনিরের কপালে টিপ এঁকে বিকৃত করা হয়েছে।
এছাড়াও ভিপি প্রার্থী মো. আবু সাদিক কায়েম, জিএস প্রার্থী এস এম ফরহাদ, এজিএস প্রার্থী মুহাম্মদ মহিউদ্দিন, সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক প্রার্থী নূরুল ইসলাম সাব্বিরের ছবিও বিকৃত করা হয়েছে। কারও ঠোঁটে, কারও কপালে বিকৃত ছবি এঁকে দেওয়া হয়েছে এবং কারও ক্ষেত্রে পোস্টার কেটে মাথার স্থানে রাক্ষসের মুখ বসানো হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চারুকলা অনুষদের সহকারী প্রক্টর ইসরাফিল প্রাং বলেন, “আমি একটা মিটিং শেষ করে এখানে এলে দারোয়ান বলল, ‘স্যার, দুই-তিনজন ছাত্র এসে এটা খুলে ফেলেছে।’ পরে বলল, ‘ভিতরে আরেকটা আছে।’ এসে দেখি এটাও শোয়ানো। আবার দুই-তিনটা ছবি কাটা। কিছু উৎসুক ছাত্র ছিল। আমি তখন ওদের বকা দিলাম।”
সিসিটিভি ফুটেজ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ফুটেজ সামনেরটা (অনুষদের গেট) অবশ্যই আছে। তবে এটা (প্রাচ্যকলা বিভাগের সামনের ফুটেজ) আছে কি না, আমি জানি না। আমাকে খোঁজ নিতে হবে।”
পরে আবার যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “প্রাচ্যকলা বিভাগের সামনের সিসিটিভি ক্যামেরা নষ্ট ছিল। আমরা প্রশাসন বরাবর কয়েকবার চিঠি দিয়েছি এগুলো ঠিক করার জন্য।”