ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট প্যানেল থেকে বিজয়ী নারীদের ‘হাউজ স্লেভ’ (গৃহ দাসী) হিসেবে মন্তব্য করেছেন এক শিক্ষার্থী।
তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী রাকিবুল মবিন। তিনি বর্তমানে ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টে (বিআইজিডি) রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট হিসেবে কর্মরত আছেন।
বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট প্যানেল থেকে চার নারী প্রার্থীর জয়লাভ করার পর তাদের একটি সম্মিলিত ছবি শেয়ার করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি এমন কটু কথা সম্বলিত একটি স্ট্যাটাস দেন।
এরপর থেকেই ওই পোস্টকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিন্দার ঝড় উঠতে থাকে এবং নানা সমালোচনা আসতে থাকে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে।
ডাকসুর নবনির্বাচিত এজিএস মহিউদ্দিন খান এ বিষয়ে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, “রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে এমন কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য (হাউজ স্লেইভ) করে পার পাওয়ার সুযোগ নেই।”
তিনি আরো লেখেন, “তবে আমরা অপরাধের রাজনীতিকরণ করব না। অপরাধীর বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করাই ইনসাফ। যে বা যারা আমাদের বোনদের নিয়ে এমন কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছে তার/তাদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আমরা অভিযোগ জানাচ্ছি।”
ডাকসুর কার্যনির্বাহী কমিটির নবনির্বাচিত সদস্য মিফতাহুল হোসেন আল মারুফ অভিযুক্ত রাকিবুল মোবিনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিআইজিডি বরাবর অফিশিয়াল ই-মেইল করেছেন। এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি এ তথ্য জানান।
স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, “ঢাবি’র প্রক্টর স্যার বরাবরও অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। ডাকসুর নব নির্বাচিত আইন ও মানবাধিকার সম্পাদক মো. জাকারিয়া লিগ্যাল বিষয়টি দেখছেন।”
ঢাবির অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থীরা ওই বক্তব্যের প্রতিবাদে এক বিবৃতি দিয়েছেন। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আমরা প্রত্যাশা করি, ওই ব্যক্তি তার বক্তব্য প্রত্যাহার করে ক্ষমা চাইবেন। অন্যথায়, আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে শিক্ষার্থীদের মানহানি রোধে রাষ্ট্রের প্রচলিত আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাব।
এদিকে, বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ৩টার দিকে নিজের ফেসবুক আইডিতে ভুল স্বীকার করে ও ক্ষমা চেয়ে একটি পোস্ট দেন।
সেখানে তিনি লেখেন, “আজ (বুধবার) দুপুরে আমি ডাকসুতে শিবির প্যানেলের বিজয় উদযাপন করা নারী প্রার্থীদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ একটি মন্তব্য করেছি। মন্তব্যটি ছিল অশালীন এবং অবমাননাকর। শিবিরের জয়ে আবেগের বশবর্তী হয়ে আমার প্রতিক্রিয়াশীল মনোভাব থেকে মন্তব্যটি করেছিলাম। যদিও আমি তাদের রাজনৈতিক মতাদর্শের সঙ্গে একমত নই, তবুও এটি কোনোভাবেই সঠিক কাজ ছিল না। আমার রাজনৈতিক পক্ষপাতের কারণে কখনোই আমার এমন অবমাননাকর ও নারীবিদ্বেষী মন্তব্য করা উচিত হয় নি।”
তিনি আরো লেলেন, ‘আমি বুঝতে পেরেছি এটি ভুল হয়েছে এবং আমি আমার মন্তব্য প্রত্যাহার করে নিচ্ছি। এর মাধ্যমে যেসকল নারীকে আমি আক্রমণ করেছি, তাদের কাছে আমি আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। ভবিষ্যতে এমন ঘটনা আর যেন না ঘটে, সে ব্যাপারে আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করব। আমি নারীবিদ্বেষী কিংবা ইসলামোফোবিক নই, বরং সর্বদা নিপীড়িতের পাশে দাঁড়ানোর এবং সত্যের পক্ষে থাকার চেষ্টা করি। দুর্ভাগ্যবশত, আমি যে শব্দগুলো ব্যবহার করেছি, তা আমার মূল্যবোধকে প্রতিফলিত করেনি, আর এজন্য আমি আন্তরিকভাবে ক্ষমাপ্রার্থী।”
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশার সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।