ক্যাম্পাস

রাবিতে পোষ্য কোটা পুনর্বহাল: জোহায় অনশন, জুবেরীতে অবস্থান শিক্ষার্থীদের

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) শর্তসাপেক্ষে পোষ্য কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে আমরণ অনশন করছেন কয়েকজন শিক্ষার্থী।

অপরদিকে, পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে শিক্ষকদের হাতাহাতির ঘটনায় জুবেরী ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষার্থীদের অপর একটি অংশ।

শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকেল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে জোহা চত্বরে শুরু হওয়া এ অনশন এখনো অব্যহত আছে।

এর আগে, গত বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) ভর্তি কমিটির সভায় শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য শর্তসাপেক্ষে প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধায় (পোষ্য কোটা) ভর্তির সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এরপর থেকেই বিক্ষোভ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা। পোষ্য কোটা পুনর্বহালের ঘোষণার পরপরই উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেন তারা। পরে রাত ১২টা পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলমান ছিল। এতে নতুন বিক্ষোভের ঘোষণা দিয়ে আন্দোলন স্থগিত করেন শিক্ষার্থীরা।

ঘোষণা অনুযায়ী গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে জোহা চত্বরে এক সমাবেশ করেন তারা ৷ ১ ঘণ্টার বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে তাদের কর্মসূচি স্থগিত করেন।

এরপরই বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শিক্ষার্থী আসাদুল ইসলাম কাফনের কাপড় পরে এককভাবে আমরণ অনশনে বসেন। পরে আরো আট শিক্ষার্থী একাত্মতা প্রকাশ করে অনশনে যোগ দেন। তারা হলেন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সজিবুর রহমান, সমাজকর্ম বিভাগের আরিফ আলভি, আবু রাহাদ ও সৈয়দ ইসপাহানী, ফলিত গণিত বিভাগের তৌফিকুল ইসলাম, আরবি বিভাগের রমজানুল মোবারক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের নাজমুল হক আশিক এবং উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের রেদোয়ান আহমেদ রিফাত।

শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকালে মুষলধারে বৃষ্টি উপেক্ষা করে তাদের অনশন করতে দেখা যায়। এর মধ্যে অনশনরত অবস্থায় অসুস্থ হয়ে পড়েন সমাজকর্ম বিভাগের ২০২৪-২৫ সেশনের ইস্পাহানি ও আরবি বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী রমজানুল মোবারক।

ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি  বিভাগের শিক্ষার্থী সজিবুর রহমান বলেন, “আমরা গতকাল রাত থেকে বসে আছি, রোদে পুড়ছি, বৃষ্টিতে ভিজছি, মশার কামড় খাচ্ছি। আমাদের শরীরের অবস্থা কি? তাও কেও আমাদের দেখতে আসেনি। অনেকে স্লোগান দিয়েছিল রক্ত লাগলে রক্ত নে, পোষ্য কোটার কবর দে। তাদের রক্ত দেওয়া শেষ। আমাদের এখনো রক্ত দেওয়া শেষ হয়নি, আমরা আছি। যতক্ষণ নাকে সমাধান হবে আমরা আছি। আমাদের কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল না, এখনো নেই। একজন সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে আমি এখানে আছি এবং থাকব।”

সমাজকর্ম বিভাগের ২৪-২৫ সেশনের শিক্ষার্থী সানজিদা বলেন, “আমার ভাইয়েরা গতকাল থেকে বৃষ্টিতে ঘুরছে, রোদে পুড়ছে, মশার কামড় খাচ্ছে তাদেরকে দেখার মত কেউ নাই। আমি বলতে চাই প্রশাসনের নামেই প্রহসন আর কতদিন? আমরা যেখানে ৬০-৬৫ পেয়ে ভর্তি হতে পারি না সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্মকতা কর্মচারীদের সন্তানেরা নাম মাত্র পাশ নাম্বার পেয়ে কিভাবে ভর্তি হয়?”

তিনি আরো বলেন, “তারা তাদের সন্তানদের কেন এতটা ইনসিকিউর? তাদের কি তাদের সন্তানদের প্রতি আত্মবিশ্বাস নাই যে তারা যোগ্যতায় ভর্তি হবে। এভাবে ভিক্ষাবৃত্তি আর কতদিন? এখানে যারা আছে সবাই তার মায়েদের কলিজার টুকরা। তারা যে এভাবে নির্যাতিত হচ্ছে এগুলো দেখার কি কেউ নেই?”

বেলা একটার দিকে অনশনরত শিক্ষার্থীদের কাছে দেখা যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা আমিরুল ইসলাম কনককে। 

কনক বলেন, “আমি মূলত ছাত্রদের খোঁজখবর নিতে এখানে এসেছি। তাদের সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পেরেছি, তারা খুব কষ্টের মধ্যে আছে। তাই আমি নিজেও তাদের সঙ্গে অনশনে যোগ দিয়েছি। ইতোমধ্যে কয়েকজন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েছে, আমরা তাদের চিকিৎসার জন্য মেডিকেলে পাঠিয়েছি।”

এদিকে, দুপুরে পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে উপ-উপাচার্যদ্বয়ের বাসভবনে তালা দেন শিক্ষার্থীরা। এজন্য বাসভবনের ভেতরে ঢুকতে না পেরে ফিরে আসেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মাঈন উদ্দীন খান, প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান। একপর্যায়ে তারা জুবেরী ভবনের দিকে আসতে থাকলে শিক্ষার্থীরা স্লোগান দিতে দিতে তাদের পেছনে আসেন।

একপর্যায়ে জুবেরী ভবনের বারান্দায় এলে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক এবং ছাপাখানার এক কর্মকর্তা শিক্ষার্থীদের আটকানোর চেষ্টা করলে কথা কাটাকাটি এক পর্যায়ে হাতাহাতি শুরু হয়। এ সময় উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মাঈন উদ্দীন খানকে চারপাশ থেকে আটকে দেন শিক্ষার্থীরা। পরে হাতাহাতির একপর্যায়ে উপ উপাচার্য জুবেরী ভবনের দ্বিতীয় তলায় চলে গেলে শিক্ষার্থীরা তাকে সেখানে অবরুদ্ধ করে রাখেন।

এরই মধ্যে সেখানে ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক কামাল উদ্দিন, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদসহ কয়েকজন শিক্ষক উপস্থিত হলের তাদেরও অবরুদ্ধ করে রাখেন শিক্ষার্থীরা। পরে শিক্ষকদের অবরুদ্ধ করে তারা জুবেরী ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন।

শিক্ষকরা পোষ্য কোটা নিয়ে রাবির সিনেট ভবনে আলোচনার সিদ্ধান্ত নিলে রাত সাড়ে ৮টার দিকে অবস্থান কর্মসূচি স্থগিত করেন শিক্ষার্থীরা। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত শিক্ষার্থী সেখান থেকে সিনেট ভবনের দিকে যেতে দেখা গেছে।

তবে ক্যাম্পাসে হাতাহাতির ঘটনায় উত্তেজনা বিরাজ ও শিক্ষক-শিক্ষার্থী মুখোমুখি অবস্থান করায় কোনো শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। এজন্য সিনেটে কি বিষয়ে আলোচনা করবেন তা জানা সম্ভব হয়নি। হাতাহাতির ঘটনায় শিক্ষকরা কর্মবিরতির ডাক দিতে পারেন বলেও চাউর হয়েছে।

এ বিষয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার বলেন, “আমরা কারো সঙ্গে বসতে রাজি নই। উনারা কি করবেন উনারা জানেন। আমরা ২৫ তারিখেই রাকসু চাই এবং পোষ্য কোটাও বাতিল চাই। ওনারা মিটিং করুক, আমরা বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকবো। আমরা কোনো মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করব না। সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত আমরা যাব না।”