ক্যাম্পাস

গকসু: শেষ সময়ে গানে–স্লোগানে জমে উঠেছে প্রচার

ঢাকার সাভারের বংশী নদীর তীর ঘেঁষে ৩২ একরে বিস্তৃত গণ বিশ্ববিদ্যালয় (গবি)। কখনো বাদামতলার ছায়াঘেরা গাছতলায়, কখনো একাডেমিক ভবনের করিডরে কিংবা ট্রান্সপোর্ট চত্বরে—যেদিকেই তাকানো যায়, কানে ভেসে আসে সুর আর স্লোগান।

কেউ হাতে গিটার, কেউ দোতারা বা ডুগডুগি বাজাচ্ছেন, আর আশপাশে দাঁড়িয়ে থাকা সমর্থকেরা তালমিলিয়ে গাইছেন। দীর্ঘ ৭ বছর পর গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (গকসু) নির্বাচনের আমেজে এমন প্রাণচাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে।

আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ভোট। এর আগে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে চলেছে জোরদার প্রচার। শেষ দিন মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) এসে সেই প্রচার যেন রূপ নিয়েছে রঙিন উৎসবে।

বাংলা ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের করিডোরে ঢুকলেই চোখে পড়ে একদল শিক্ষার্থীকে। সামনে হাঁটছেন এক প্রার্থী, হাতে ছোট বাদ্যযন্ত্র। পাশে দাঁড়িয়ে সমর্থকেরা দোহার দিচ্ছেন।

সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদপ্রার্থী মারুফের কণ্ঠে গানের সুরে শোনা গেল, “২৫ তারিখে সারাদিন ভাই, ২৮ নম্বর ব্যালটে ভোট দিবেন সবাই।” চারপাশের শিক্ষার্থীরাও থমকে দাঁড়িয়ে শুনছেন। অনেকেই হাততালি দিয়ে উৎসাহ যোগাচ্ছেন।

অন্যদিকে, বাদামতলার বেঞ্চে বসে আরেক প্রার্থী ও সমর্থক। কারো হাতে লিফলেট, কেউবা গিটার বাজাচ্ছেন। গানের সুরে সুর মিলিয়ে চলেছেন সহ-সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদপ্রার্থী লীশা চাকমা ও তার সমর্থকরা। চারপাশে জড়ো হওয়া শিক্ষার্থীরা মুগ্ধ শ্রোতার মতো তাকিয়ে শুনছেন।

বাদামতলা থেকেই প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী চাঁদনী বললেন, “এভাবে গান দিয়ে প্রচারণা খুব সুন্দর লাগছে। গত কয়দিন টানা শুধু লিফলেট বিতরণ ও ইশতেহার ঘোষণার পর আজ প্রচারের এই ধরণ ক্যাম্পাসে এক ধরনের উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি করেছে। এটা শুধু প্রচার নয়, বরং বন্ধুত্বপূর্ণ এক পরিবেশ তৈরি করছে।”

এবারে আলোচনার কেন্দ্রে এসেছে এই গানে–গানে প্রচার। কেবল স্লোগান নয়, প্রার্থীরা গানের ছন্দে নিজের পরিকল্পনা, ইশতেহার ও স্বপ্ন তুলে ধরছেন। প্রতিদ্বন্দ্বীরা একত্রিত হয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে গানের সুরে সুর মেলাচ্ছেন। এ দৃশ্য যেন উৎসবে মেতেছে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়।

প্রার্থীরা বলেন, আমরা চাই প্রচারণা হোক ইতিবাচক ও পরিবেশবান্ধব। এতদিন লিফলেট ও জনসংযোগের পর আজ প্রচারণার শেষ সময়ে ক্যাম্পাসে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি করে গান ও আলাপে শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করেছি।

প্রচারের শেষ সময়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে কৌতূহল ও উত্তেজনা দুই-ই দেখা যাচ্ছে। কেউ বলছেন, অনেকদিন পর ক্যাম্পাসে এমন প্রাণবন্ত পরিবেশ এসেছে। আবার কেউ মনে করছেন, প্রার্থীরা যেন শুধু গানেই সীমাবদ্ধ না থেকে বাস্তবে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেন।

দুপুর গড়াতেই জমে উঠে ট্রান্সপোর্ট চত্বর। হঠাৎ করে জায়গাটা যেন পরিণত হলো ছোট্ট কনসার্টে। কেউ গাইছে, কেউ গিটার বাজাচ্ছে, আবার কেউ নেচে উঠছে তালে তালে। প্রতিদ্বন্দী-সমর্থকরাও কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে গেয়ে উঠছেন একই সুরে। ক্যাম্পাসে যে সাধারণ দিনগুলোতে থাকে নিস্তব্ধতা, আজ সেখানে ভেসে বেড়াচ্ছে প্রাণের উচ্ছ্বাস।

আইন বিভাগের শিক্ষার্থী সোহেল রানা বলেন, “৭ বছর পর নির্বাচন হচ্ছে। তাই প্রার্থীরা যত প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, এগুলো বাস্তবায়ন করতে পারলে শিক্ষার্থীরাই উপকৃত হবে। আমরা চাই, নির্বাচিত পরিষদ শিক্ষার্থীদের সকল সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নিক। শুধু প্রচারণার গান নয়, কাজেও সেটা প্রতিফলিত হোক।”

এখন সবার চোখ ২৫ সেপ্টেম্বরে। সেই দিনেই জানা যাবে, গানে–স্লোগানে মেতে ওঠা প্রার্থীদের মধ্যে কাকে বেছে নিচ্ছেন গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।