বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে মার্কেটিং, পরিসংখ্যান ও পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে।
এ সময় সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শ্রেণিকক্ষ ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। এতে পরিসংখ্যান বিভাগের জনি, প্রান্ত, মার্কেটিং বিভাগের শাহরিয়ার অপু, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের ইউসুফসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন। বাকি আহতদের পরিচয় জানা সম্ভব হয়নি।
এদিকে, এ ঘটনায় আট শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বেরোবি প্রশাসন।
সোমবার (১৩ অক্টোবর) রাত সাড়ে ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে এ সংঘর্ষ হয়। পরে রাত ১০ টার দিকে ঘটনাস্থলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শওকাত আলী গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন।
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ফেরদৌস রহমান, রেজিষ্ট্রার ড. হারুন অর রশীদ, ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক ড. ইলিয়াস প্রামানিকসহ তিন বিভাগের শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থীর আয়োজনে জেন-জি ফুটবল টুর্নামেন্ট শুরু হয়। কয়েকদিন আগের পরিসংখ্যান বিভাগের সঙ্গে মার্কেটিং বিভাগের টুর্নামেন্টের সেমিফাইনাল খেলা চলছিল। খেলা চলাকালে মার্কেটিং বিভাগের ১৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার অপুর সঙ্গে পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থীদের ধাক্কাধাক্কি হয়।
ওই ঘটনার জেরে সোমবার বিকেলে চকবাজারে শাহরিয়ার অপুকে কয়েকজন শিক্ষার্থী মারধর করেন। পরে বিষয়টি জানতে পেরে সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে পদার্থ ও পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থীদের মারধর করেন মার্কেটিং বিভাগের একদল শিক্ষার্থীরা।
মার্কেটিং শিক্ষার্থী শাহরিয়ার অপু বলেন, “আমি আর আমার বন্ধু চকবাজারে বাজার করতে গেছিলাম। এ সময় হঠাৎ কয়েকজন এসে আমার কলার ধরে এবং আমাকে মারধর শুরু করে। তারপরে আরো কয়েকজন আসে, যার মধ্যে পরিসংখ্যান বিভাগের এক ছেলে ছিল যে ফুটবল খেলায় ছিল।”
পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী তুহিন রানা বলেন, “মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী রোহান, অপুর সঙ্গে পরিসংখ্যান ও পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের কিছু শিক্ষার্থীর কথা-কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে পরিসংখ্যান ও পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। এতে পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী প্রান্ত আহত হলে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তিন বিভাগের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়।”
এ বিষয়ে প্রক্টর ফেরদৌস রহমান বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। আমরা তিন বিভাগের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বসব। তাদের সঙ্গে আলোচনা শেষে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।”
উপাচার্য অধ্যাপক ড শওকাত আলী বলেন, “এই ঘটনার সঙ্গে যে বা যারা জড়িত রয়েছে, তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে শাস্তি দেওয়া হবে। তদন্ত কমিটি করা হবে। তিন দিনের মধ্যে কমিটির দেওয়া রিপোর্টের ভিত্তিতে জড়িতদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা হবে।”
এদিকে, এ মারামারির ঘটনায় সোমাবার রাত ১০টার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটির এক জরুরি বৈঠকের মার্কেটিং বিভাগের আট শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) রাত সাড়ে ৩টায় জরুরি বৈঠক শেষে বেরোবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শওকাত আলী এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীরা হলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ২৩-২৪ সেশনের শিক্ষার্থী সাফায়েত হোসেন শুভ, শাহরিয়ার অপু, সজিব, সৌরভ, নাজমুজ সাকিব, রোহান সরকার রোহান, জিহাদ ও ২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী আশরাফুল ইসলাম।
বৈঠক শেষে উপাচার্য বলেন, “আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এসব ব্যাপারে জিরো টলারেন্স। এ বিষয়ে আরো অধিকতর আইডেন্টিফাই করার জন্য পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।”
কত সেমিস্টারের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “বহিষ্কার মানে বহিষ্কার, কোনো সেমিস্টার নেই এখানে। বিশ্ববিদ্যালয়কে কলঙ্ক মুক্ত করার জন্য এসব কীটকে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের করতে হবে।”