কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) একটি ওয়্যার হাউজ নির্মাণের কাজে নিম্নমানের খোয়া ব্যবহারের অভিযোগে তা বন্ধ করে দেন শাখা ছাত্রদলের এক নেতা। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দাবি, মানসম্মত খোয়া ব্যবহৃত হয়েছে।
জানা গেছে, গত ১৪ অক্টোবর দুপুরে কুবি ছাত্রদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক ও নৃবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকোত্তরে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী মো. আবুল বাশার ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের পেছনে নির্মাণাধীন ওয়্যার হাউজের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় দেখতে পান, সেখানে মেঝে ঢালাইয়ের কাজে নিম্নমানের খোয়া ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে তৎক্ষণাৎ প্রকৌশল দপ্তরের প্রকৌশলী এনে কাজ বন্ধের কথা বলেন। এই খোয়া পরিবর্তন করে অথবা সিমেন্ট বেশি দিয়ে ঢালাইয়ের কাজ করতে চাইলেও তিনি সেটা মেনে নেননি বলে জানা যায়।
আবুল বাশার জানান, এখানে নিম্নমানের খোয়া ব্যবহারের ফলে একজন শিক্ষার্থী হিসেবে নৈতিকতার জায়গা থেকে তিনি কাজ বন্ধ রাখার কথা বলেন।
তিনি আরো জানান, এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে পরিবর্তন করে অন্য কাউকে দিয়ে এই কাজ সম্পন্ন করতে হবে। যদি কোনো ধরনের সন্ধি স্থাপনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দিয়েই কাজটি সম্পন্ন করায়, তাহলে তিনি ভেবে নেবেন এর সঙ্গে প্রশাসনও জড়িত।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তর থেকে জানা গেছে, এই ওয়্যার হাউজের নির্মাণের জন্য ৮ লাখ ৫৭ হাজার ৫৬৮ টাকার টেন্ডার বরাদ্দ করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী এর কাজ পায় সামীর এন্টারপ্রাইজ নামের এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি কামাল হোসেন নামের এক ব্যক্তির মালিকানাধীন।
নিম্নমানের খোয়া ব্যবহারের অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে কামাল হোসেন বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, “এখানে তদারকিতে সবসময় প্রকৌশলের লোকজন থাকেন। কোনো ধরনের নিম্নমানের মালামাল ব্যবহার করা হয়নি। যেহেতু অভিযোগ এসেছে, আমি সাইটে গিয়ে দেখব এবং এই বিষয়ে কথা বলব।”
এই ওয়্যার হাউজের কাজের তদারকিতে আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী (সিভিল) মো. বিল্লাল হোসেন। তিনি জানান, দুপুরের ওই সময়টাতে তিনি নামাজের জন্য বাহিরে ছিলেন। ফলে দপ্তরে এসে অভিযোগ শোনার সঙ্গে সঙ্গেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
নিম্নমানের খোয়া ব্যবহার নিয়ে তিনি বলেন, “এখানে নিম্নমানের খোয়া ছিল না। এগুলো ধোয়া হয়নি, অপরিষ্কার ছিল। যেহেতু অভিযোগ এসেছে আমরা বলেছি এইগুলো পরিবর্তন করে নতুন খোয়া ব্যবহার করতে। আর এগুলো টেকনিক্যালি সিমেন্ট বাড়িয়ে দিয়ে ব্যবহার করা যাবে।”
নির্মাণ কাজ পুনরায় চালুর ব্যাপারে তিনি বলেন, “যেহেতু একটা সমস্যা হয়েছে, এখন করনীয় সম্পর্কে দপ্তর প্রধানই বলবেন।”
অভিযোগের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তরের প্রধান তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এস. এম. শহিদুল হাসান বলেন, “খোয়া পরিবর্তনের জন্য বলা হয়েছে।”
সামীর এন্টারপ্রাইজকে বাদ দিয়ে নতুন প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এটা যেহেতু কাগজপত্রাদি এবং সমস্ত কিছু হয়ে গেছে, ইজিপিএ টেন্ডারও হয়ে গেছে, সেহেতু প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন করা একেবারেই অসম্ভব। তবে নিম্নমানের খোয়া ব্যবহারের ফলে আমরা চিঠি দিব। পরিবর্তন না করে কাজ করতে চাইলে পরপর তিনটা চিঠি দিব। তবুও ভালো মানের মালামাল ব্যবহার না করলে নিয়ম অনুযায়ী এই কাজের বিল আটকে যাবে।”
সার্বিক বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলীর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি।