ক্যাম্পাস

গবি রেজিস্ট্রারের ফেরা নিয়ে দুই গ্রুপে উত্তেজনা

ঢাকার সাভারের আশুলিয়ায় ৫ বছরের আইনি লড়াই শেষে স্বপদ ফিরে পেয়েছেন গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের (গবি) রেজিস্ট্রার দেলোয়ার হোসেন। তিনি তার পদে যোগ দিতে এলে একপক্ষ স্বাগত জানালেও আরেকপক্ষ বিক্ষোভ করেন। এ নিয়ে ক্যাম্পাসে উত্তপ্ত পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রবিবার (১৯ অক্টোবর) সকাল ৭টার দিকে উপজেলার নলাম এলাকায় অবস্থিত গবি ক্যাম্পাসে আসেন দেলোয়ার হোসেন। তার সঙ্গে তার আইনজীবী, গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী, স্থানীয় বাসিন্দা ও বহিরাগতসহ অন্তত ৩০-৪০ জন ছিলেন।

এ সময় অন্তত ২০-২৫ জন শিক্ষার্থী তাকে স্বাগত জানিয়ে ফুল দিয়ে বরণ করেন। এরপর তিনি ক্যাম্পাসের প্রশাসনিক ভবনের নিচে অবস্থান নেন। প্রায় ২ ঘণ্টা পর সকাল ৯টার দিকে তিনি ২০-২৫ জন সঙ্গীসহ গবি উপাচার্যের কক্ষে প্রবেশ করেন। তিনি উপাচার্যের কাছে স্বপদে (রেজিস্টার) ফিরতে আদালতের রায় ও চাকরিতে পুনর্বহালসহ যোগদানের জন্য আবেদনপত্র দিয়ে এ বিষয়ে কথা বলেন।

এদিকে, খবর পেয়ে শতাধিক শিক্ষার্থী নিয়ে সেখানে আসেন গবি ছাত্র সংসদের (গকসু) ভিপি, কোষাধ্যক্ষসহ একাংশ নেতৃবৃন্দ এবং তারা উপাচার্যের কক্ষে প্রবেশ করে দেলোয়ার হোসেনের স্বপদে (রেজিস্টার) যোগদানের বিষয়ে প্রতিবাদ জানান। এরই জেরে ওই যোগদানপত্র নিতে অপারগতা প্রকাশ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। পরে তিনি যোগদান না করেই ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন।

দেলোয়ার হোসেনের পুনর্বাহলের প্রতিবাদ জানিয়ে শিক্ষার্থীদের একটি অংশের দাবি, আদালতে মিথ্যা সাক্ষ্য-প্রমাণ তুলে ধরে এই রায় পেয়েছেন দেলোয়ার হোসেন। তিনি দুর্নীতিগ্রস্থ ও চারিত্রিকভাবে অসৎ।

এ বিষয়ে দেলোয়ার হোসেনের আইনজীবী কৃষ্ণ বলেন, “আদালতের রায়ের ভিত্তিতে আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে আবেদন দিতে এসেছি আমরা। তবে কিছু শিক্ষার্থী এ নিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি করে। পরে উপাচার্য চাকরিতে বহালের আবেদন গ্রহণ করতে অপারগতা প্রকাশ করেন।” এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান এই আইনজীবী।

গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক রেজিস্ট্রার দেলোয়ার হোসেন জানান, আদালতের রায়ে তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। আদালতের রায়ে তিনি স্বপদে বহাল রয়েছেন। আদালত তার অব্যাহতিকে অবৈধ ঘোষণা করে তাকে বিগত সময়ের বেতন-ভাতা পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছেন। চাকরিতে যোগ দিয়ে পুনরায় বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করার কথা জানান তিনি।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) আবুল হোসেন জানান, আদালতের রায়ে দেলোয়ার হোসেনের চাকরি পুণর্বহালে কোনো বাধা নেই। শিক্ষার্থীরা তাকে পুনর্বহালের বিষয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানানোর কারণে আপাতত তার আবেদন গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। শিক্ষার্থীরা আবেদন গ্রহণ না করার জন্য চাপ দিয়েছে। পুণর্বহালের বিষয়েও বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন।”

তিনি বলেন, “আপাতত নথি গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে পরবর্তী করণীয় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।”

২০২০ সালের ১২ সেপ্টেম্বর বিভিন্ন অভিযোগ এনে রেজিস্ট্রার পদ থেকে মো. দেলোয়ার হোসেনকে অব্যাহতি দেয় গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ড। পরের বছর ৪ এপ্রিল ওই আদেশের বিরুদ্ধে ঢাকার নবম সহকারী জজ আদালতে মামলা করেন তিনি। ৫ বছর আইনি লড়াইয়ের পর তার পক্ষে রায় দেন আদালত।

গত ৮ অক্টোবর ঢাকার সিনিয়র সহকারী জজ (সাভার) মো. হাবিবুর রহমানের আদালতের রায়ে রেজিস্ট্রার পদ থেকে মো. দেলোয়ার হোসেনকে অব্যাহতির আদেশ অবৈধ ঘোষণা করা হয়। এছাড়া তার চাকরি পুণর্বহাল ও চাকরিচ্যুত সময় থেকে বর্তমান পর্যন্ত সব বেতন-ভাতাসহ পাওনাদি পরিশোধের আদেশ দেন।