ক্যাম্পাস

বাংলাদেশে রাজনীতি করবে বাংলাদেশপন্থিরা: ডাকসু ভিপি

বাংলাদেশপন্থি যারা আছে, তারাই বাংলাদেশে রাজনীতি করবে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি আবু সাদিক কায়েম।

তিনি বলেছেন, “বাংলাদেশপন্থি যারা আছে, তারাই বাংলাদেশে রাজনীতি করবে। এর বাইরে যারা ফ্যাসিবাদী কায়েম করেছে, গুম খুন করেছে তাদের রাজনীতি করার কোন অধিকার নাই। এক‌ইসঙ্গে গুম, খুন, গণহত্যা, শিশুহত্যার সঙ্গে জড়িত সব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের যারা ছিল সবাইকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। সব হত্যাকারী জেনারেলদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। এরাই গত ১৬ বছরে ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে এসব কাজে সহযোগিতা করেছে।”

শনিবার (২৫ অক্টোবর) সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ মুজিবুর রহমান হল অডিটরিয়ামে ‘আয়না ঘরের সাক্ষী, গুম জীবনের আট বছর’ নামক গ্ৰন্থের প্রকাশনা উৎসবে এ কথা বলেন তিনি। 

তিনি বলেন, “বাংলাদেশে খুনি হাসিনা ও তার দোসরদের রাজনীতি করার কোন অধিকার নেই। তাদের যেখানেই পাওয়া যাবে, ধরে থানায় দিতে হবে এবং বিচারের আওতায় আনতে হবে‌‌ । জার্মানিতে যেভাবে নাতসি বাহিনীকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, ইতালিতে যেভাবে মুসলিনীকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, এক‌ইভাবে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, হাসিনা ও তার দোসরদের রাজনীতি করার কোনো অধিকার নাই।”

তিনি আরো বলেন, “বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদবিরোধী অনেক আন্দোলন সংগঠিত হয়েছে। এই ফ্যাসিবাদীবিরোধী আন্দোলনে যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাদের বিভিন্ন ফ্রেমিং করে গুম করা হয়েছে। জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে আমার গুমের শিকার আরমান ভাইসহ অনেককে ফিরে পেয়েছি। কিন্তু অনেকেই খবর এখনো পাইনি।”

ডাকসু ভিপি বলেন, “আজ গুমের ঘটনার ওপর অনেক ডকুমেন্টারি তৈরি করছে। কিন্তু আমরা দেখছি খুনি হাসিনা ও তার দোসররা এটাকে সাজানো নাটক বলছে। যে খুনি হাসিনা গত ১৬ বছরে বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছে‌, জুলাই অভ্যুত্থানের ২ হাজার ভাই-বোনদের শহীদ করেছে, ৪০ হাজার ভাইবোনদের পঙ্গু করেছে- এখন পর্যন্ত তার কোনো অনুশোচনা নেই।”

সাদিক কায়েম বলেন, “আজ দেখতে পাচ্ছি সেনাবাহিনীর মধ্যে যারা কিলার জেনারেল রয়েছে, তাদের এসি প্রিজন ভ্যানে করে আনা হচ্ছে। যেখানে রাখা হচ্ছে, সেখানেও এসির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এটা গোটা জাতির জন্য লজ্জার। জুলাই পরবর্তী বাংলাদেশে আমরা খুনি জেনারেলদের এই অবস্থায় দেখতে চাই না। তারা বাংলাদেশের যে কারাগার রয়েছে, সেখানেই থাকবে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের যে আইন আছে, সেই আইনে তাদের বিচার হবে।”

সাদিক কায়েম আরো বলেন, “কিলার জেনারেলদের দায় মুক্তি দেওয়ার কোন সুযোগ নেই। যারাই এদের দায় মুক্তি দেওয়ার চেষ্টা করবে, বাংলাদেশে ফ্যাসিস্ট হাসিনার যে অবস্থা হয়েছিল তার চেয়ে খারাপ পরিণতি আপনাদের হবে।”

অনুষ্ঠানে উপস্থিত গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, “চব্বিশের জুলাই অভ্যুত্থানের ৩৬ দিন বাংলাদেশকে বদলে দিয়েছে। ফ্যাসিবাদীদের অবসান হয়েছে। বাংলাদেশ আজ নতুন অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য অপরাধীদের বিচারের চেষ্টা চলছে। বিচার প্রক্রিয়া শুরুও হয়েছে। অন্যায়ের অবসান ঘটবে। জুলাই সনদের ঘোষণার মাধ্যমে বাংলাদেশ নতুন বাংলাদেশে পরিণত হয়েছে। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে এই সংগ্ৰাম চলতেই থাকবে।”

তিনি বলেন, “ফ্যাসিবাদ পরাজিত হলেও বারবার ফিরে আসার চেষ্টা করে। আমারে যেন সবাই একত্রিত হয়ে দল মত নির্বিশেষে ফ্যাসিবাদ প্রতিহত করার কাজ জারি রাখতে পারি‌।”

‘মায়ের ডাক’ এর সংগঠক সানজিদা ইসলাম তুলি বলেন, “এই ব‌ইয়ের প্রতিটি লাইনে যে কথা আছে, এটাকে আমরা বুকে ধারণ করি। শুধু ভিন্নমতের জন্য আওয়ামী ফ্যাসিস্টের সময় অনেককে গুম করা হয়েছে‌ আবার কাউকে বিচার বহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমরা শুধু তাদের তুলে নেওয়ার কাহিনী জানি। কিন্তু তাদের গুম করে কিভাবে অত্যাচার করা হয়েছে, তার সুষ্ঠু প্রমাণ এই আয়না ঘরের সাক্ষী ব‌ইটি।” 

তিনি বলেন, “প্রত্যেকটি গুমের ঘটনার বিচার করতে হবে। আমরা বিশ্ববাসীকে জানাতে চাই, কেবল মতের পার্থক্য থাকার জন্য তাদের সঙ্গে কী ধরণের অত্যাচার করা হয়েছে। আমরা একসঙ্গে থাকলে এই বিচার নিশ্চিত করতে পারব।”

ব্যারিস্টার মীর আহমাদ বিন কাসেম আরমান বলেন, “আমাদের হতাশ হলে চলবে না। আমি আবারো এখনো আশা দেখি এমন এক বাংলাদেশের, যেখানে কোনো বৈষম্য থাকবে না। সবাই এক হয়ে বাংলাদেশেকে বিনির্মাণ করব। এমন দেন গঠন করতে হবে যেখানে সংবিধান অনুযায়ী বিচার করা হয়ে। সবাই সঙ্গে থাকলে স্বপ্নের বাংলাদেশ গঠন করতে পারব।”