ক্যাম্পাস

জাবি প্রশাসনের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ জাকসুর

পর্যাপ্ত বাজেট না দেওয়াসহ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অসহযোগিতার অভিযোগ করেছেন কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদের (জাকসু) নেতৃবৃন্দ। 

রবিবার (৯ নভেম্বর) দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ জানান তারা।

এর আগে, তারা উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করেন। এ সময় তারা পর্যাপ্ত বাজেট নিশ্চিতকরণ ও জুলাইয়ের হামলায় উসকানিদাতা শিক্ষকদের বিচারে আলটিমেটামসহ পাঁচ দফা দাবি জানান।

সংবাদ সম্মেলনে জাকসুর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) মাজহারুল ইসলাম বলেন, “জাবি প্রশাসন জুলাইয়ের হামলায় উসকানিদাতা শিক্ষকদের বিচারে গড়িমসি করছে। তারা জাকসুর পরপরই এই বিচার নিশ্চিতের আশ্বাস দিলেও এখন পর্যন্ত তদন্ত কার্যক্রমই শেষ করতে পারেনি। প্রশাসনের এমন গড়িমসি দুরভিসন্ধিমূলক। তাই আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে এই শিক্ষক—কর্মকর্তাদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় ইতোপূর্বে শিক্ষার্থীরা যেসব মাধ্যমে বিচার আদায় করে নিয়েছে, সেভাবে বিচার আদায়ে জাকসু পদক্ষেপ নেবে।”

তিনি বলেন, “আমরা দেখেছি, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের এক শিক্ষার্থীর ফলাফলে অভাবনীয় জালিয়াতি করেছেন ওই বিভাগের দুই শিক্ষক। এই শিক্ষকদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে আগামী অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলে অ্যাকাডেমিক সংস্কার, শিক্ষক মূল্যায়ন পদ্ধতি চালুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আল্টিমেটাম দিয়েছি।”

নতুন ছয় হলে দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, “আমরা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নতুন আবাসিক হলগুলোতে নানা সমস্যার কথা প্রতিনিয়ত শুনতে পাচ্ছি। নতুন হল অথচ ওয়াশরুমের টাইলস খসে পড়ে, বৃষ্টি হলে হলের কক্ষে পানি প্রবেশ করে, লিফটগুলো অকেজো হয়ে পড়ে— এ রকম অসংখ্য সমস্যার কথা শিক্ষার্থীরা জানাচ্ছেন। এ হলগুলোর নির্মাণে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ ইতোপূর্বে উঠেছে। অবিলম্বে আগামী সাতদিনের মধ্যে এ অভিযোগের তদন্তে শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে হবে।”

এছাড়া জাকসুর তহবিলের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “জাকসু নির্বাচনের পরে ইতোমধ্যে ২ মাস পেরিয়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের সারা বছরের কর্মসূচি বাস্তবায়নে মাত্র ১০ লাখ টাকা দিয়েছে। এই টাকা দিয়ে জাকসুর কর্মসূচি বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। আমরা প্রশাসনকে এ বিষয়টি অবহিত করেছি। কিন্তু তারা আমাদের অসহযোগিতা করছে।”

তিনি আরো বলেন, “গত ৩০ বছরে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে জাকসু ও হল সংসদের নামে আদায় করা ফি এখনো বুঝিয়ে দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের দাবিগুলো মেনে না নিলে আমরা কঠোর কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হব।”

সংবাদ সম্মেলনে এজিএস (ছাত্র) ফেরদৌস আল হাসান, এজিএস (নারী) আয়েশা সিদ্দিকা মেঘলা, নাট্য সম্পাদক রুহুল ইসলাম, পরিবেশ ও প্রকৃতি সংরক্ষণ সম্পাদক সাফায়েত মীর, শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক আবু উবায়দা উসামা, পরিবহন সম্পাদক তানভীর রহমানসহ হল সংসদগুলোর নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

জাকসুর দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে জুলাইয়ের হামলায় উসকানিদাতা শিক্ষক—কর্মকর্তাদের বিচার নিশ্চিতকরণ; বিগত সময়ে অবৈধভাবে ও বিতর্কিত নিয়োগ তদন্তে কমিটি গঠন, বিভিন্ন দপ্তর থেকে ফ্যাসিস্টের দোসরদের অপসারণ; শিক্ষার্থীদের থেকে জাকসু খাতে নেয়া ৩৩ বছরের জাকসু ফান্ডের হিসাব প্রদান ও অনতিবিলম্বে সে টাকা বর্তমান ফান্ডে প্রদান।

বাকি দুইটি দাবি হলো- অ্যাকাডেমিক সংস্কারের লক্ষ্যে মানোন্নয়ন, শিক্ষক মূল্যায়ন, খাতা পুনর্মূল্যায়ন বাস্তবায়ন এবং অ্যাকাডেমিক অপরাধের শাস্তি নিশ্চিতে দক্ষতা ও শৃঙ্খলা অধ্যাদেশ সুস্পষ্ট করা; নতুন ছয়টি হলের নির্মাণ কাজে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে সাত দিনের মধ্যে শ্বেতপত্র প্রকাশ ও বিশ্ববিদ্যালয়কে গতিশীল করতে সব নিয়োগ প্রক্রিয়া দ্রুতকরণ।