চ্যাম্পিয়নস ট্রফি-২০১৭

বড় মঞ্চে সাফল্য পেতে আরেকটু বেশিই দিতে হবে

জাফর উল্লাহ সোহেল : চ্যাম্পিয়নস ট্রফির প্রথম ম্যাচ। প্রতিপক্ষ স্বাগতিক ইংল্যান্ড দল। আক্ষরিক বিশ্লেষণ করলে দক্ষতা ও যোগ্যতায় শ্রেয়তর দলও বটে। বিশ্লেষকদের কেউ কেউ যাদের হাতে শিরোপাটাই দেখছেন। সেই দলের বিপক্ষে সফল হতে হলে যেটুকু দিতে হতো, তার পুরোটা দিতে পারেনি বাংলাদেশ। কোথায় কোথায় কমতি হয়ে গেল, তা বলছি। তার আগে আসুন টাইগারদের একটু পিঠ চাপড়ে দিই। লম্বা একটা বিরতির পর চ্যাম্পিয়নস ট্রফির মতো বড় টুর্নামেন্টে খেলতে নেমেছে বাংলাদেশ। ম্যাচের অর্ধেক সময় পর্যন্ত সামর্থ্য অনুযায়ীই খেলেছে মাশরাফির দল। ৩০৫ রানের ইনিংস বাংলাদেশের ক’টি আছে? টুর্নামেন্টের প্রথম ইনিংসেই তিন শতাধিক রান করতে পারা একটা ক্রেডিটও বটে। তামিম ইকবাল তার পছন্দের প্রতিপক্ষের তালিকায় ইংলিশদের নাম লিখিয়ে আদায় করে নিলেন আরেকটি চোখ ধাঁধানো সেঞ্চুরি। মুশফিকও খেললেন তঁর সেরাটা। সব মিলিয়ে সাহসী আর প্রত্যয়ী ব্যাটিংই উপহার দিয়েছেন ব্যাটসম্যানরা। প্রবাসী বাংলাদেশিরা উপভোগ করেছেন প্রতিটি ৪ আর ৬। হারলেও ভারতের সঙ্গে প্রস্তুতি ম্যাচে ৮৪ রানে ধসে পড়ার কোনো ছাপ এখানে পড়েনি। সাম্প্রতিক সময়ের চিরচেনা বাংলাদেশকেই দেখা গেছে। এই স্বস্তিটুকু ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য টাইগারদের পিঠ আপনাকে চাপড়ে দিতেই হবে।

এবার আসি ম্যাচটা হারল কেন বাংলাদেশ, সে প্রসঙ্গে। কোথায় কমতি হয়ে গেল। উত্তরটা আমি লেখার শিরোনামেই দিয়েছি। আমাদের সামর্থ্যরে চেয়েও কিছুটা বাড়তি দিতে হবে। যেটা আমরা দিতে পারিনি। যেমন, ফিল্ডিংয়ে আমরা এই ম্যাচে যেমন খেলেছি, মোটামুটি তেমনই দল। কিন্তু ভালো দলের বিপক্ষে এবং বড় মঞ্চে সাফল্য পেতে হলে আমাদের এই জায়গায় আরো অনেক বেশি দিতে হবে। সামর্থ্যরে বাইরে গিয়েও কিছু দিতে হবে। হাফ চান্সকে ফুলচান্স বানাতে হবে। চারকে দুই বানাতে হবে। সে দিক থেকে দেখলে ওভালে বিশেষ কিছুই করে দেখাতে পারেনি ফিল্ডাররা। তুলনায়, আমার মনে হয়, শ্রেয়তর দল হওয়া সত্ত্বেও ইংরেজ ফিল্ডাররা নিজেদের সেরাটার চেয়েও বেশি কিছু দিয়েছে ফিল্ডিংয়ে। অন্তত ২০-২৫টা রান তারা সেভ করেছে। বাউন্ডারি আটকেছে যেমন, তেমনি আটকে দিয়েছে একের পর এক সিঙ্গেল। শেষ ওভারটাই দেখুন না। ৩টা রান তারা বাঁচিয়েছে। কারণ, রুট-মরগানরা জানত, ব্যাটিং স্বর্গ উইকেটে ছোট ছোট এসব সেভও শেষ বিচারে অনেক কাজে দেবে এবং দিয়েছেও তাই। এই ম্যাচে যদি বাংলাদেশ আরো ২০/৩০টা রান বেশি করত, সমীকরণটা অন্যরকম হতে পারত। আর তামিম ইকবাল যে ক্যাচটা নিয়েও নিলেন না, অর্থাৎ আম্পায়ার বাতিল করলেন, সেই ক্যাচটাও কিন্তু হতে পারত। ঐ যে বললাম, সেরাটার চেয়েও বেশি কিছু দিতে হতো। তা হলে ম্যাচে ফিরে আসতেও পারত বাংলাদেশ। সুতরাং ফিল্ডিংয়ে আরো ঢেলে দিতে হবে নিজেদের। আশাকরি, পরের ম্যাচের আগে টিম ম্যানেজমেন্ট এটা নিয়ে কাজ করবে।

বাড়তি প্রচেষ্টা দেওয়া হয়নি ব্যাটিংয়েও। তিনশ রান করেছি ঠিক আছে। কিন্তু এটাই যে এই উইকেটে যথেষ্ট নয়, সেটা মাঠে নেমে পরের ব্যাটসম্যানরা বুঝতে পেরেছেন কি না; সেই সংশয় আছে। আর বুঝতে পারলেও নিজের সেরাটা দিতে পারেননি। তামিম-মুশফিকের রেকর্ড জুটির সুবাদে এমন শক্ত ভিতে দাঁড়িয়েও শেষ ৫ ওভারে ৪৩ রান কোনোভাবেই মানায় না। এটা এখনকার বাংলাদেশের সামর্থ্যরেও প্রমাণ না। বিশেষ করে হাতে যতক্ষণ উইকেট আছে ততক্ষণ শেষের ওভারগুলোয় স্লগ করে যাওয়াই হলো কাজ। ওভার প্রতি ১৪/১৫ রান অনায়াসেই আসা উচিত, বিশেষ করে এমন ব্যাটিং উইকেটে। এই কাজটুকু সাকিব-মাহমুদউল্লাহ-মোসাদ্দেক করতে পারেননি। এক কথায় আমাদের ভালো ফিনিশিং হয়নি। এখানে আবারও নাসিরের মতো একজন অভিজ্ঞ ফিনিশারের অভাবও অনুভূত হয়েছে। যে রান শেষ ৫ বা ১০ ওভারে এসেছে, তা আমাদের সামর্থ্যরে সমান বা কাছাকাছি। জিততে হলে এর চেয়ে ভালো কিছু করতে হবে। এতে হবে না। যেমন, সেই ভালোটা হতে পারত ব্যাটিংয়ে আরো ২০/৩০ রান বেশি করা আর ফিল্ডিংয়ে কিছু রান আটকানো। সেটা হয়নি, তাই ম্যাচ শেষে ফলও আসেনি নিজেদের ঘরে। সামনের দুই ম্যাচেও ব্যবধানটা এখানেই হতে পারে। কে কতটা বেশি এফোর্ট দিতে পারে; যতটা নিজের আছে তার চেয়ে কিছুটা হলেও বেশি। ইংরেজিতে যাকে বলে ‘এক্সট্রাঅর্ডিনারি’। সেরকম কিছু দিতে পারলেই চ্যাম্পিয়নস ট্রফি থেকে কিছু নিয়ে আসা যাবে। নাহলে খালি হাতেই ফিরতে হবে। লেখক- সাংবাদিক রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩ জুন ২০১৭/জাফর/এনএ