বিশ্বকাপ ক্রিকেট ২০১৯

ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড নিশ্চিত খেলবে সেমিফাইনাল

ইয়াসিন হাসান:  বিশ্বকাপের ছয়টি আসরে খেলেছেন শচীন টেন্ডুলকার।  ক্যারিয়ারের শেষ বিশ্বকাপে জিতেছেন বিশ্বকাপের মুকুট।  এর আগে একাধিকবার শিরোপা জয়ের সুযোগ থাকলেও ঘরের মাঠে ২০১১ সালে স্বপ্নের শিরোপা পেয়েছিলেন।  বিশ্বকাপে ৪৫ ম্যাচে ২২৭৮ রানের সর্বোচ্চ রেকর্ডটি তারই দখলে।  ছয়টি সেঞ্চুরির রেকর্ডটি শচীনের নামের পাশে।  অভিজ্ঞতার ঝুলি তার টইটুম্বুর। ভারতের ব্যাটিং ঈশ্বর আজ ভারতের বিশ্বকাপ নিয়ে কথা বলেছেন গণমাধ্যমে। রাইজিংবিডি তার সাক্ষাৎকার প্রকাশ করছে হুবহু। ব্যাটসম্যানদের কথা মাথায় রেখেই জিজ্ঞেস করছি, ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে গতানুগতিক ফ্ল্যাট উইকেট পাওয়া যাবে।  ব্যাটসম্যানদের বাড়তি পাওয়া হতে পারে ছোট মাঠ।  সব মিলিয়ে এ বিশ্বকাপকে আপনি কিভাবে মূল্যায়ন করবেন? শচীন টেন্ডুলকার: দেখুন ৫০ ওভারের ক্রিকেটে বড় রান করতে একাধিক উপাদানের প্রয়োজন হয়।  যার সবটাই ইংল্যান্ডে রয়েছে।  প্রথমত, উইকেট ফ্ল্যাট।  আপনি দেখে থাকবেন শেষ তিন বা চার ম্যাচে যেটা ইংল্যান্ড ও পাকিস্তান খেলেছে…প্রায় প্রতিটি ইনিংসে ৩৫০ রান হয়েছে।  বিশেষ করে দুই প্রান্তে যখন আপনি নতুন দুটি বলে খেলাচ্ছেন তখনও এ রান হচ্ছে।  বলাবাহুল্য যখন ৪৬ বা ৪৭তম ওভারের খেলা হয় তখন বলের বয়স মাত্র ২৩ বা ২৪।  প্রায় নতুনই বলা যায়।  বলে তখন চাকচিক্য থাকে এবং বল রিভার্স করে না।  যদি আগের নিয়মের কথা বলি, আমরা একটি বলেই খেলতাম।  ২৮ ওভারের থেকেই বল রিভার্স করা শুরু হতো।  বলের আকৃতির পরিবর্তন হয়ে যেত এবং হাল্কা হয়ে যেত। ফলে ব্যাটসম্যানকে বাড়তি চ্যালেঞ্জ নিতে হতো প্রতিটি বোলারকে আক্রমণ করতে। এখন বল শেষ পর্যন্ত শক্ত থাকে।  তার চাকচিক্য বজায় থাকে এবং বাড়তি পাওয়া ফিল্ডিং নিয়ম।  সবকিছু মিলিয়ে বোলারদের এখন অনেক চ্যালেঞ্জ থাকে ২২ গজে।  আমি বিশ্বাস করি আপনার যদি ভালোমানের স্পিনার থাকে মধ্য ওভারগুলোতে বোলিং করার তাহলে আপনি উইকেট পেতে পারেন।  বোলিং জুটির ওপর অনেক সাফল্য নির্ভর করছে।  আগ্রাসী বোলিং দুই প্রান্ত থেকে হতে থাকলে ব্যাটিং লাইনআপে চাপ বাড়বে।  ব্যাটসম্যানদের জবাব দেওয়ার এটাই একমাত্র পথ।  তবে আমি মনে করি এবার বোলারদের জন্য বাড়তি কিছু থাকবে না। শেখর ধাওয়ান ভারতীয় দলে একমাত্র বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।  সীমিত পরিসরের ক্রিকেটে লেগ স্পিনারদের আধিপত্যের এ যুগে বাঁহাতি ব্যাটসম্যান বরাবরই বড় নিয়ামক।  যত গভীর পর্যন্ত ধাওয়ান ব্যাটিং করবে ততই কি দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ? শচীন টেন্ডুলকার: হ্যাঁ অবশ্যই।  বাঁহাতি-ডানহাতি জুটি বরাবরই উপকারী।  এতে বোলারকে চ্যালেঞ্জ নিতে হয়।  তাকে উইকেটে মানিয়ে নিতে হয় নিজের লাইন ও লেন্থ বজায় রেখে।  পাশাপাশি অধিনায়কদেরও বাড়তি চিন্তা থাকে।  যদি ভালো কোনো জুটি হয়ে যায় তাহলে বোলারদের জন্য কাজটা আরও কঠিন।  এজন্য বলছি একজন বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের উপস্থিতি শুধু লেগ স্পিনার না, অন্যান্য বোলারদের চাপ তৈরি করে। ভারতীয় দলে টপ অর্ডার (১-৩) বিশ্বের অন্যতম সেরা।  আপনি কি মনে করছেন ভারতের মধ্যভাগের ব্যাটিং সবথেকে চ্যালেঞ্জের জায়গা? শচীন টেন্ডুলকার: আমি এটাকে ভিন্ন চোখে দেখছি।  ১ নম্বর থেকে ৭ নম্বর আসলে ৮ নম্বর পর্যন্ত সকল ব্যাটসম্যানকে অবদান রাখতে হবে।  হ্যাঁ এটা ঠিক প্রত্যেক ব্যাটসম্যানের ভূমিকা ভিন্ন থাকবে।  অধিনায়ক ও কোচ প্রত্যেককে ভিন্ন দায়িত্ব দেবে এবং প্রত্যেককে সেই ভূমিকা ঠিক মতো পালন করতে হবে নিজের পূর্ণ সামর্থ্য দিয়ে।  ৪ নম্বরে যিনি ব্যাট করবেন তার থেকে বড় কিছুর প্রত্যাশা করতেই হবে এবং ৫-৮ পর্যন্ত যারা থাকবে তাদেরকে ফিনিশিংয়ের ভূমিকা রাখতে হবে। আমি বিশ্বাস করি ব্যাটিংয়ে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ। ব্যাটিংয়ে ৪ নম্বর পজিশন নিয়ে তর্কের শেষ নেই।  যে ১৫ জন এখন দলে আছে তাদের মধ্য থেকে আপনি কাকে ওই পজিশনের জন্য বেছে নেবেন এবং কেন? শচীন টেন্ডুলকার: আসলে ৪ নম্বর পজিশনে ব্যাটিংয়ের জন্য এতো আলোচনা হয়েছে যে…আমি অনুভব করি আপনি যদি সামর্থ্যবান ব্যাটসম্যান হয়ে থাকেন তাহলে আপনাকে যেকোনো পজিশনে ব্যাটিংয়ে দিলেই আপনাকে তা মেনে নেওয়া উচিত।  আমার বিশ্বাস আমাদের ব্যাটসম্যানদের সেই সামর্থ্য সবার রয়েছে যারা মাঠে গিয়ে নিজের কাজটা ভালোমতো করতে পারবে। রোহিত শর্মা বলেছে, ব্যক্তিগতভাবে তার ইচ্ছা মাহেন্দ্র সিং ধোনি ৪ নম্বরে ব্যাটিং করুক।  এ নিয়ে আপনার মত কি? শচীন টেন্ডুলকার: যদি আমার ব্যক্তিগত মতের কথা জানতে চান আমি বলবো আমি ধোনিকে পাঁচ দেখতে চাই।  যদিও আমি নিশ্চিত নই দলের কম্বিনেশন কেমন হতে পারে।  তবে আপনি যদি রোহিত, শেখর ধাওয়ানকে ওপেনিংয়ে রাখেন তাহলে বিরাট নম্বর তিনে।  ৪ নম্বরে যেই আসুক না কেন ধোনি পাঁচেই ঠিক আছে। এরপর হার্দিক পান্ডিয়ার মতো বিধ্বংসী ব্যাটসম্যানকেই দরকার।  এভাবেই একজন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান মূল দায়িত্ব পালন করতে পারবে এবং সেখান থেকে ধোনি ম্যাচ শেষ করে আসতে পারে।  ধোনির পর হার্দিকের আক্রমণাত্মক ব্যাটিং উপভোগ্য হবে। হার্দিক আইপিএল মাতিয়েছে ভালোভাবেই।  জাতীয় দলের হয়ে ভালো করতে মুখিয়ে আছে। নিশ্চয়ই আপনার সাথে এ নিয়ে কথা হয়েছে। তাকে কি উপদেশ দিয়েছেন।  সে কি বুঝতে পেরেছে ভারতীয় দলে এ মুহূর্তে সবথেকে প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় সে? শচীন টেন্ডুলকার: আমার সাথে তার বিশেষ কোনো কথা হয়নি।  মুম্বাইয়ের হয়ে আমাদের দুজনের প্রধান লক্ষ্য ছিল আইপিএল জেতা।  এরপর অন্য কিছু।  আমরা আইপিএল চলাকালিন বড় কিছু নিয়ে আলোচনা করিনি।  এখন আমরা বিশ্বকাপে এসেছি।  আইপিএলে তার খেলা লক্ষ্য করে দেখবেন, তার ব্যাট-বলের রসায়ন দারুণ।  একদম জমাট ব্যাটিং।  স্লগ করে মারার চেষ্টা নেই।  সহজাত ক্রিকেট শটে বিশ্বাস রাখতে পারে সে। এটা অন্যতম বড় একটি সুবিধা তার।  এতে সে ধারাবাহিক থাকতে পারে।  বিশ্বকাপে এটা তার খুব কাজে দেবে।  ইংল্যান্ডে প্রচুর আত্মবিশ্বাস ও প্রাণে সঞ্চার নিয়ে গিয়েছে সে।  আশা করছি মাঠেই তার আসল রূপ দেখতে পারবেন।  এটা তার জন্য অনেক বড় টুর্নামেন্ট হতে যাচ্ছে।  আমি প্রার্থনা করি, আমরা দল হিসেবে অনেকদূর এগিয়ে যাই এবং শেষ পর্যন্ত ভালো কিছুর জন্য অপেক্ষা করি।  এরপর আমরা পুরো জাতি একসঙ্গে মিলে আমাদের সাফল্য উদযাপন করবো। আপনার মতে বিশ্বকাপের চার সেমিফাইনালিস্ট কারা হতে পারে? শচীন টেন্ডুলকার: ভারত, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া সেমিফাইনাল খেলবে নিশ্চিত করে বলতে পারি।  চার নম্বর দল হতে পারে নিউজিল্যান্ড বা পাকিস্তান। রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৩ মে ২০১৯/ইয়াসিন