বিশ্বকাপ ক্রিকেট ২০১৯

বড় তারকাকে নিয়ে বড় আশা

ওদের হাতে বিশ্বকাপ মশাল। ওদের কাছে ১৬ কোটির প্রত্যাশা। ওরাই স্বপ্নের ধারক। ওরা বাংলার টাইগার। ওরা বাংলাদেশের বিশ্বকাপ স্বপ্নসারথি। ওদেরই একজন সাকিব আল হাসান। ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ১৫ খেলোয়াড়কে নিয়ে প্রতিদিন লেখা প্রকাশ করছে রাইজিংবিডি’র ক্রীড়া বিভাগ। আজ পড়ুন সাকিব আল হাসানের গল্প, লিখেছেন আবু হোসেন পরাগ। বাংলাদেশ স্কোয়াডের যে চার ক্রিকেটার এবার তাদের চতুর্থ বিশ্বকাপ খেলবেন, তাদেরই একজন সাকিব। ২০০৭ বিশ্বকাপ দিয়ে শুরু। প্রথম ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে ঐতিহাসিক সেই জয়ে সাকিবের ব্যাট থেকে এসেছিল ফিফটি। বাঁহাতি স্পিনিং অলরাউন্ডার এরপর খেলেছেন ২০১১ এবং ২০১৫ বিশ্বকাপ। ২০১১ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে নেতৃত্বও দেন সাকিব।  

আগের তিন বিশ্বকাপে সাকিব ম্যাচ খেলেছেন মোট ২১টি। ৩০ গড়ে করেছেন ৪৩০ রান। পাঁচটি ফিফটি করলেও কোনো সেঞ্চুরি নেই, সর্বোচ্চ ইনিংস ৬৩ রানের। আর বাঁহাতি স্পিনে ২১ ম্যাচে উইকেট নিয়েছেন ২৩টি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাকিবের অভিষেক ২০০৬ সালের আগস্টে, জিম্বাবুয়ের সফরের ওয়ানডে দিয়ে। ২০০৭ সালে মে মাসে চট্টগ্রামে ভারতের বিপক্ষে হয় টেস্ট অভিষেক। দ্রুতই তিনি বাংলাদেশের ক্রিকেটের প্রাণ হয়ে ওঠেন। এখন বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় ‘পোস্টার বয়’ তিনি। বিকেএসপির ছাত্র সাকিবই প্রথম বাংলাদেশি ক্রিকেটার, যিনি আইসিসির ওয়ানডে অলরাউন্ডার র‍্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে উঠে আসেন। শুধু তাই নয়, বিশ্বের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে তিনি তিন ফরম্যাটের ক্রিকেটেই অলরাউন্ডারদের র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে ওঠার গৌরব অর্জন করেন। ২০১৫ সালে সাকিব এই কৃতিত্ব প্রথম করে দেখান। নিজের এই কৃতিত্ব পরে আবার করে দেখিয়েছেন।  

সাকিবের ওয়ানডে ক্যারিয়ার:

ব্যাটিং

ইনিংস

রান

গড়

স্ট্রাইক রেট

সর্বোচ্চ

১০০

৫০

১৮৬

৫৭১৭

৩৫.৭৩

৮১.৫৫

১৩৪*

৪২

বোলিং

ইনিংস

উইকেট

গড়

ইকোনমি

সেরা

৫ উইকেট

৪ উইকেট

১৯৫

২৪৯

২৯.৯৫

৪.৪৪

৫/৪৭

আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার রাঙিয়ে যাওয়ার পথচলায় আরো অনেক অর্জনই ধরা দিয়েছে সাকিবের হাতে। সবচেয়ে কম ম্যাচ খেলে ওয়ানডেতে ৫ হাজার রান ও ২০০ উইকেটের ডাবলের অনন্য কীর্তি তার।সবচেয়ে কম ম্যাচ খেলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১০ হাজার রান ও ৫০০ উইকেটের ডাবলও সাকিবের দখলে। টেস্ট ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত একই ম্যাচে সেঞ্চুরি আর ১০ উইকেট নিয়েছেন মাত্র তিনজন, সাকিব তাদের একজন।  

সাকিব তার ক্যারিয়ারে বিতর্কেও জড়িয়েছেন নানা সময়ে। বিভিন্ন মেয়াদে নিষিদ্ধ হতে হয়েছে তাকে। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশের টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়কের দায়িত্বে আছেন। আছেন ওয়ানডের সহ-অধিনায়কের দায়িত্বেও। সাম্প্রতিক সময়ে চোট বেশ ভুগিয়েছে সাকিবকে। বিশেষ করে আঙুলের চোট। গত বছরের সেপ্টেম্বরে এশিয়া কাপের সময় আঙুলের সংক্রমণে তার ক্যারিয়ারই হুমকির মুখে পড়ে গিয়েছিল। গত ফেব্রুয়ারিতে বিপিএলের ফাইনালের আঙুল ভেঙে ফেলায় যেতে পারেননি নিউজিল্যান্ড সফরে। চোট কাটিয়ে সাকিব মাঠে ফেরেন আইপিএল দিয়ে। কিন্তু সানরাইজার্স হায়দরাবাদের হয়ে আইপিএলে খুব বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি। পিঠের পেশির চোটের কারণে আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালও খেলতে পারেনি। তবে ফাইনালের আগে যে কয়টা ম্যাচ খেলেছেন, তাতেই দারুণ পারফর্ম করে কদিন আগে ওয়ানডের অলরাউন্ডার র‍্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থানটা ফিরে পেয়েছেন।

আট মাস পর ওয়ানডের শীর্ষ অলরাউন্ডার হয়েই সাকিব পা রাখছেন বিশ্বকাপের মঞ্চে। সাকিব এমন একজন ক্রিকেটার, যিনি ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারেন নিমিষেই। ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় আসরে তাকে ঘিরে তাই অনেক বড় আশা বাংলাদেশ দলের। কদিন আগে বাংলাদেশের প্রধান কোচ স্টিভ রোডস তো বলেছেন, বিশ্বকাপে সাকিবের নিজেকে প্রমাণেরও একটা উপলক্ষ আছে। কোচের চাওয়া, এই বিশ্বকাপেই সাকিব প্রমাণ করে দিক, কেন তিনি এক নম্বর। ওহ হ্যাঁ, বিশ্বকাপে সাকিব একটি উইকেট পেলেই কিন্তু আরেকটি অনন্য কীর্তি গড়বেন- সবচেয়ে কম ম্যাচ খেলে ওয়ানডেতে ৫ হাজার রান ও ২৫০ উইকেটের কীর্তি। এই ডাবল এখন পর্যন্ত মাত্র চারজনের আছে। রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৯ মে ২০১৯/পরাগ