বিশ্বকাপ ক্রিকেট ২০১৯

সাউদাম্পটনের থ্রিলারে আফগান বাধা পার ভারতের

ক্রীড়া প্রতিবেদক : শেষ ওভারে দরকার ১৬ রান। মোহাম্মদ শামির প্রথম বলেই স্ট্রেইট ড্রাইভে চার মারলেন মোহাম্মদ নবী। পরের বলে সুযোগ থাকতেও নিলেন না সিঙ্গেল। তৃতীয় বল ছক্কায় উড়াতে গিয়ে নবী ক্যাচ দিলেন লং অনে। তাতে যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল ভারত। পরের দুই বলে আরো দুই উইকেট নিয়ে শামি পূর্ণ করলেন হ্যাটট্রিক। আফগান রূপকথা তাই রচিত হলো না আর। সাউদাম্পটনের লো স্কোরিং থ্রিলারে শেষ হাসি হাসল ভারত। শনিবার স্পিনারদের নৈপুণ্যে ভারতকে ২২৪ রানে আটকে দিয়েছিল আফগানিস্তান। জবাবে আফগানরা থামে ২১৩ রানে। ১১ রানের জয়ে টুর্নামেন্টে অপরাজেয় যাত্রা ধরে রাখল বিরাট কোহলির দল। আফগানিস্তান হারল প্রথম ছয় ম্যাচেই। লক্ষ্য তাড়ায় আফগানিস্তানের শুরুটা ভালো হয়নি। সপ্তম ওভারে শামির বলের লাইন মিস করে বোল্ড হন হজরতউল্লাহ জাজাই। দ্বিতীয় উইকেটে অধিনায়ক গুলবাদিন নাইব ও রহমত শাহ ৪৪ রানের জুটিতে এগিয়ে নেন দলকে। হার্দিক পান্ডিয়ার শর্ট বলে ফেরা গুলবাদিন করেন ২৭ রান। রহমত দমে যাননি। তৃতীয় উইকেটে হাশমতউল্লাহ শাহিদির সঙ্গে গড়েন ৪২ রানের আরেকটি কার্যকরী জুটি। এরপরই আফগানরা খায় জোড়া ধাক্কা। জাসপ্রিত বুমরাহর তিন বলের মধ্যে ফেরেন দুই সেট ব্যাটসম্যানই। শর্ট বলে ফেরা রহমত করেন ৩৬। ২১ রানে বোলারকে ফিরতি ক্যাচ দেন শাহিদি। বেশিক্ষণ টেকেননি প্রাক্তন অধিনায়ক আসগর আফগান। তবুও নবী আর নজিবুল্লাহ জাদরানের ব্যাটে আফগানিস্তান ম্যাচে ছিল ভালোভাবেই। শেষ ১০ ওভারে ৫ উইকেট হাতে রেখে দরকার ছিল ৬৮ রান। নবী-জাদরানের ৩৬ রানের জুটিটাও জমে উঠেছিল তখন। কিন্তু নজিবুল্লাহ (২১) পান্ডিয়ার স্লোয়ারে ফিরলে ভাঙে জুটি। রশিদ একটি চার মারলেও চাহালের পরের বলেই ফেরেন স্টাম্পড হয়ে। আফগানিস্তানের আশা হয়ে টিকে ছিলেন নবী। শেষ তিন ওভারে আফগানিস্তানের দরকার ছিল ২৪ রান। ৪৮তম ওভারে দুর্দান্ত বোলিংয়ে শামি দেন মাত্র ৩ রান। বুমরাহর করা পরের ওভারে আসে ৫ রান। এই দুটি ওভারই গড়ে দেয় ব্যবধান। শেষ ওভারে ১৬ রানের সমীকরণে শামির প্রথম বলে নবী চার মেরে আশা জাগিয়েছিলেন যদিও। তবে এক বল পরই নবীকে (৫৫ বলে ৫২) পান্ডিয়ার ক্যাচ বানিয়ে সব অনিশ্চয়তার ইতি টানেন শামি। পরের দুই বলে শেষ দুই ব্যাটসম্যানকে বোল্ড করে ১৯৮৭ সালে চেতন শর্মার পর দ্বিতীয় ভারতীয় বোলার হিসেবে বিশ্বকাপে হ্যাটট্রিক করেন এই পেসার। ৯ ওভার ৫ বলে ৪০ রানে ৪ উইকেট নেন শামি। তবে ১০ ওভারে ৩৯ রানে ২ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হয়েছেন বুমরাহ।   এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ধাক্কা খায় ভারত। দলীয় ৭ রানে অফ স্পিনার মুজিব উর রহমানের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন দারুণ ফর্মে থাকা রোহিত শর্মা (১)। এরপর প্রতিরোধ গড়েন কোহলি। ভারত অধিনায়ক প্রথমে লোকেশ রাহুলের সঙ্গে গড়েন ৫৭ রানের জুটি। রাহুলকে (৩০) ফিরিয়ে এ জুটি ভাঙেন আরেক অফ স্পিনার মোহাম্মদ নবী। তৃতীয় উইকেটে বিজয় শঙ্করের সঙ্গে ৫৮ রানের আরেকটি ভালো জুটি গড়ে ফেলেছিলেন কোহলি। এরপরই ১৩ রানের মধ্যে দুই সেট ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে চাপে পড়ে যায় ভারত। রহমত শার লেগ স্পিনে শঙ্কর (২৯) হন এলবিডব্লিউ। নবীর কিছুটা লাফিয়ে ওঠা বলে কাট করতে গিয়ে পয়েন্টে ক্যাচ দেন কোহলি। ৬৩ বলে ৫ চারে কোহলি করেন ৬৭ রান। এরপর মন্থর ব্যাটিংয়ে ভারতকে এগিয়ে নিয়েছেন মহেন্দ্র সিং ধোনি ও কেদার যাদব। লেগ স্পিনার রশিদকে ডাউন দ্য উইকেটে খেলতে গিয়ে ধোনি স্টাম্পড হলে ভাঙে ৫৭ রানের জুটি। ৫২ বলে ধোনি করেন ২৮। শেষ দিকে রানের গতি বাড়াতে পারেননি হার্দিক পান্ডিয়াও। আফতাব আলমের শর্ট বলে ক্যাচ দেন উইকেটের পেছনে (৯ বলে ৭)।  শেষ ওভারে ভারত তুলতে পারে মাত্র ৫ রান, উইকেট হারায় ২টি। ৬৮ বলে ৩ চার ও এক ছক্কায় ৫২ রান করেন যাদব। মুজিব ১০ ওভারে ২৬ রানে ও রশিদ ৩৮ রানে নেন একটি করে উইকেট। ৯ ওভারে ৩৩ রানে ২ উইকেট নেন নবী। রহমত ৫ ওভারে ২২ রানে নেন একটি উইকেট। স্পিনাররা বিশ্বকাপে আফগানিস্তানকে প্রথম জয়ের স্বপ্ন দেখালেও ব্যাটসম্যানরা সেটিকে বাস্তবে রূপ দিতে পারলেন কই!

   

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২২ জুন ২০১৯/পরাগ