ঢাকা সিটি নির্বাচন-২০২০

চাপে রাখছেন ইশরাক!

ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন। তার শৈশব-কৈশোর কেটেছে রাজনীতির ভেতর। বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত সাদেক হোসেন খোকা। যিনি ছিলেন অবিভক্ত ঢাকার শেষ মেয়র।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন। বাবার রাজনৈতিক আদর্শ, শিক্ষা নিজের মধ‌্যে ধারণ করে নিজেকে প্রস্তুত করতে থাকেন।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি সংসদ সদস‌্য পদে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নেন। কিন্তু দলের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে ঐক‌্যফ্রন্টের প্রার্থীর জন‌্য শেষ পর্যন্ত আর নির্বাচনে অংশ নেননি।   

তিনি জানান, কয়েক মাস আগে দলের গ্রিন সিগনাল পেয়ে সিটি করপোরেশন নির্বাচনের জন‌্য নিজেকে প্রস্তুত করতে থাকেন। দফায় দফায় সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এরই মধ‌্যে তার বাবা সাদেক হোসেন খোকা মারা যান। বাবার লাশ সামনে রেখে শহীদ মিনারে দেওয়া বক্তব‌্যে ব‌্যাপক প্রসংশা কুড়ান ইশরাক। অনুরোধ রাখেন প্রতিহিংসার রাজনীতি পরিহারের।

এরপর হঠাৎ করে ঢাকা সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়। বিএনপিও দলীয় মনোনয়ন ফরম ছাড়ে। ঢাকা উত্তরে বিএনপি থেকে দু’জন মনোনয়ন প্রত‌্যাশা করলেও দক্ষিণে শুধু ইশরাক হোসেন ছাড়া আর কেউই দলীয় মনোনয়ন ফরম তোলেননি। বিএনপি থেকে দেওয়া হয় দলীয় মনোনয়ন। এরপর নামেন ভোটের মাঠে।

ইশরাক বলেন, ‘আমি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। আমার বাবা দেশের জন‌্য যুদ্ধ করেছেন। আমি নির্বাচনে নেমেছি জনগণের ভোটাধিকার ফেরানোর জন‌্য, গণতন্ত্রের জন‌্য।’

মঙ্গলবার রাজধানীর খিলগাঁওয়ের ত্রিমোহনী বাজারে প্রচারে গিয়ে ইশরাক বলেন, ‘ঢাকা সিটি নির্বাচন শুধু ইশরাক হোসেনের লড়াই নয়, এটা ধানের শীষের লড়াই, জনগণের লড়াই, গণতন্ত্রের লড়াই।’

এর আগে বিভিন্ন সময়ে দেখা গেছে, নির্বাচনের মাঠে বিএনপি দাঁড়াতেই পারেনি। এবার তার ব‌্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে। এবারও হামলা, হুমকি-ধামকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করলেও মাঠে রয়েছে বিএনপি। দলের নেতারা জানিয়েছেন, শেষ পর্যন্ত তারা মাঠে থাকবেন।

ইশরাক বলেন, ‘সন্ত্রাসীরা এর আগে আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা চালিয়েছে। ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে আমাদের সিনিয়র নেতাদের গাড়িবহরে হামলা চালিয়েছে। এ নির্বাচনেও এ ধরনের হামলা হচ্ছে। তবে আমরা এবার প্রতিপক্ষের সকল হামলা মোকাবেলা করতে প্রস্তুত আছি।’

গত ১০ জানুয়ারি শুরু হয় নির্বাচনী প্রচারণা। প্রথম দিনেই তিনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ফজলে নূর তাপসের বিরুদ্ধে। লিখিত অভিযোগ দেন নির্বাচন কমিশনে।

ঠিক তার একদিন পর ইশরাকের বিরুদ্ধে গণসংযোগে হামলার অভিযোগ করেন ব‌্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস ।

তিনি অভিযোগ করে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আর কে মিশন রোডে নির্বাচনী প্রচারণার সময় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ইশরাক হোসেনের বাসায়ও আমি গিয়েছি। সেখানে সকলের সঙ্গে স্বাক্ষাৎ করেছি। ভোট প্রার্থনা করেছি। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, আমরা সেখান থেকে চলে আসার পরই তারা আমাদের ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীসহ গণসংযোগে যারা ছিল তাদের ওপর আক্রমণ করেছে। এটা অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক।’

ভোটারদের উদ্দেশে ইশরাক হোসেন বলেন, ‘৩০ তারিখ আপনারা ভোট দিতে আসবেন। আপনারা যেন সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে পারেন, সেজন্য আমরা মাঠে থাকব।’

রাইজিংবিডিকে তিনি বলেন, ‘মেরে ফেলবে ফেলুক। আমি মাঠ ছাড়ব না। ফলাফল নিয়েই তারপর ফিরব। জনগণ সঙ্গে আছে। ইনশাল্লাহ বিজয় নিয়েই ফিরব।’

তিনি আরো বলেন, ‘পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। পোস্টার লাগাতে দেওয়া হচ্ছে না। বাঁধা দেয়া হচ্ছে, মারধর করা হচ্ছে। এমনকি পোস্টার লাগতে আসলে পুলিশে দেওয়ারও হুমকি দেওয়া হচ্ছে।’

বিএনপির ভাইস চেয়ারম‌্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘নির্বাচন হচ্ছে একটি উৎসব। তবে এই সিটি নির্বাচনে নিয়ে ভোটারদের মধ‌্যে এক ধরনের উৎকণ্ঠাও রয়েছে। মানুষ ভোট দিতে পারবে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।’ এই আতঙ্ক-সংশয় কাটিয়ে  উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন সম্পন্নের জন‌্য নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান।

এদিকে ২০০৮ সালের এক মামলায় ইশরাকের বিরুদ্ধে বুধবার আদালত চার্জ গঠন করেন। এটা নিয়ে অনেকেই মনে করেছেন, ভোটে এর প্রভাব পড়বে।

তবে ইশরাক বলেন, ‘নির্বাচনে এর কোনো প্রভাব পড়বে না। এরকম রাজনৈতিক মামলার চার্জ গঠনে মোটেও বিচলিত নই।’ ঢাকা/সাওন/ইভা