অর্থনীতি

বেসিক ব্যাংকের লোকসান কমিয়ে দেখানোর চেষ্টা

বিশেষ প্রতিনিধি : সরকারি মালিকানাধীন বেসিক ব্যাংকের ২০১৪ সালে আড়াই হাজার কোটি টাকা লোকসান কমিয়ে ১১০ কোটি দেখানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে বহুল আলোচিত বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

 

সূত্র জানায়, ২০১৪ সালে বেসিক ব্যাংকের নিট লোকসানের পরিমাণ ছিল দুই হাজার ৬৮৬ কোটি টাকা। কিন্তু ব্যাংকিং বিভাগ থেকে এই পরিসংখ্যান ব্যবহার করা হচ্ছে না। এর পরিবর্তে পরিচালনাগত লোকসান দেখানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই হিসাবে বেসিক ব্যাংকের ২০১৪ সালে পরিচালনাগত লোকসান দেখানো হয়েছে ১১০ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। চলতি সংসদ অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে এ ধরনের একটি পরিসংখ্যান উপস্থাপন করা হতে পারে।

 

এ বিষয়ে ব্যাংকিং বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেছেন, লোকসানের বিষয়ে যাবতীয় তথ্য বেসিক ব্যাংক থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। ব্যাংকটি যে তথ্য দিয়েছে তার ওপর ভিত্তি করেই লোকসানের চিত্র তুলে ধরা হচ্ছে। এখানে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কোনো হাত নেই।

 

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী চলতি ২০১৫ সালের জুন মাস পর্যন্ত (ছয় মাসে) বেসিক ব্যাংক লোকসান দিয়েছে ১৬৯ কোটি টাকা। চলতি বছরে শীর্ষ ২০ ঋণখেলাপি থেকে ৫০০ কোটি টাকা আদায় ল্যমাত্রার বিপরীতে প্রথম তিন মাসে মাত্র ১০ লাখ টাকা আদায় করেছে বেসিক ব্যাংক। অন্য খেলাপিদের থেকে ৭৩০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে ৬৮ কোটি টাকা। এ পরিস্থিতিতে এরই মধ্যে ঋণ আদায় কার্যক্রম জোরদার ও দায়ী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি ব্যবস্থা নিতে বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

 

বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে দেওয়া বেসিক ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে, চলতি বছরের প্রথন তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) ৪১৩ কোটি টাকার ঋণ পুনঃতফসিল করেছে ব্যাংকটি। ব্যাংকটির মার্চ শেষে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ৮০ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৫৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ। আর মূলধন ঘাটতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৬৩৪ কোটি টাকায়। এ ছাড়া চলতি বছর ১৪ শতাংশ ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে বিতরণ বেড়েছে ১ দশমিক ৮৫ শতাংশ। ব্যাংকের ৬৮ শাখার মধ্যে লোকসানি শাখার সংখ্যা ৩৭টি।

 

এর আগে বিভিন্ন সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বেসিক ব্যাংকের বিভিন্ন অনিয়মের বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে। গত বছর আগস্টে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়, প্রধান কার্যালয়ের ঋণ যাচাই কমিটি বিরোধিতা সত্ত্বেও বেসিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ সেই ঋণ অনুমোদন করেছে। ৪০টি দেশীয় তফসিলি ব্যাংকের কোনোটির ক্ষেত্রেই পর্ষদ কর্তৃক এ ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ পরিলক্ষিত হয় না।

 

পর্ষদের ১১টি সভায় ঋণ অনুমোদন করা হয়েছে তিন হাজার ৪৯৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। যার বেশির ভাগ ঋণই গুরুতর অনিয়মের মাধ্যমে করা হয়েছে। এই ঋণ পরিশোধ বা আদায় হওয়ার সম্ভাবনা কম বলেও মতামত দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এরই মধ্যে দুর্নীতির কারণে ব্যাংকের সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।

 

শতকরা শতভাগ সরকারি মালিকানাধীন বেসিক ব্যাংক ২০০৯ সাল পর্যন্ত একটি লাভজনক ব্যাংক ছিল। কিন্তু এরপর যখন রাজনৈতিক বিবেচনায় ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরে বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে শেখ আবদুল হাই বাচ্চু নিয়োগ দেয়া হয় তখন থেকেই ব্যাংকটির আর্থিক অনিয়মের সূত্রপাত ঘটে।

 

চেয়ারম্যান ও পরিচালনা পর্ষদের প্রত্যক্ষ মদদে বেসিক ব্যাংকে একে একে ঘটে যায় অনেক আর্থিক কেলেঙ্কারি। পরে সরকারের শীর্ষ মহলের নির্দেশে ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান বাচ্চুকে ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। বর্তমানে তার বিরুদ্ধে মামলা করার চিন্তা করছে সরকার।

     

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫/হাসনাত/সনি