অর্থনীতি

বাজেটে ডিসিসিআই’র ৯২ প্রস্তাব

বিশেষ প্রতিবেদক : আগামী অর্থবছরের বাজেটে ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)।

 

করমুক্ত আয়ের সীমা আড়াই লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে সর্বোচ্চ সাড়ে ৩ লাখ টাকা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের কথা বিবেচনা করে ২০২১ সাল পর্যন্ত ‘প্যাকেজ ভ্যাট’ বহাল রাখার প্রস্তাব করেছে সংগঠনটি।

 

সোমবার বিকেলে সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনায় ডিসিসিআই সভাপতি হোসেন খালেদ সংগঠনের পক্ষে এ সব প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। এ সময় ডিসিসিআই’র পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।

 

সংঠনের পক্ষ থেকে আসন্ন ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে বিবেচনার জন্য ৯২টি প্রস্তাব তুলে ধরা হয়েছে। এরমধ্যে আয়কর আইন ও বিধি সংক্রান্ত ১৫টি, আয়কর সংক্রান্ত ১৫টি, আমদানি ও সম্পূরক শুল্ক সংক্রান্ত ৪৮টি, মূল্য সংযোজন কর নীতি, আইন ও বিধি সংক্রান্ত ৩টি এবং মূল্য সংযোজন কর সংক্রান্ত ৩টি প্রস্তাব রয়েছে।

 

সংগঠনের পক্ষ থেকে আগামী অর্থবছরের বাজেটে শেয়ারবাজারের জন্য করমুক্ত লভ্যাংশের সীমা ২৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০ হাজার টাকা করার কথা বলা হয়েছে। একই সঙ্গে তারা করদাতাদের জন্য ট্যাক্স কার্ড চালুর প্রস্তাব দিয়েছে। এই কার্ডকে অনেকে স্মার্ট কার্ডে রূপান্তর করারও প্রস্তাব দিয়েছে। এই ধরনের কার্ডধারীকে বিশেষ রাষ্ট্রীয় সুবিধা দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

 

চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশনগুলোর আয়কে করমুক্ত রাখার দাবি করে ডিসিসিআই সভাপতি হোসেন খালেদ বলেছেন, এদের আয় দিয়ে ব্যবসায়ীদের প্রশিক্ষণসহ নানা ধরনের দক্ষতা বাড়ানোর কাজে ব্যবহার করা হয়। ফলে এসব অর্থকে করমুক্ত রাখলে ওইসব কল্যাণধর্মী কাজে আরও বেশি অর্থ ব্যয় করা সম্ভব হবে।

 

প্রস্তাবনায় কোম্পানি করদাতাদের লাভ-লোকসান নির্বিশেষে ন্যূনতম কর আদায় পদ্ধতি বিলুপ্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। আবাসন খাতকে চাঙ্গা করতে এর ওপর আরোপিত গেইন ট্যাক্স, রেজিস্ট্রেশন ফি কমানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এর ফলে এই খাতে বিদ্যমান মন্দা কাটানোর সুযোগ তৈরি হবে।

 

প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে তিন লাখ টাকায় উন্নীত করার পাশাপাশি এলাকাভেদে ন্যূনতম কর ৩ হাজার, ২ হাজার এবং ১ হাজার টাকা করার সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া মার্চেন্ট ব্যাংকের করপোরেট কর সাড়ে ৩৭ শতাংশের পরিবর্তে ৩৫ শতাংশ এবং ব্রোকারেজ হাউসের করহার ৩৫ থেকে কমিয়ে ৩০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

 

প্রস্তাবে করমুক্ত সীমার ঊর্ধ্ব আয়ে সিটি করপোরেশন এলাকায় অবস্থিত করদাতাদের ন্যূনতম আয়কর ৫ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে ৩ হাজার, জেলা সদরের পৌরসভায় ৪ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে ২ হাজার এবং অন্য এলাকায় ৩ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে ১ হাজার টাকা করার কথা বলা হয়। একই সঙ্গে স্থায়ী আমানতের ওপর থেকে সারচার্জ কমিয়ে টিআইএনধারীদের জন্য ২ শতাংশ এবং টিআইএনবিহীনদের ৩ শতাংশ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে স্থায়ী আমানতের ওপর টিআইএনধারীদের ১০ শতাংশ এবং টিআইএনবিহীনদের ১৫ শতাংশ কর দিতে হচ্ছে। এ ছাড়া স্থায়ী আমানত থেকে প্রাপ্ত সুদের ওপর ক্ষেত্রবিশেষ ১০ থেকে ১২ শতাংশ কর দিতে হয়।

 

প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, ব্যক্তিশ্রেণির সাধারণ করদাতাদের জন্য করমুক্ত আয়সীমা ৩ লাখ, মহিলা করদাতা এবং ৬৫ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সের পুরুষের জন্য ৩ লাখ ৫০ হাজার, প্রতিবন্ধী করদাতার জন্য ৪ লাখ, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৪ লাখ ৫০ হাজার এবং যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের করমুক্ত আয়সীমা ৫ লাখ টাকা করার দাবি করেছেন তারা।

 

ডিসিসিআই সভাপতি হোসেন খালেদ বলেন, আসন্ন বাজেটে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের কথা বিবেচনা করে ২০২১ সাল পর্যন্ত প্যাকেজ ভ্যাট বহাল রেখে প্রতি বছর ১০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।

 

প্রাক-বাজেট আলোচনায় ডিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে আয়কর আরোপের ক্ষেত্রে আয়ের প্রথম ৪ লাখ পর্যন্ত ১০ শতাংশ, ৫ লাখ পর্যন্ত ১৫ শতাংশ, ৬ লাখ পর্যন্ত ২০ শতাংশ, ৩০ লাখ পর্যন্ত ২৫ শতাংশ ও এর বাইরে বাকি আয়ের ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ কর নির্ধারণের প্রস্তাব দেওয়া হয়। এ বিষয়ে যুক্তি তুলে ধরে ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, বর্তমানে জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি এবং মূল্যস্ফীতির ফলে মৌলিক চাহিদা মেটানোর ব্যয়সহ অন্যান্য ব্যয় বেড়েছে। এ কারণে করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানো প্রয়োজন।

 

ডিসিসিআই প্রতিনিধিদের অর্থমন্ত্রী বলেন, আপনারা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। বিশেষ করে বর্তমান সরকারের সব ধরনের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে দেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করা। আপনারা যারা বেসরকারিখাতে কাজ করছেন, তারা কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে সরকারের দারিদ্র্যদূরীকরণ কর্মসূচিকে ত্বরান্বিত করছেন। আপনাদের উপস্থাপিত যৌক্তিক প্রস্তাবগুলো বাজেটে গুরুত্ব পাবে। তবে এমন কিছু করা সম্ভব হবে না, যাতে বাজেট বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্থ হয়।

   

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৯ মে ২০১৬/হাসনাত/বকুল