অর্থনীতি

পাস হলো উন্নয়ন ও উচ্চাভিলাষী বাজেট

সংসদ প্রতিবেদক : প্রবৃদ্ধি উন্নয়ন ও সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পাস হলো ২০১৬-১৭ অর্থ বছরের বাজেট।

 

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে সরকারি দলের সংসদ সদস্যদের করতালির মধ্যদিয়ে দেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকার বাজেট পাস করা হয়। যা আগামী ১ জুলাই থেকে থেকে কার্যকর হবে।

 

স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী বাজেট পাসের বিলটি কণ্ঠভোটে দিলে বিরোধীদল জাতীয় পার্টি বিরোধিতা করে এবং না ভোট দেয়।

 

এ সময় সংসদ নেতা শেখ হাসিনা, বিরোধীদলের নেতা রওশন এরশাদ ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদসহ সরকারি ও বিরোধীদলের সংসদ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

 

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত নতুন অর্থবছরের বাজেট পাসের প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। বাজেটের ওপর ৫৬টি দাবির বিপক্ষে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে মোট ৪২০টি ছাটাই প্রস্তাব আনা হয়। এতে বিরোধীদল জাতীয় পার্টির ৬ জন এবং স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের ৩ জন আলোচনা করেন। মোট ৭টি মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ নিয়ে আলোচনা হয়। বাকীগুলো সরাসরি ভোটে গৃহীত হয়।

 

এর আগে গত ২ জুন সংসদে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বাজেট। অর্থমন্ত্রী নিজেই সব সময় তার দেওয়া বাজেটকে উচ্চাভিলাষী আখ্যায়িত করেন। 

 

এরপর ৮ জুন থেকে প্রস্তাবিত বাজেটের সাধারণ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদসহ অধিকাংশ সংসদ সদস্যরা পক্ষে-বিপক্ষে নানা যুক্তিতর্ক উত্থাপন করেন। এরপর ২৯ জুন সংসদে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া রপ্তানি খাতে উৎস কর কমানো হয়। এর বাইরেও কয়েকটি বিষয়ে সংশোধনী আনা হয়।

 

এটি ছিল অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের দশম বাজেট এবং আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের ৮ম বাজেট।

 

২০১৬-১৭ অর্থবছরের পাস হওয়া বাজেটের আকার ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪২ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নিয়ন্ত্রিত কর ব্যবস্থা থেকে আদায় করা হবে ২ লাখ ৩ হাজার ১৫২ কোটি টাকা।

 

এনবিআর বহির্ভূত কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ হাজার ২৫০ কোটি টাকা এবং কর বহির্ভূত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৩২ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা। বিদেশি অনুদান ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৫১৬ কোটি টাকা। এ অনুদান পাওয়া গেলে সরকারের মোট আয় হবে ২ লাখ ৪৮ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা।

 

নতুন বাজেটে মোট অনুন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ১৫ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে অনুন্নয়ন রাজস্ব ব্যয় হবে ১ লাখ ৮৮ হাজার ৯৬৬ কোটি টাকা। এ অনুন্নয়ন ব্যয়ের মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ৩৮ হাজার ২৪০ কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের সুদ দেওয়া হবে ১ হাজার ৭১১ কোটি টাকা। মূলধনী ব্যয় ২৬ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকা। ঋণ ও অগ্রীম বাবদ ব্যয় হবে ৮ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা।

 

এ ছাড়া উন্নয়ন ব্যয় করা হবে ১ লাখ ১৭ হাজার ২৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) হচ্ছে ১ লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এডিপি বাস্তবায়নে সরকারের অর্থায়ন ৭০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা নেওয়া হবে ৪০ হাজার কোটি টাকা। এডিপি বহির্ভূত প্রকল্প ব্যয় হচ্ছে ৪ হাজার ১৪৭ কোটি টাকা। কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচিতে ব্যয় হবে ১ হাজার ৮২৬ কোটি টাকা।

 

জিডিপির ৫ শতাংশ ধরেই ঘাটতি বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে। আগামী বছরে ঘাটতি বাজেটের পরিমাণ হচ্ছে ৯৭ হাজার ৮৫৩ কোটি টাকা (অনুদান ছাড়া)। তবে বিদেশি অনুদান পাওয়া গেলে ঘাটতি বাজেটের পরিমাণ দাঁড়াবে ৯২ হাজার ৩৩৭ কোটি টাকা। এই ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া হবে ৩৮ হাজার ৯৩৮ কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্র খাত থেকে নেওয়া হবে ১৯ হাজার ৬১০ কোটি টাকা এবং অন্যান্য খাত থেকে নেওয়া হবে ৩ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া বৈদেশিক উৎসের মধ্যে বিদেশি ঋণের পরিমাণ ৩৮ হাজার ৯৪৭ কোটি টাকা। তবে এর মধ্যে আগের নেওয়া বিদেশি ঋণ পরিশোধের পরিমাণ হচ্ছে ৮ হাজার ১১৫ কোটি টাকা।

   

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩০ জুন ২০১৬/এম এ রহমান/নৃপেন/সাইফ