অর্থনীতি

হানজিনের কনটেইনারের বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিন

শাহেদ হোসেন : দেউলিয়ার মুখে থাকা দক্ষিণ কোরিয়ার শিপিং কোম্পানি হানজিনের লোগোযুক্ত কনটেইনারে আমদানি করা পণ্য চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ থেকে নামাতে দিচ্ছে না বন্দর কর্তৃপক্ষ।

 

এসব কনটেইনারের বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তহীনতার কারণে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা। বিষয়টি ব্যবসায়ীদের জন্য যেমন উদ্বেগজনক, তেমনি সামগ্রিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।

 

ব্যাংকের পাওনা পরিশোধ করতে না পেরে গত ৩১ আগস্ট দক্ষিণ কোরিয়ার আদালতে দেউলিয়াত্ব সুরক্ষা আবেদন করে হানজিন শিপিং কোম্পানি। বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম এই কনটেইনার ক্যারিয়ার কোম্পানির পাঁচ লাখেরও বেশি কনটেইনার রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই এ ঘটনার পর বিশ্বজুড়ে সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহনে বিপর্যয় শুরু হয়। গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে  প্রতিষ্ঠানটির কনটেইনার ওঠানো-নামানো বন্ধ করে দেয় বিশ্বের বিভিন্ন বন্দর কর্তৃপক্ষ।

 

গত ২০ অক্টোবর চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এক সার্কুলারে হানজিন লোগোযুক্ত কনটেইনার জাহাজ থেকে ওঠানো ও নামানোর বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এর কারণ হিসেবে হানজিনের দেউলিয়াত্ব ও প্রতিষ্ঠানটি থেকে বন্দরের বকেয়া পাওনার কথা বলা হয়েছে। কর্তৃপক্ষের এ সিদ্ধান্তের কারণে তিনটি জাহাজ কনটেইনারভর্তি পণ্য নিয়ে ফেরত গেছে। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও শ্রীলঙ্কার তিনটি বন্দরে বাংলাদেশি আমদানিকারকদের ৪ হাজার ৪০৮ কনটেইনারভর্তি পণ্য আটকা পড়ে আছে। এসব কনটেইনারে পোশাকশিল্প, ইস্পাত , ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক্স এবং ওষুধ কারখানাসহ বিভিন্ন শিল্প কারখানার কাঁচামাল, মূলধনী যন্ত্রপাতি ও বাণিজ্যিক পণ্য রয়েছে।

 

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, হানজিনের কনটেইনারে এখন কেউ পণ্য পরিবহন করতে চাইছে না। তাই বাধ্য হয়ে এই কনটেইনার থেকে পণ্য নিয়ে আরেক প্রতিষ্ঠানের কনটেইনারে বোঝাই করে আমদানি-রপ্তানি করতে হচ্ছে। এতে একটি কনটেইনার পণ্যে দুই থেকে আড়াই হাজার ডলার বাড়তি খরচ হচ্ছে। অনিবার্যভাবে এর প্রভাব পড়বে পণ্যমূল্যের ওপর।

 

দক্ষিণ কোরিয় সরকারের প্রচেষ্টায় কয়েকটি দেশে গত মাসের শেষ নাগাদ হানজিনের কনটেইনার আনলোড করা হয়। তবে পরিতাপের বিষয়,  প্রায় দুই মাস পেরিয়ে যাওয়ার পরও বাংলাদেশের বন্দর কর্তৃপক্ষ  গত সপ্তাহ পর্যন্ত হানজিনের কনটেইনারের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছায়নি। গত সপ্তাহে বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, তারা এ বিষয়ে কমিটি গঠন করেছে এবং শিগিগিরই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানো হবে। তবে সেটা কবে শেষ হবে তা অজানাই রয়ে গেছে।

 

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে আমদানি রপ্তানি-বাণিজ্যের অবদান কতটুকু সেই পরিসংখ্যান এই স্বল্প পরিসরে দেওয়ার সুযোগ নেই। তবে প্রতি মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের যে হিসাব দেখায় তা দেখেই এ অবদান কিঞ্চিত পরিমাপ করা সম্ভব। তাই বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের প্রশ্ন বাংলাদেশের পণ্যবাহী হানজিনের কনটেইনারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত না হওয়ায় ব্যবসায়ীদের যে বিরাট অংকের লোকসান গুণতে হচ্ছে তার দায়ভার নেবে কে?  যেহেতু হানজিন দেউলিয়াত্বের আবেদন করেছে, সেক্ষেত্রে তাদের এ ব্যাপারে হয়তো কিছুই করার নেই। এ ক্ষেত্রে কেবল বন্দর কর্তৃপক্ষেরই ব্যবসায়ীদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। বন্দর কর্তৃপক্ষের উচিৎ সাময়িক লোকসান বিবেচনায় নিয়ে ব্যবসায়ীদের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে হানজিনের বিষয়ে সন্তোষজনক সুরাহায় পৌঁছানো।

 

বর্তমান সরকার ব্যবসাবান্ধব সরকার। সে হিসেবে ব্যবসায়ীদের স্বার্থকে বিবেচনায় রেখে সরকারের পক্ষ থেকে হানজিনের কনটেইনার বন্দরে নামানোর বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে, আমরা সেই আশা করি।

   

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩০ অক্টোবর ২০১৬/শাহেদ/শাহনেওয়াজ