অর্থনীতি

অতিরিক্ত ব্যয় সমন্বয় করতে চায় না বিআইএ

বিশেষ প্রতিবেদক : বেসরকারি ইন্সুরেন্স কোম্পানিগুলো তাদের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের ১ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা সমন্বয় করতে চায় না।

 

বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন (বিআইএ) এর দাবি, আগামী ২০১৭ সাল থেকে ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের সরকারি নির্দেশনা মেনে চলবে তারা। তবে অতীতে যা হয়েছে সেসব থেকে ছাড় দিতে হবে। এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে যেন কোনো পদক্ষেপ না নেওয়া হয় বলে দাবি জানিয়েছে তারা।

 

রোববার বিকেলে অর্থ মন্ত্রণালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিআইএ ও বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। এ সময় বিআইএ ৮ দফা দাবি তুলে ধরে। বৈঠকে আইডিআরের   চেয়ারম্যান শেফাক আহমেদ, বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শেখ কবির হোসেনসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।

 

সূত্র জানায়, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ অনুসন্ধান  অনুযায়ী ২০০৯ থেকে ২০১৫ সালের বিভিন্ন সময়ে ১৭টি জীবন বীমা কোম্পানির অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয় করেছে ১ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা। এ অর্থের প্রায় ৯০ শতাংশের মালিক গ্রাহকরা।

 

আইন অনুযায়ী এ অর্থ কোনোমতেই খরচ করতে পারে না কোম্পানিগুলো। অতিরিক্ত এই অর্থ ব্যয়ের কারণে পলিসিহোল্ডাররা প্রাপ্য বোনাস থেকে বঞ্চিত হয়েছে। তাই পরবর্তী পাঁচ বছরে এ ব্যায় কোম্পানিগুলোকে সমন্বয় করার নির্দেশ দেয় আইডিআর।

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, বেশকিছু দাবি নিয়ে বিআইএর একটি প্রতিনিধিদল আমার সঙ্গে বৈঠক করেছে। তারা বেশকিছু লিখিত প্রস্তাব দিয়েছে। সেগুলো দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তাদের দাবিগুলোর আইনগত দিকগুলো যাচাই না করে কোনো  সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব নয়।

 

বৈঠক শেষে শেখ কবির হোসেন বলেন, সম্প্রতি পূর্ববর্তী বছরগুলোর অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের অর্থ পরবর্তী বছরগুলোতে সমন্বয় করার একটি নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। যা বাস্তব সম্মত এবং আইন সম্মত নয়। এই নির্দেশনা বাস্তবায়নে নানা জটিলতার সৃষ্টি হবে। তাই তাদের পক্ষ থেকে আগামী ২০১৭ সাল থেকে ব্যয়ের বিষয়ে নির্দেশনা মেনে চলার অঙ্গীকার করার পাশাপাশি বিগত সময়ে যা হয়েছে তা শিথিল দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ করা হয়েছে।

 

অর্থমন্ত্রীও তাদের এ প্রস্তাব বিবেচনা করে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানান তিনি। আর তাদের এ অনুরোধে আইডিআরও সম্মত হয়েছে বলেও জানান শেখ কবির হোসেন।

 

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা জানান, জীবন বীমা কোম্পানির ব্যয়সহ যাবতীয় এজেন্ডা অনুমোদন হয় পরিচালনা পর্ষদ থেকে। শেয়ারহোল্ডারদের পক্ষ থেকে এসব বিষয়ে অনুমোদন দেন কোম্পানির পরিচালকরা।

 

এদিকে অভিযুক্ত কোম্পানিগুলো বলছে, বর্তমান পরিস্থিতির জন্য ছয় দশকের পুরনো আইনই দায়ী। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) ও কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ তথা শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদন নিয়েই ব্যবস্থাপনা-সংক্রান্ত এসব ব্যয় করা হয়েছে।

 

জানা গেছে, ২০১০ সালে নতুন বীমা আইন পাসের পর ২০১১ সালে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) গঠিত হয়। তবে জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর ব্যবস্থাপনা ব্যয়-সংক্রান্ত কোনো সুনির্দিষ্ট ও যুগোপযোগী নীতিমালা এখনো প্রণয়ন হয়নি।

 

এ অবস্থায় ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের ক্ষেত্রে ১৯৫৮ সালের বিধি মানতে হচ্ছে কোম্পানিগুলোকে। ওই বিধি অনুযায়ী, একটি জীবন বীমা কোম্পানি প্রথম বছর প্রিমিয়াম আয়ের ৯০ শতাংশ ও নবায়ন প্রিমিয়াম আয়ের ১৫ শতাংশ পর্যন্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয় করতে পারে। তবে ছয় দশক আগের এ আইনের আওতায় বর্তমান সময়ে ব্যবসায়ের প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহ করা কঠিন বলে অভিযোগ খাত সংশ্লিষ্টদের।

 

অন্যদিকে আইডিআরএ বলছে, জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর অতিরিক্ত এ ব্যয়কে অবৈধ বা আত্মসাৎ বলা যাচ্ছে না। আমরা বলছি, কোম্পানিগুলো অতিরিক্ত ব্যয় করেছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় অতিরিক্ত ব্যয়ের গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা থাকলে আইনানুযায়ী নিয়ন্ত্রক সংস্থা তা মার্জনাও করতে পারে। এ ছাড়া এ পরিস্থিতির জন্য কোম্পানির কর্মকর্তারা এককভাবে দায়ী নন। কারণ কোম্পানির যাবতীয় ব্যয় নির্ধারণ হয় পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদনক্রমে।

   

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৭ নভেম্বর ২০১৬/হাসনাত/সাইফ