অর্থনীতি

‘শিগগিরই সরকারি কোম্পানির শেয়ার ছাড়া হবে’

বিশেষ প্রতিবেদক : শিগগিরই ২৬টি সরকারি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বাজারে ছাড়া হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

 

তিনি বলেন, ‘পুঁজিবাজার সংস্কারের সময় সরকারি কোম্পানির শেয়ার বাজারে ছাড়া সম্ভব হয়নি। তবে সম্প্রতি আমরা একটা বৈঠক করেছি। তবে শিগগিরই কয়েকটি কোম্পানির শেয়ার বাজারে ছাড়া হবে।’

 

বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) নবনির্বাচিত প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।

 

ডিবিএর সভাপতি আহমেদ রশিদ লালীর নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। এসময় ডিবিএর সহসভাপতি মোশতাক আহমেদ সাদেক, খুজিস্তা নূর-ই-নেহরিনসহ অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

 

বৈঠকে ডিবিএর সভাপতি আহমেদ রশিদ লালী সংগঠনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন। এসময় তিনি শেয়ারবাজার চাঙা করতে বন্ডের মাধ্যমে ছয় হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের দাবি জানান।

 

তিনি বলেন, মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোকে ৫ থেকে ৬ শতাংশ সুদে ঋণ দেওয়া হলে তা শেয়ারবাজার গতিশীল করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। একই সঙ্গে সংগঠনের পক্ষ থেকে আয়কর রেয়াতের মেয়াদ আরো দুই বছর বাড়ানোর দাবি জানানো হয়। এর পাশাপাশি শেয়ারবাজার উন্নয়নে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) দেওয়া সহায়তা বাংলাদেশে স্টক এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) মাধ্যমে বরাদ্দ দেওয়ার দাবি জানানো হয়।

 

উল্লেখ্য, এর আগেও শেয়ারবাজারে অর্থের প্রবাহ বাড়ানোর নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। সরকারের নির্দেশনায় বাংলাদেশ ব্যাংকও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে বিনিয়োগের সুবিধা বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু আস্থাহীনতার কারণে কোনো উদ্যোগই সফল হয়নি। কখনো কখনো চাঙা থাকলেও তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির ঘটনায় বড় ধরনের কোনো শাস্তির ব্যবস্থা না হওয়ায় আস্থা ফেরেনি বাজারে। এ অবস্থায় নতুন করে অর্থ চাইল শেয়ারবাজার ব্রোকারদের সংগঠন ডিএবি।

 

এছাড়াও সরকারি কোম্পানিগুলোর শেয়ার বাজারে ছাড়া নিয়েও নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। এ বিষযে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ছিল। অর্থমন্ত্রী বেশ ক’বার সময় বেঁধে দিয়ে শেয়ার অফলোড করার নির্দেশনা দিয়েছিলেন। সে নির্দেশনাও এখনো কার্যকর হয়নি। আজকের বৈঠকে অর্থমন্ত্রী আবার জানালেন খুব শিগগির সরকারি কোম্পানির শেয়ার অফলোড করা হবে।

 

গত সেপ্টেম্বরে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে বৈঠক করে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর সমিতি বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকারস অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ)। সে সময় সংগঠনটির পক্ষ থেকে শেয়ারবাজারের উন্নয়নের জন্য একই ধরনের চারটি প্রস্তাব দেয়। প্রস্তাবের মধ্যে ছিল, ছয় হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠন, প্রতিটি ব্যাংককে অতিরিক্ত ২০০ কোটি টাকা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করার ক্ষমতা দেওয়া, পাঁচ থেকে ছয় হাজার কোটি টাকার বন্ড ছাড়া এবং মূল কোম্পানিকে সহযোগী কোম্পানির দায় বহনের সুযোগ দেওয়া। আজ প্রায় একই ধরনের প্রস্তাব দিয়েছে ডিবিএ।

 

বৈঠকে অর্থমন্ত্রী বলেন, সরকারি শেয়ার ছাড়ার বিষয়ে অনেক দিন ধরে চেষ্টা করা হচ্ছে। নানা জটিলতার কারণে শেয়ার ছাড়া সম্ভব হয়নি। তবে সম্প্রতি এক বৈঠকে কয়েকটি সরকারি কোম্পানির শেয়ার ছাড়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ বিষয়ে একটি সারসংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।

 

তিনি বলেন, ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন হওয়ার পর শেয়ারবাজার অনেকটা স্থিতিশীল হয়ে আসছে। বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে যা পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন হলে শেয়ারবাজার আরো ভাল হবে এবং বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরে আসবে।

 

এডিবি’র তহবিল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একমাত্র এডিবি শেয়ারবাজার উন্নয়নে নানা ধরনের সহায়তা দিয়ে থাকে। বিএসইসি’র মাধ্যমে এ তহবিল ব্যবহার করা হয়। ডিএবি শেয়ারবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনা এবং সংশ্লিষ্টদের দক্ষতা বাড়ানোর যে প্রস্তাব দিয়েছে সেটি বিবেচনা করা হবে। শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের সচেতনতা এবং দক্ষতা বাড়ানোর প্রয়োজন রয়েছে।

 

ডিএবি’র দাবি প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, তাদের দাবিগুলোর বিষয়ে এখনই কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়া সম্ভব নয়। তাদের কাছ থেকে লিখিত প্রস্তাব পেলে সেগুলো নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

   

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৪ ডিসেম্বর ২০১৬/হাসনাত/মুশফিক