অর্থনীতি

বিনা শর্তে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ চায় বিএমবিএ

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক : শেয়ারবাজারকে গতিশীল করতে বিনা শর্তে পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত অর্থ বা কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ চায় বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ)। আসন্ন ২০১৭-১৮ বাজেট উপলক্ষে সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) দেওয়া এক চিঠিতে মোট ছয়টি প্রস্তাব দেয় বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ)। প্রস্তাবগুলো হলো- শেয়ারবাজারে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ, তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর ও ভ্যাট সুবিধা, ইন্টারমিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানগুলোর করপোরেট কর হ্রাস, ঋণাত্মক ইকুইটির মার্জিন হিসাবের বিপরীতে ধার্য অনাদায়ী সুদ আয়ে কর মওকুফ ও বিনিয়োগকারীর মূলধনী মুনাফার ওপর কর হ্রাস। সংগঠনের সভাপতি মো. ছায়েদুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক খায়রুল বাশার আবু তাহের মোহাম্মদ সই করা পত্রে সংগঠনটি বলেছে, ২০১০ সালের বিপর্যয়ের পর টানা একটি নিম্নমুখী প্রবণতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল দেশের শেয়ারবাজার। অল্প সময়ের ব্যবধানে বেশকিছু রেগুলেটরি সীমাবদ্ধতা চলে আসায় বাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হয়, যার প্রভাবে অন্য বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাস ও অংশগ্রহণও কমে যায়। দীর্ঘ মন্দার পর সাম্প্রতিক সময় আমরা পুঁজিবাজারে কিছু গতি দেখতে পেয়েছি। তা ধরে রেখে পুঁজিবাজারকে শিল্পায়ন, অবকাঠামো, কর্মসংস্থান তথা অর্থনৈতিক উন্নয়নে কাজে লাগাতে হবে। তাই আসন্ন ২০১৭-১৮ বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাছে আমরা প্রস্তাবগুলো বিবেচনার জন্য অনুরোধ  করছি। প্রস্তাবগুলো হলো- বিনা শর্তে পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ। আমাদের অর্থনীতিতে অনেক অপ্রদর্শিত অর্থ আছে, যেগুলো করের আওতাবহির্ভূত। অপ্রদর্শিত হওয়ায় মালিকরা এ অর্থ কোনো উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ না করে বিভিন্ন অনুৎপাদনশীল বা আইনবহির্ভূত কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করছেন। কোনো নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছ থেকে কোনো প্রশ্ন উত্থাপিত না হলে তারা যদি এ অর্থ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেন, বিপুল অংকের এ টাকা অর্থনীতির মূল ধারায় ফিরে আসবে, যা উৎপাদনশীল খাতে কাজে লাগানো সম্ভব। বিষয়টি একদিকে অর্থনীতি স্থিতিশীল করতে ভূমিকা রাখবে, অন্যদিকে সরকারের জন্যও রাজস্ব বাড়াবে। ঋণাত্মক ইকুইটির বিওতে মার্জিন ঋণের বিপরীতে ব্রোকার-মার্চেন্ট ব্যাংকের অনাদায়ী সুদের ওপর কর মওকুফ। চিঠিতে বিএমবিএ বলে, ঋণাত্মক ইকুইটির বিও হিসাবের বিপরীতে অনেক ব্রোকার-মার্চেন্ট ব্যাংকের পাওনা সুদ অনাদায়ী রয়েছে। এগুলো হিসাবভুক্ত করা হলেও পরিস্থিতির কারণে তা আদায় করা যাচ্ছে না। কিন্তু কর কর্তৃপক্ষ সেসব পাওনাকে আয় ধরে তার ওপর কর ধার্য করছে। এছাড়া সরকারের প্রণোদনা স্কিমের আওতায় অনেক ব্রোকার-মার্চেন্ট ব্যাংক সুদ বাবদ সেসব নিট পাওনায় ছাড় দিয়েছে। সেগুলোকেও আয় ধরে তার ওপর করারোপ করা হচ্ছে, যা প্রতিকূল সময়ে ইন্টারমিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর আর্থিক চাপ আরো বাড়াচ্ছে। তাই এ করারোপ থেকে অব্যাহতি দেওয়া দরকার। তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর করপোরেট করের বিষয়ে প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বর্তমানে তালিকাভুক্তির সুবাদে শেয়ারবাজারের কোম্পানিগুলো ১০ শতাংশ কর সুবিধা পায়। বাজারে আরো ভালো কোম্পানি আনতে তালিকাভুক্ত ও তালিকাবহির্ভূত কোম্পানির করপোরেট করের ব্যবধান অন্তত ১৫ শতাংশ হওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি। কারণ তালিকাভুক্ত কোম্পানির হিসাব তুলনামূলক স্বচ্ছ এবং তাদের কাছ থেকে রাজস্ব আদায় সরকারের জন্য তুলনামূলক সহজ। কর সুবিধা বাড়ালে বিনিয়োগকারীরা আরো উপকৃত হবেন। তৃতীয় প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বর্তমানে তালিকাভুক্ত ও তালিকাবহির্ভূত কোম্পানিকে একই হারে ভ্যাট দিতে হচ্ছে। আমরা মনে করি, হিসাবের স্বচ্ছতার কারণে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে সরকার প্রকৃত অর্থে তুলনামূলক বেশি হারে কর ও ভ্যাট পায়। এসব কোম্পানির জন্য ৪০ শতাংশ ভ্যাট মওকুফ তালিকাভুক্তি উৎসাহিত করে শেষ পর্যন্ত বিনিয়োগকারীদের জন্যও যেমন সুবিধা বয়ে আনবে, তেমনি সরকারের জন্যও রাজস্ব আহরণ বাড়াবে। সব ইন্টারমিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানের জন্য একই হারে করপোরেট করের প্রস্তাব করে বিএমবিএর চিঠিতে বলা হয়, বর্তমানে শুধু সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানিগুলো সর্বনিম্ন ১৫ শতাংশ হারে করপোরেট করের সুবিধা ভোগ করছে। অন্যদিকে মার্চেন্ট ব্যাংককে ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ ও ব্রোকারেজ হাউজগুলোকে ৩৫ শতাংশ হারে করপোরেট কর দিতে হয়। ব্যবসায় সুযোগের সমতা নিশ্চিত করতে ব্রোকারেজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর করহারও ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনা উচিত। সর্বশেষ দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের মূলধনী মুনাফার ওপর আরোপিত কর ১০ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা উচিত বলেও মনে করে বিএমবিএ। রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৮ মার্চ ২০১৭/এম এ রহমান/মুশফিক