অর্থনীতি

‘সঞ্চয়পত্রে সুদের হার কমালে তা হবে ইতিবাচক’

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক : সঞ্চয়পত্রে সুদের হার কমালে কমে যাবে ব্যাংক ঋণের সুদের হার। দেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে পড়বে ইতিবাচক প্রভাব। আর শেয়ারবাজারে বাড়তে পারে বিনিয়োগ। এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সঞ্চয়পত্রে সুদের হার কমানোর বিষয়টিকে তারা খুবই ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। আসন্ন বাজেটে সঞ্চয়পত্রে সুদের হার কমানো হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এর আগে ২০১৫ সালে বাজেটে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী। এবার আরেক দফা কমতে যাচ্ছে সুদের হার। সম্প্রতি ঢাকা চেম্বারের নেতাদের দাবির পরিপেক্ষিতে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের এখানে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার আসলেই বেশি। সাধারণত ব্যাংক আমানতের সুদের হারের চেয়ে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১/২ শতাংশ বেশি হয়ে থাকে। বর্তমানে এই ব্যবধান ৪ শতাংশের বেশি।’ মন্ত্রী আরো বলেছিলেন, ‘এটা চলতে থাকলে এ খাতে বিনিয়োগ আরও বেড়ে যাবে। সরকারের ভবিষ্যত ঋণের বোঝা বেড়ে যাবে। সে কারণেই আমরা এটাকে কমানোর (রিভিউ) সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছি।’ প্রসঙ্গত, বর্তমানে ব্যাংকগুলোতে আমানতের সুদের হার ৪ থেকে ৬ শতাংশের মধ্যে। অন্যদিকে বিভিন্ন সঞ্চয় প্রকল্পের সুদের হার ১১ থেকে ১২ শতাংশের মতো। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিষয়টি অর্থনীতি এবং পুঁজিবাজারের জন্য খুবই ইতিবাচক। এর ফলে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ না হয়ে সেটা চলে আসবে পুঁজিবাজারে। ব্যাংকের সুদের হার কমবে। বাড়বে বেসরকারি বিনিয়োগ। সাধারণত সঞ্চয়পত্রের সুদের হার বেশি হলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কম সুদে আমানত সংগ্রহ করতে পারে না। কারণ, সঞ্চয়পত্রের সুদের চেয়ে ব্যাংকের আমানতের সুদ কম হলে তখন ব্যাংকে টাকা জমা না রেখে মানুষ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করেন। এ কথা বিবেচনায় নিয়ে ব্যাংকে আমানত টানতে বেশি সুদ ঘোষণা করে ব্যাংকগুলো। আর আমানতের সুদের হার বেশি হলে স্বাভাবিকভাবে ঋণের সুদের হারও বেশি হয়। ব্যাংক ঋণের সুদহার বেশি হলে দেশে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বিনিয়োগ হয় না। অন্যান্য বিনিয়োগ ক্ষেত্রের চেয়ে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার বেশি হলে সঞ্চয়পত্রের দিকে মানুষ ঝোঁকে। কারণ, এখানে বিনিয়োগে কোন ঝুঁকি নেই। অন্যদিকে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সঞ্চয়পত্রের তুলনায় লাভজনক হলেও তা  ঝুঁকিপূর্ণ। তাই ঝুঁকি এড়াতে তখন সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করে। সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ বেড়ে গেলে স্বাভাবিক নিয়মেই শেয়ারবাজারে মন্দাভাব দেখা দেয়। অন্যদিকে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ বেড়ে গেলে সরকারের ভবিষ্যৎঋণের বোঝাও বেড়ে যায়। ব্যাংক ঋণের সুদহার কমিয়ে দেশে বিনিয়োগ বাড়ানো এবং শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ বাড়ানোর স্বার্থে সঞ্চয়পত্রে সুদের হার কমানো দরকার। তবে যতটুকু কমানো হয়েছে তা যথেষ্ট নয় বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানোর ইঙ্গিত অবশ্যই ইতিবাচক। এটি বিনিয়োগে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে।’ এদিকে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানোর সম্ভাবনায় সন্তোষ প্রকাশ করেছে এবং সরকারকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে। সংগঠনটি বলছে, সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমালে ব্যাংকের সুদের হারও কমে আসবে। প্রসঙ্গত, শিল্পায়ন ও বিনিয়োগের স্বার্থে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানোর মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন যাবৎ ব্যাংক সুদের স্প্রেড এবং ব্যাংক সুদের হার হ্রাসের জন্য দাবি জানিয়ে আসছেন। রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৭ মে ২০১৭/আশরাফ/শাহনেওয়াজ