অর্থনীতি

আবগারি শুল্ক বাড়ানোয় অর্থ পাচারের শঙ্কা

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক : ব্যাংক লেনদেনে আবগারি শুল্ক বাড়ানোয় অর্থ পাচার হয়ে যাওয়ার শঙ্কা আছে। তাই ব্যাংক খাত থেকে আবগারি শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের প্রস্তাব দিয়েছেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন। শনিবার রাজধানীর এফবিসিসিআই ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ প্রস্তাব করেন তিনি। এফবিসিসিআইর সদস্যভুক্ত চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশনের মতামতের আলোকে বাজেট পরবর্তী প্রস্তাবনা উপস্থাপন করতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, মূলধন গঠন, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান তথা সামগ্রিক ব্যবসায়িক কার্যক্রমের জন্য গ্রাহকরা ব্যাংক লেনদেন করে থাকেন। বাজেটে ব্যাংকে অর্থ জমা রাখার ক্ষেত্রে আবগারি শুল্ক বিভিন্ন হারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। এতে আমানতকারী আমানত রাখতে নিরুৎসাহিত হবে। এ ছাড়া অর্থ ব্যাংকিং চ্যানেলে না গিয়ে ইনফরমাল চ্যানেলে চলে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। তা ছাড়া স্বাস্থ্যহানিকর পণ্য ছাড়া অন্য কোনো খাতে আবগারি শুল্ক আরোপ করা সমীচীন নয়। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ অন্যান্য ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নের বিষয়ে বাজেটে যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হলে তা নিঃসন্দেহে বিনিয়োগ ও শিল্পায়ন এবং কর্মসংস্থান প্রক্রিয়াকে গতিশীল করবে। তবে এসব অবকাঠামো উন্নয়নের ক্ষেত্রে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ বা পিপিপি ব্যবস্থা কার্যকরের উদ্যোগ নিতে আমরা সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছি। তিনি আরো বলেন, বাজেটে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত রেফ্রিজারেটর ও ফ্রিজার, এয়ারকন্ডিশনার, এলপিজি সিলিন্ডার প্রভৃতি পণ্যসহ ১০৪৩টি এইচএস কোডভূক্ত আইটেমকে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। চাল, ডাল, মুড়ি, চিড়া, চিনি ও আখের গুড়, মাছ, মাংস, শাক-সবজি, তরল দুধ, প্রাকৃতিক মধু, বার্লি, ভুট্টা, গম ও ভুট্টার তৈরি সুজি, লবণ প্রভৃতিসহ ৫৪৯টি মৌলিক খাদ্যপণ্য, পাম ও সয়াবিন অয়েল, ৯৩ ধরনের জীবন রক্ষাকারী ওষুধ এবং গণপরিবহন সেবা, চিকিৎসা সেবা, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রভৃতিকে ভ্যাটের আওতামুক্ত রাখা হয়েছে। এতে উল্লিখিত নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য ও সেবাসমূহের মূল্য হ্রাস পাবে বলে আশা করা যাচ্ছে। তবে ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষাব্যবস্থা, পণ্য পরিবহন, অভ্যন্তরীণ কুরিয়ার সেবা এবং আউট সোর্সিং পদ্ধতিতে জনবল সরবরাহ প্রভৃতি ভ্যাটের আওতামুক্ত রাখার দাবি জানাচ্ছি। ও সময় তিনি ভ্যাট আইনে বিশেষ সংশোধনী প্রস্তাবগুলো পুর্নবিবেচনায় নেওয়ারও প্রস্তাব করেন। প্রস্তাবগুলো হলো- কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অর্থনৈতিক কার্যক্রমের বার্ষিক টার্নওভার সীমা ৩৬ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ক্ষুদ্র, গ্রামীণ উদ্যোগ, কুটির শিল্প ইত্যাদি প্রান্তিক খাতের বিকাশে এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বা দোকানদারদের হিসাব সংরক্ষণের সক্ষমতার সীমাবদ্ধতা বিবেচনা করে অব্যাহতির এ সীমা আরো বৃদ্ধি করার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা। টার্নওভার করের সীমা ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে টার্নওভার ট্যাক্স ৩ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ৪ শতাংশ করা হয়েছে। বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে টার্নওভার ট্যাক্স ৩ শতাংশ অপরিবর্তিত রেখে টার্নওভার করের সীমা ৫ কোটি টাকা বা যৌক্তিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া। মূসক আইনের ৩১ ধারায় বর্ণিত ৩ শতাংশ অগ্রিম কর সম্পর্কিত বিধান বিলুপ্তি করা। টার্নওভারের ক্ষেত্রে তালিকাভূক্তির সীমা এবং নিবন্ধন সীমা নির্ধারণের প্রক্রিয়া কী হবে, সে বিষয়ে একটি নীতিমালা থাকা দরকার। যাতে করে করদাতাদের সাথে মূসক কর্মকর্তাদের মধ্যে কোনো ধরনের মতবিরোধ তৈরি না হয়। অর্থাৎ ব্যক্তি আয়করের মতো মূসকেও স্বনির্ধারণী পদ্ধতির ব্যবস্থা থাকা। এফবিসিসিআইর সভাপতি বলেন, যদিও আমরা হ্রাসকৃত হারে বিভিন্ন স্তরে মূসক হার নির্ধারণ করার প্রস্তাব করেছিলাম। কিন্তু বাজেটে হ্রাসকৃত হারে ভ্যাটের পরিবর্তে সিঙ্গেল রেট ১৫ শতাংশ ভ্যাট নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে দেশের শিল্প খাত, বিশেষ করে এসএমই ও প্রান্তিক খাত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যে সমস্ত ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক ব্যবসায়ী হিসাবপত্র সঠিকভাবে না রাখতে পারায় রেয়াত নিতে সক্ষম নন, তাদের ওপর করের বোঝা বেড়ে যাবে, যার প্রভাব ভোক্তার ওপর পড়বে। এতে মূল্যস্ফীতি বাড়বে। বর্তমান সরকার দীর্ঘদিন ধরে মূল্যস্ফীতিকে ধরে রেখেছে। আগামী দিনেও যাতে এ মূল্যস্ফীতিতে স্থিতিশীলতা ধরে রাখা যায় সেজন্য জোরালো মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য সরকারকে অনুরোধ জানাচ্ছি। সে সাথে হ্রাসকৃত হারে বিভিন্ন স্তরে মূসক হার পুনর্বিবেচনার প্রস্তাব করছি। নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নে স্বাধীন সংস্থা কর্তৃক ইমপ্যাক্ট অ্যাসেসমেন্টের কথা আমরা বলেছিলাম। কিন্তু এ বিষয়ে এখনো কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। স্বাধীন সংস্থা কর্তৃক ইমপ্যাক্ট অ্যাসেসমেন্টের জন্য আবারও আহ্বান জানাচ্ছি। সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন- বিকেএমইএর সভাপতি সেলিম ওসমান, বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আবুল কাশেম খান, চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম প্রমুখ। রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩ জুন ২০১৭/নাসির/রফিক