অর্থনীতি

‘নতুন প্রক্রিয়ায় আসবে ভ্যাট আইন’

অর্থনৈতিক প্র‌তি‌বেদক : অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এন‌বিআর) চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান বলেছেন, আমরা নতুন প্রক্রিয়ায় কাজ শুরু করেছি। নতুন ভ্যাট আইনের বিভিন্ন প্রভাব নিয়ে এফবিসিসিআই প্রস্তাব দিয়েছে। এ বিষয়ে আমরা বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে এক ফোরামে কাজ করে সব জটিলতা দূর করতে চাই। রোববার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশনে জাতীয় অর্থনীতিতে মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইনের অভিঘাত বিষয়ে গবেষণা পরিচালনা বিষয়ে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ভ্যাট আইন বাস্তবায়নে চারটি বিষয় রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- ব্যবসায়ীদের সহায়তা, দেশীয় শিল্পের সুরক্ষা করা, আন্তর্জাতিক বাজারে নিজেদের অবস্থান টিকিয়ে রাখা ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। আমরা দেশীয় গবেষণা সংস্থা নিয়ে একটি কনসোর্টিয়াম অব রিসার্চ এনটিটিসিজ তৈরি করতে চাই। সিপিডি, পিআরআই, বিআইডিএস, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, বুয়েট, বেসিস ওই কনসোর্টিয়ামে থাকতে পারে। তারা একটি গবেষণা করতে পারে। এনবিআর, এফবিসিসিআই, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বিডাসহ সব সংস্থা নিয়ে একটি রিভিউ গ্রুপ করতে পারি। একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রিভিউ করে এ গবেষণা শেষ করতে পারি। পরে তা একটি পলিটিক্যাল লেবেলে উপস্থাপন করতে পারি। ভ্যাট অনলাইন প্রকল্প এ গবেষণায় সব ধরনের সহায়তা দেবে। তিনি আরো বলেন, ভ্যাট আইন বাস্তবায়নে যেসব চ্যালেঞ্জ ছিল সেগুলোকে অপরচুনিটি হিসেবে দেখছি। সমস্যাগুলোকে ধরে আমরা এ আইনের আরো গভীরে যেতে চাই। এফবিসিসিআই আমাদের যে প্রস্তাব দিয়েছে এ বিষয়ে এনবিআর ও ব্যবসায়ীরা একসঙ্গে কাজ করতে চাই। নজিবুর রহমান বলেন, ২০১৫ সালে এফবিসিআিইর সঙ্গে এনবিআরের তিনটি (ট্যাক্স, ভ্যাট ও কাস্টমস) যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ হয়। এটি আবারও সক্রিয় করতে হবে। এখন থেকে যা হবে সব যৌথভাবে হবে। এককভাবে আমরা কিছু করব না। আমরা ব্যবসায়ী সমাজকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করব। আমরা আয়কর আইন নিয়ে কাজ শুরু করেছি। এটা নিয়েও আমরা যৌথ কাজ করতে চাই। এ আইন নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসতে চাই। কোথায় সমস্যা আছে তা সমাধান করা হবে। তিনি বলেন, কাস্টমস আইনের চূড়ান্ত খসড়া নিয়েও এফবিসিসিআইয়ের সঙ্গে আমরা আলোচনা করব। ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইনডো অথোরাইজ ইকোনোমিক অপারেটর, গ্রিন চ্যালেন, পোস্ট জিআরএম অডিট নিয়ে যেসব কাজ করছি এসব বিষয়ে নিয়ে আমরা দুই পক্ষ একসঙ্গে কাজ করতে চাই। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি  শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, ভ্যাট আইন নিয়ে আমরা অনেক আলোচনা করেছি। কিন্তু তা ফলপ্রসূ হয়নি। আলোচনা ফলপ্রসূ হলে বাস্তবায়‌নে সমস্যা হতো না। ভ্যাটের টাকার উদ্দেশ্য যদি মহৎ হয় তাহলে আমাদের দিতে সমস্যা নেই। নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করতে হলে ব্যবসায়ী ও সরকারের মধ্যে আস্থার জায়গা তৈরি করতে হবে। আমাদের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বজায় রাখতে হবে।  পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর ব‌লেন, নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের ক্ষে‌ত্রে যেসব সমস্যা র‌য়ে‌ছে তা আলোচনার মাধ্য‌মে সমাধান করতে হ‌বে। বিভিন্ন মহল থে‌কে ভ্যাট হার ১২ শতাংশ করার দা‌বি আস‌ছে। এটি কম‌লে ২৪ হাজার কো‌টি টাকা কর আহর‌ণ কম‌বে। এ অর্থ কোন জায়গা থে‌কে আস‌বে তা নির্ধারণ কর‌তে হ‌বে। কারণ, আমা‌দের রাজস্ব বাড়া‌তে হ‌বে। এ সময় কর ব্যবস্থার আধুনিকায়‌নের ওপর জোর দি‌য়ে তিনি ব‌লেন, কর ব্যবস্থার আধুনিকায়‌ন হ‌লে হয়রা‌নি কমবে। একই স‌ঙ্গে স্বচ্ছতা ও জবাব‌দিহিতা বাড়‌বে। তাই হয়রা‌নি ও দু‌র্নী‌তি রো‌ধে কর ব্যবস্থা অটো‌মেশ‌নের বিকল্প নেই। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম ব‌লেন, নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়‌নের জন্য যেসব বাধা আছে, আগে সে বিষ‌য়ের ওপর গ‌বেষণা কর‌তে হ‌বে। এ আইন বাস্তবায়‌নের ক্ষে‌ত্রে ভ্যাট বাড়া‌নোর ওপর জোর না দি‌য়ে তা ‌যেন সবার কা‌ছে গ্রহণযোগ্য ও আধুনিক হয় সে বিষ‌য়ে নজর দি‌তে হ‌বে। তি‌নি ব‌লেন, কর প্রশাস‌নের কাছ থে‌কে ব্যবসায়ীরা হে‌নস্থা বা হয়রা‌নির শিকার হ‌চ্ছে, এ ধরনের অভিযোগ আছে। এ বিষ‌য়ে সু‌নি‌র্দি‌ষ্ট কর‌তে হ‌বে, কেন ব্যবসায়ীরা হয়রা‌নির শিকার হন? একই স‌ঙ্গে ভ্যাট বিষ‌য়ে বি‌ভিন্ন সমস্যা সমাধানে ছোট ছোট খাত ভিত্তিক গ‌বেষণার পরামর্শ দেন তি‌নি। এন‌বিআ‌রের সদস্য ব্যা‌রিস্টার জাহাঙ্গীর হো‌সেন ব‌লেন, মধ্যম আ‌য়ের দে‌শ হতে হলে জি‌ডি‌পির ১৫ শতাংশ রাজস্ব আহরণ প্র‌য়োজন হয়। আমা‌দের বর্তমা‌নে ১০ শতাংশের নিচে র‌য়ে‌ছে। আর এটি বাড়া‌তে হ‌লে ফরমাল ইকো‌নো‌মি‌তে যে‌তে হ‌বে। ইনফরমাল ইকোনো‌মি‌ কমি‌য়ে আন‌তে হ‌বে। রাইজিংবিডি/ঢাকা/৮ অক্টোবর ২০১৭/এম এ রহমান/রফিক