অর্থনীতি

বাংলাদেশ বিদেশি বিনিয়োগের জন্য উৎকৃষ্ট স্থান: অর্থমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিবেদক : বাংলাদেশ যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন বিদেশি বিনিয়োগের জন্য উৎকৃষ্ট স্থান, এ কথা উল্লেখ করে নরওয়ের বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। সোমবার বিকেলে সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ সফররত নরওয়ে ফান্ড টিমের ১৬ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল দেখা করে। এ সময় অর্থমন্ত্রী নরওয়ের প্রতিনিধিদলের প্রতি এ আহ্বান জানান। প্রতিনিধিদলের সঙ্গে ঢাকায় অবস্থানরত নরওয়ের রাষ্ট্রদূত সিডসেল ব্লেকেন উপস্থিত ছিলেন। সাক্ষাৎকালে অর্থমন্ত্রী বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ পরবর্তী পুনর্বাসনে নরওয়ের সহযোগিতার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বাংলাদেশের বিগত এবং বর্তমান সময়ের নানা পরিস্থিতি তুলে ধরেন। এর আগে নরওয়ের প্রতিনিধিদলের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করা হয়। অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার শুরু থেকেই জ্বালানি, বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ ব্যবস্থার ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব আরোপ করেছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বৈদেশিক সরাসরি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করার জন্য এসব বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। এর পরেই শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) ভিত্তিতে বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নে সরকার অগ্রাধিকার দিয়ে আসছে। এ বিষয়ে যেকোনো ধরনের সহযোগিতা দিতে সরকার প্রস্তুত। অর্থমন্ত্রী ব্যাংকিং খাতের কথা তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে ৪৮টি বেসরকারি ব্যাংক রয়েছে। এছাড়া সরকারি আটটি ব্যাংক আছে। এত সংখ্যক ব্যাংক হওয়ায় অনেকেই এর নেতিবাচক দিকটি তুলে ধরেন। তবে আমি তা মনে করি না। হ্যাঁ, বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে অনেক সমস্যা রয়েছে। এর মালিকরা পরিচালক এবং তারা বিভিন্ন নামে ঋণ নিয়ে খেলাপী ঋণের পরিমাণ বাড়িয়ে তুলছে। এছাড়া সরকারি ব্যাংকগুলোতেও অনেক সমস্যা রয়েছে। তিনি আরো বলেন, ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে কাজ হচ্ছে। বিশেষ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন ধরনের সংস্কার কাজ হাতে নিয়েছে। সরকারি ব্যাংকগুলো অবস্থা খারাপ হওয়ার পেছনে ঋণ বিতরণ ব্যবস্থায় গলদ রয়েছে। এসব ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে যারা থাকেন তারা সরকারি কর্মচারী। তাদের দক্ষতার অভাব রয়েছে। যোগ্য লোক নিয়োগ করে ব্যাংকগুলোকে টেনে তোলার প্রক্রিয়া চলমান। আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, বাংলাদেশ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে দারিদ্র্য দূর হবে। আর এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। আমাদের জিডিপি ৫ শতাংশ থেকে ৫ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে স্থির হয়ে ছিল। সেটি এখন ৭ দশমিক ২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে, গড় আয়ু বেড়েছে। শিক্ষার হার বেড়েছে। এ ধারা অব্যাহত রাখতে বিদেশি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করছে সরকার। তিনি আরো বলেন, আমাদের প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার হার বেড়েছে। তবে মাধ্যমিক পর্যায়ে কিছুটা সমস্যা রয়েছে, যা দূর করার চেষ্টা চলছে। আর উচ্চ শিক্ষা পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন উদ্যোগ নিচ্ছে। এ ক্ষেত্রেও উন্নতি হয়েছে। তবে এ পর্যায়ে আরো উন্নতির সুযোগ রয়েছে। আইনশৃঙ্খলার কথা উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০১৫ সাল পর্যন্ত একটি মহল দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নষ্ট করার জন্য হরতাল, জ্বালাও-পোড়াওয়ের আন্দোলন করেছে। তারা দেশে অরাজকতা সৃষ্টির মাধ্যমে সরকারকে বেকায়দায় ফেলে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করেছে। জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে। দেশে এখন অনেক ভালো অবস্থা বিরাজ করছে বলেই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। রাইজিংবিডি/ঢাকা/২২ জানুয়ারি ২০১৮/হাসনাত/রফিক