অর্থনীতি

‘বিশ্বমানের রাজস্ব আদায় ব্যবস্থা প্রচলন করতে হবে’

বিশেষ প্রতিবেদক : অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, দেশের সব প্রতিষ্ঠানের অন্যতম দাবি বিভিন্ন ধরনের কর থেকে অব্যহতি চাওয়া। জনগণ এবং বিভিন্ন ব্যবাসয়িক প্রতিষ্ঠান থেকে সরকার রাজস্ব আদায় করে আর সেই অর্থই দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত হয়। রাজস্ব আদায় না হলে দেশের উন্নয়ন হবে কি দিয়ে। তাই আমাদের বিশ্বমানের রাজস্ব আদায় ব্যবস্থা প্রচলন করতে হবে।  বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) আয়োজিত চার দিনব্যাপী বেসিস সফট এক্সপো-২০১৮ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বেসিস সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর ও বেসিসের কার্যনির্বাহী পরিষদের কর্মকর্তারা। দেশীয় তথ্য-প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা তুলে ধরার লক্ষ্যে প্রতিবছরের মতো এবারও এই এক্সপোর আয়োজন করা হয়েছে। এবার এক্সপোর শ্লোগান নির্ধারণ করা হয়েছে ‘ডিজাইনিং দ্য ফিউচার’। এক্সপো শেষ হবে আগামী রোববার। অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘গত কয়েক বছরে দেশের মোট সম্পদের পরিমাণ অনেক বেড়েছে। তবে সে তুলনায় সরকারের সম্পদের পরিমাণ বাড়েনি। অবশ্য কিছুটা উন্নয়ন হয়েছে। প্রতিবছর বাজেটের আকার বড় হয়েছে। আর এ ধারা  অব্যাহত রাখতে হলে আমাদের রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ বাড়াতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের রাজস্ব আদায়ের হার অত্যন্ত কম। নেপালের চেয়েও আমাদের রাজস্ব আদায়ের হার কম। বর্তমানে এ হার ১১ শতাংশ যা প্রত্যাশিত হারের চেয়ে অনেক কম। দেশে উন্নয়নের যে ধারা সূচিত হয়েছে তা অব্যাহত রাখতে হলে রাজস্ব আদায়ের হার অবশ্যই ২০ শতাংশে উন্নীত করতে হবে। সবাই কর অব্যহতি চাইলে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে না।’ মুহিত বলেন, ‘বেসিসের পক্ষ থেকে আপনারা আপনাদের চাহিদার কথা জানিয়েছেন। আমি শুনেছি। এ বিষয়ে এখনই কিছু বলা সম্ভব নয়। তবে বিষয়গুলো বিবেচনা করে দেখা হবে।’  এ প্রসঙ্গে পরে সচিবালয়ে অর্থনৈতিক রিপোর্টারদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) নির্বাহী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে এক বৈঠকে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বেসিসের পক্ষ থেকে এ শিল্পের প্রসারের জন্য বিভিন্ন দাবি তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে ভ্যাট এবং অন্যান্য কর ছাড় রয়েছে। এছাড়াও ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে জামানত দিতে হয় কিন্তু সফটওয়্যারতো ব্রেনের বিষয় সে ক্ষেত্রে জামানত কি দেবে তারা। এটা জানতে চেয়েছে। বিষয়টি সত্যি জটিল।’ মুহিত বলেন, ‘কর ছাড়ের বিষয়ে কিছু বলা সম্ভব নয়। তবে এ বিষয়ে কি করা যায় তা আগামী বাজেটে ভেবে দেখা হবে। এ মুহূর্তে তাদের কোন প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়নি। বেসিস সফট এক্সপো দেশের তথ্য প্রযুক্তি খাতের অগ্রগতির সাক্ষ্য বহন করছে। এই এক্সপোর মাধ্যমে বাংলাদেশের তথ্য-প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো যে আন্তর্জাতিক মানের সেবা দিতে সক্ষম সেটাও স্পষ্ট হয়েছে।’ বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘এবারের আয়োজন পরিসরে যেমন বড় তেমনি বিশ্ব অঙ্গনে বাংলাদেশের তথ্য-প্রযুক্তি খাতের অগ্রগতির পরিচয়ও বহন করছে।’ মোস্তাফা জব্বার অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘গত বছর ডিসেম্বরে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডের সমাপনী অনুষ্ঠানে বেসিস সভাপতি হিসেবে দাবি করেছিলাম। আমি আবারও দাবি করছি, মন্ত্রী হিসেবে বা বেসিসের সাবেক সভাপতি হিসেবে বা সাধারণ সদস্য হিসেবে যা আপনি বলেন। বাংলাদেশের মানুষের একটা প্রত্যাশা আছে আপনার (অর্থমন্ত্রী) কাছে। আপনি জানিয়েছেন, এ বছর অবসর নেবেন। তার মানে হচ্ছে ২০১৮-২০১৯ সালের বাজেটই হচ্ছে আপনার শেষ বাজেট। এই বাজেটে আপনার কাছে প্রত্যাশা করি, ইন্টারনেটের উপর থেকে ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করে নেন।’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে বেসিস সফট এক্সপোর আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান সোহেল বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের সেই লক্ষ্য পূরণ হবেই।’ উদ্বোধনীর পর দুপুর ৩টায় স্টার্টআপের ওপর একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া নেট নিউট্রালিটি এবং রোবোটিক্সের ওপর দুটি পৃথক সেমিনার অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। আয়োজকরা জানান, এবার এক্সপোতে ৪টি বিশেষ জোন রয়েছে। এগুলো হচ্ছে সফটওয়্যার সেবা প্রদর্শনী জোন, উদ্ভাবনী মোবাইল সেবা জোন, ডিজিটাল কমার্স জোন এবং আইটিইএস ও বিপিও জোন। এক্সপোতে ১৮০টিরও বেশি দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানের স্টল রয়েছে। অনুষ্ঠিত হবে ৩০টিরও বেশি প্রযুক্তি বিষয়ক সেমিনার। অংশগ্রহণ করবেন ১০০ জনেরও বেশি দেশি-বিদেশি তথ্য ও প্রযুক্তিবিদ। এক্সপোতে আইটি জব ফেয়ারসহ গুগল, ফেসবুক, ডেভলপারস কনফারেন্স ও আউটসোর্সিং কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হবে। রাইজিংবিডি/ঢাকা/২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮/হাসনাত/শাহনেওয়াজ