অর্থনীতি

সন্তানের শিক্ষা ব্যয় করমুক্ত চায় ডিসিসিআই

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক : আগামী ২০১৮-১৯ সালের অর্থবছরের বাজেটে সন্তানের প্রাথমিক শিক্ষা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষা ব্যয় নির্বাহের জন্য বাৎসরিক শিক্ষা ব্যয় বাবদ এক লাখ ২০ হাজার কর অব্যাহতি দেওয়ার প্রস্তাব করেছে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)। মঙ্গলবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অনুষ্ঠিত প্রাক-বাজেট  আলোচনায় ডিসিসিআই সভাপতি আবুল কাসেম খান এ প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। এনবিআর চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভুইয়া বাজেট আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন। ডিসিসিআই সভাপতি আসছে অর্থবছরের বাজেটে অন্তর্ভুক্তির জন্য মোট ২১টি প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। এর মধ্যে আয়কর সংক্রান্ত ৯টি, ভ্যাট বা মূসক সংক্রান্ত ১টি, রাজস্ব আয় বৃদ্ধি সংক্রান্ত ২টি, আইনের বৈপরিত্য হ্রাসকরণ সংক্রান্ত ২টি, আইনের প্রয়োগ স্বচ্ছতা সংক্রান্ত ৭টি ও বিনিয়োগ কার্যক্রমকে অধিকতর উৎসাহ সংক্রান্ত ১টি প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, শিক্ষা ব্যয় নির্বাহের জন্য বাৎসরিক শিক্ষা ব্যয় বাবদ মোট আয় থেকে  এক লাখ ২০ হাজার কর অব্যাহতি দেওয়ার প্রস্তাব করছি। এছাড়া বাংলাদেশি পার্সপোর্টধারী বিদেশে অবস্থানরত সকল দক্ষ পেশাজীবীদের দেশে ফিরে আসার আগ্রহ সৃষ্টি করতে বাংলাদেশে তার আয়ের প্রথম ৫ বছরের আয় করমুক্ত করার প্রস্তাব করছি। এছাড়া সকল স্মার্ট ফোন, ল্যাপটপ, ট্যাবসহ সকল মোবাইল ফোন ক্রয় বাবদ সর্বাধিক ২৫ হাজার টাকা করমুক্ত বিনিয়োগ হিসাবে গণ্য করার প্রস্তাব করছি। আবুল কাসেম বলেন,  ট্যাক্স কার্ড প্রাপ্তদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে হাসপাতাল, চিকিৎসকের চেম্বার, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়, হোটেল এবং রেস্টুরেন্ট, ট্রান্সপোর্ট, এয়ার লাইন টিকেট রিজার্ভ, সরকারি অনুষ্ঠানসহ অন্য সেবা সংক্রান্ত বিষয়ে বিশেষ সেবা দেওয়ার প্রস্তাব করছি। তিনি বলেন, এছাড়া করদাতাদের কর প্রদানের হারের সাথে সঙ্গতি রেখে ট্যাক্স কার্ডকে ছয়টি শ্রেণিতে ভাগ করা যেতে পারে। যেমন গ্রিনকার্ড, গ্রিনপ্লাস কার্ড, সিলভার কার্ড, গোল্ড কার্ড, গোল্ড প্লাস কার্ড ও প্লাটিনাম কার্ড। ‘বর্তমানে ৮ লাখ ৫০ হাজার বিজনেস আইডেন্টিফিকেশন নম্বরধারী (বিআইএন) ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এনবিআরের ডাটাবেজে নিবন্ধিত থাকলেও মাত্রা ৩০ হাজার রিটার্ন প্রদান করে। ভ্যাট আদায়ে এনবিআর পদ্ধতি সহজিকরণের প্রস্তাব করছি, যাতে ভোক্তা ও ব্যবসায়ী ভ্যাট প্রদানে উৎসাহী হয়। তাই ভ্যাট প্রদানে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে ট্যাক্স কার্ডের মতো ভ্যাট স্মার্ট কার্ড প্রদানের প্রস্তাব করছি। এতে ভ্যাটদাতা উৎসাহিত হবে।’ এ ছাড়া টার্নওভার ট্যাক্স সীমা বর্তমান ৮০ লাখ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করে ডিসিসিআই। করের আওতা বাড়ানোর বিষয়ে সংগঠনটি বলেছে, রাজস্ব সংস্কৃতি তৈরি করে বর্তমান করণীতি ও কর আদায়ের পরিবেশকে আরো সহজতর ও বন্ধুসুলভ করতে হবে। বাংলাদেশের ট্যাক্স জিডিপি অনুপাত বর্তমানে ১০ দশমিক ৩ শতাংশ যেখানে ভিয়েতনামে তা ২৩ দশমিক ৫ শতাংশ, নেপালে ১৯ দশমিক ৫ শতাংশ, থাইল্যান্ডে ১৬ শতাংশ, ফিলিপাইনে ১৩ দশমিক ৬ শতাংশ এবং ওইসিডি দেশগুলোতে এর পরিমাণ ৩৪ শতাংশ। বাজেট বর্ধিত ব্যয় ও বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশকে আগামী দুই বছরের মধ্যে ট্যাক্স-জিডিপির পরিমাণ ১৫ শতাংশ বাড়াতে হবে। অনুষ্ঠানে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ইনকাম ট্যাক্স পরিশোধ করা সবার নৈতিক দায়িত্ব বলে জানান তিনি। একই সাথে ব্যবসায়ীদের নিয়মিত ভ্যাট প্রদানের অনুরোধও করা হয়। আপনারা সবাই (ব্যবসায়ী)  করপোরেট ট্যাক্স কমানোর দাবি জানিয়েছেন তবে সরকার করপোরেট ট্যাক্স কমানোর কথা বিবেচনা করছে। এছাড়া প্রতি বছর জাতীয় বাজেটের আকার বড় হচ্ছে এবারও কমপক্ষে ৫০ থেকে ৫২ হাজার কোটি টাকা আকার বাড়বে। এবং এর সাথে এনবিআরের রাজস্ব আয়ের টার্গেটও পূরণ করতে হবে। আমাদের মনিটরিং টিম এ বিষয়ে কাজ করছে। তিনি বলেন, ট্যাক্স কার্ড প্রাপ্তদের সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে বিবেচনা করবে এনবিআর। এবং আর্থিক খাতে সামর্থ বাড়াতে হবে। প্রাইভেট সেক্টরে গ্রোথ হলেই দেশের গ্রোথ হবে। আরএমজি সেক্টরে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে রেয়াতের বিষয়ে চিন্তা করছে এনবিআর। রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩ এপ্রিল ২০১৮/এম এ রহমান/সাইফ