অর্থনীতি

সংকট কাটাতে ফারমার্স ব্যাংক পাচ্ছে ৭১৫ কোটি টাকা

কেএমএ হাসনাত : তারল্য সংকট কাটাতে অবশেষে ৭১৫ কোটি টাকা পাচ্ছে ফারমার্স ব্যাংক। ব্যাংকটির প্রতি গ্রাহকদের আস্থা ফেরাতে সরকারি চার ব্যাংক ও একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এ অর্থ দেওয়া হচ্ছে বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। সূত্র জানায়, রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকের মাধ্যমে দেওয়া  হবে ৬৪০ কোটি। বাকি ৭৫ কোটি টাকা দেবে সরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)। সরকারি চার ব্যাংক প্রত্যোকটি দেবে ১৬০ কোটি টাকা করে। এই টাকা বরাদ্দ দেওয়ার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে এ সিদ্ধান্ত  ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংককে জানানো হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে। ব্যাপক অনিয়ম ও জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ দেওয়ার পর কার্যক্রম শুরুর মাত্র চার বছরের মাথায় ফারমার্স ব্যাংক আর্থিক সংকটে পড়ে, যা বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে বেরিয়ে আসে। গ্রাহকদের টাকা দিতে পারছে না ব্যাংকটি। এছাড়া প্রতিদিন বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বাধ্যতামূলক নগদ জমা (সিআরআর) রাখতে পারছে না। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক ফারমার্স ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি) অপসারণ করে। একই সঙ্গে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদও পুনর্গঠনের নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। যা ইতোমধ্যে কার্যকর হয়েছে। গত ২২ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ঢাকায় ফারমার্স ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায় রাখা জলবায়ু পরিবর্তন ফান্ডের ৫০৮ কোটি ১৩ লাখ ২৯ হাজার টাকা ফেরত দিচ্ছে না ব্যাংকটি। বিষয়টি নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শরণাপন্ন হয়েছে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়। পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপ কামনা করে বিআইডব্লিউটিএ। জানা গেছে, গত এক বছর ধরে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে নগদ জমা (সিআরআর) রাখতে না পারায় ক্রমাগতভাবে সিআরআর ঘাটতির ফলে ব্যাংকটিকে সাড়ে ১৮ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। যার ৭ কোটি ১৮ লাখ টাকা আদায় করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ফারমার্স ব্যাংকের বিরুদ্ধে একাধিক তদন্ত হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২০১৩ সালের ৩ জুন ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করেছে ব্যাংকটি। কার্যক্রম শুরুর কিছু দিনের মধ্যেই ঋণ নিয়মাচার পরিপালনে এবং ব্যাংকটির অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় শিথিলতা দেখা দেয়। ফলে ব্যাংকটিতে বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম হতে থাকে। মোটা দাগে ১৩টি বিশেষ অনিয়মের চিত্র তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে ব্যাংকের নিজস্ব ঋণ নীতিমালা অনুসরণ না করে গ্রাহকদের ঋণ সুবিধা প্রদান করা হয়েছে। ঋণের অর্থের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত না করে গ্রাহকদের উদ্দেশ্যবহির্ভূত খাতে অর্থ স্থানান্তরের পরোক্ষ সহায়তা করা হয় ব্যাংক থেকে। অস্তিত্বহীন ও সাইনবোর্ড সর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ঋণ অনুমোদন দেওয়া হয়। ঋণ নিয়মাচার লঙ্ঘন করে ব্যাংকের পরিচালকসহ অন্য ব্যাংকের পরিচালকদের ঋণ প্রদান করা হয। অপর্যাপ্ত ও ত্রুটিপূর্ণ জামানতের বিপরীতে ঋণ প্রদান ও খেলাপি গ্রাহকের বিপরীতে ঋণ দেওয়া হয়। এরকম ১৩টি অনিয়মের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত এক বছর ধরে ফারমার্স ব্যাংক তীব্র তারল্য সংকট রয়েছে। বর্তমানে এ সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। ব্যাংকের মূল তারল্য পরিমাপক সূচক তথা বাংলাদেশ ব্যাংকে রক্ষিত নগদ জমা (সিআরআর) সংরক্ষণে ব্যাংকটি ক্রমাগতভাবে ব্যর্থ হচ্ছে। যেমন: গত বছর এপ্রিল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত ব্যাংকটি একটানা সিআরআর সংরক্ষণে ব্যর্থ হচ্ছে। এছাড়া, গত জানুয়ারি থেকে গত জুন পর্যন্ত ব্যাংকটি বেশ কয়েক দিন এসএলআর সংরক্ষণেও ব্যর্থ হয়েছে। ভবিষ্যতে এ সংকট প্রকট আকার ধারণ করার আশঙ্কা করছে স্বয়ং বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংক পরিচালনায় যথাযথ নিয়মাচার অনুসরণ না করায় আয়ের উপরও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। গত বছরের জুনের পর থেকে একমাত্র গত ডিসেম্বর ত্রৈমাসিক ছাড়া ব্যাংকটি ক্রমাগত লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছে। গত জুন প্রান্তিকে ব্যাংকটির নীট লোকসানের পরিমাণ ছিল ১৩ কোটি ১১ লাখ টাকা। এছাড়া ব্যাংকটির মোট ৫৪টি শাখার মধ্যে ২৮টিই লোকসানে পরিচালিত হচ্ছে। অর্থাৎ ব্যাংকটির মোট শাখার ৫০ শতাংশের বেশিই লোকসানী। সূত্র জানায়, ব্যাংকটির আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ। বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তন তহবিলের অর্থসহ সরকারি কয়েকটি সংস্থার অর্থ ফেরত নিয়ে দ্বিধায় ভুগছে ব্যাংক এবং গ্রাহকরা। এ অবস্থায় ব্যাংকটির ঘুড়ে দাঁড়ানোর জন্য শর্ত সাপেক্ষে এ অর্থ সহাযতা দেওয়া হচ্ছে। রাইজিংবিডি/ঢাকা/৮ এপ্রিল ২০১৮/হাসনাত/রফিক