অর্থনীতি

সচিবদের সঙ্গে অর্থমন্ত্রীর প্রাক-বাজেট আলোচনা

বিশেষ প্রতিবেদক : আগামী ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের বাজেটে মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রেশন ফি কমছে। এ বিষয়ে প্রাক-বাজেট আলোচনায় একটি প্রস্তাব করেছেন সচিবরা। এতে সরকাররের রাজস্ব বাড়বে বলে আশা করছেন তারা। বৈঠকে বলা হয়, আশপাশের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে রেজিস্ট্রেশন ফি অনেক বেশি। তাই গ্রাহকরা রেজিস্ট্রেশন করতে আগ্রহী হন না। ফলে সরকারের ঘরে রাজস্বও আসে না। বৈঠক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। রোববার অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবসহ সরকারের অধিদপ্তর, পরিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে অর্থমন্ত্রীর ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট আলোচনায় এ প্রস্তাব করেন সচিবরা। বৈঠকে অর্থ সচিব মো. মুসলিম চৌধুরীসহ অন্য সচিবরা উপস্থিত ছিলেন। সূত্র জানায়, সভায় উঠে আসে যে, বাংলাদেশ মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন খরচ ২২ হাজার টাকা। কিন্তু আশপাশের অন্যান্য দেশে এটা ৫ হাজার টাকা। এজন্য গ্রাহকরা রেজিস্ট্রেশন করতে আগ্রহী হন না। অ্যাপ্লাইড ফর রেজিস্ট্রেশন (এএফআর) দিয়ে রাস্তায় মোটরসাইকেল চালান তারা। এতে দেশের রাজস্ব আয় হয় না। এটাকে কীভাবে কমিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য করা যায় সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। সভায় মোটরসাইকেল শিল্পে আরো পাঁচ বছর কর অব্যাহতির প্রস্তাব করা হয়। এসএমই খাতকে আরো কার্যকর করা প্রস্তাব করা হয়েছে। কৃষিভিত্তিক ব্যবসায় স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়ারও প্রস্তাব করা হয়। সূত্র জানায়, দেশের অর্থনীতির স্বার্থে বন্ড মার্কেটকে গতিশীল করার পরমর্শ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি করপোরেট ট্যাক্স কমানোর প্রস্তাবও করা হয়েছে। বৈঠক শেষে করপোরেট ট্যাক্স কমানোর বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, বিষয়টি কষ্টসাধ্য। দেখা যাক কী করা যায়। রেমিট্যান্সকে আরো গতিশীল করার বিষয়ে বলা হয়, বর্তমানে যে রেমিট্যান্স আসছে, এটা ঠিক আছে। তবে এক্ষেত্রে যদি আরো একটু নজর দেওয়া যায়, যেমন দক্ষ জনবল বিদেশে পাঠানো হয়, তাহলে রেমিট্যান্সের প্রবাহ আরো বাড়বে। বৈঠকে আলোচনা হয়, আমাদের দেশে অভিবাসন ব্যয় অনেক বেশি। অনেক এজেন্সি চুক্তিতে শ্রমিক বিদেশে পাঠানোয় অনেক বেশি অর্থ নিয়ে থাকে। এ বিষয়ে নজর দিতে হবে। তাছাড়া কিছু কিছু দেশে আমাদের নিজস্ব অফিস তথা দূতাবাস নেই। মিশর, লেবানন, বাহরাইন এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় জমির দাম কম, তাই এসব দেশে নিজস্ব অফিস বানানো যায়। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। আগামীতে এসব কাজ অব্যাহত থাকবে। ভ্যাট আদায়ের ক্ষেত্রে নজরদারি বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এজন্য ইসিআর মেশিন ব্যবহারের ওপর জোর দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। বৈঠকে আগামী বাজেটে নদী খননে বরাদ্দ বাড়ানোর প্রস্তাব কর হয়েছে। বলা হয়েছে, বর্তমানে ২৪টি নদী খননের (ড্রেজিং) উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সরকার অভ্যন্তরীণ নৌপথের নাব্যতা পুনঃরুদ্ধারের লক্ষ্যে এসব নদী খনন করছে। এর জন্য বরাদ্দ বাড়ানো প্রয়োজন। এ প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবুল মুহিত বলেন, বিষয়টি যৌক্তিক। এ বিষয়ে ভেবে দেখা যেতে পারে। বৈঠকে কৃষি সচিব বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে যে পরিমাণ কোল্ড স্টোরেজ রয়েছে, ততে মাত্র ২৩ শতাংশ আলু সংরক্ষণ সম্ভব হয়। অন্যান্য সবজি তো রয়েছেই। শুধু ৭৭ শতাংশ আলুই কোল্ড স্টোরেজের বাইরে রাখতে হয়। তাই সরকারিভাবে আরো কোল্ড স্টোরেজ নির্মাণ করা এবং বেসরকারিভাবে প্রয়োজনে নগদ সহায়তা দিয়ে আরো বেশি বেশি কোল্ড স্টোরেজ করতে হবে। তাহলে আলুসহ অন্যান্য সবজিও সংরক্ষণ সম্ভব হবে। এছাড়া রাস্তা-ঘাটের অবস্থা খুব নাজুক। সামনে নির্বাচন, তাই রাস্তাঘাট মেরামতে অধিকাংশ সচিব বেশি বেশি বরাদ্দ দেওয়ার ওপর গুরুত্ব দেন। রাইজিংবিডি/ঢাকা/৮ এপ্রিল ২০১৮/হাসনাত/রফিক