অর্থনীতি

‘মানুষ মেড ইন বাংলাদেশ পণ্য নিয়ে গর্ব করে’

নিজস্ব প্রতিবেদক : ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান এসএম শামসুল আলম বলেছেন, স্ক্রু থেকে শুরু করে ফ্রিজের কম্প্রেসর পর্যন্ত ওয়ালটন কারখানায় তৈরি হচ্ছে। আগে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ লেখা ইলেকট্রনিক্স পণ্য নিয়ে দেশের মানুষের মাঝেই দ্বিধা ছিল। কিন্তু এখন মানুষ বাংলাদেশে তৈরি পণ্য খোঁজে। গর্বের সঙ্গে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ পণ্য ব্যবহার করে। এই ট্যাগ বুকে নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যায় ওয়ালটনের পণ্য। ওয়ালটন প্রমাণ করেছে প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদনে বাংলাদেশ পিছিয়ে নেই। ওয়ালটন আয়োজিত চার দিনের আন্তর্জাতিক পরিবেশক সম্মেলনের সোমবার তৃতীয় দিনের বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি। দ্রুত পরিবর্তনশীল ইলেকট্রনিক্স ব্যবসার বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার প্রত্যয় নিয়ে গাজীপুরের চন্দ্রায় ওয়ালটন হেড কোয়ার্টারে এই সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন দেশ-বিদেশের ৬ হাজারেরও বেশি ব্যবসায়ী। ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান জানান, চীনের ক্যান্টন ফেয়ার থেকে শুরু করে বিশ্বের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় ওয়ালটন অংশ নিচ্ছে। এসব মেলায় বিদেশি বায়ারদের কাছে প্রশংসিত এবং সমাদৃত হচ্ছে ওয়ালটন পণ্য। ওয়ালটনের এ অগ্রযাত্রার সঙ্গী হওয়ার জন্য তিনি ডিস্ট্রিবিউটর, ডিলার, সাব-ডিলারসহ সব ক্রেতাকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, আমরা কয়েকদিন আগে চীনের আন্তর্জাতিক মেলা থেকে এলাম। সেখানে আমরা গিয়েছি পণ্য আমদানি করতে নয়, কিন্তু রপ্তানি করতে। ওই মেলায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত বায়ারদের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। অনেকেই বাংলাদেশ থেকে ইলেকট্রনিক্স পণ্য আমদানি করতে চেয়েছেন। লেবাননের সঙ্গে আমাদের চুক্তি হয়েছে। খুব শিগগিরই সেখানে বড় আকারের শিপমেন্ট হচ্ছে। বিশ্বের অন্য দেশের মতো ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ লেখা ওয়ালটন পণ্য এবার যাচ্ছে লেবাননে। এর আগে সকালে গাজীপুরের চন্দ্রায় ওয়ালটন হেড কোয়ার্টারে বেলুন উড়িয়ে সম্মেলনের তৃতীয় দিনের কার্যক্রম শুরু করেন ওয়ালটনের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ইভা রিজওয়ানা, এমদাদুল হক সরকার ও হুমায়ূন কবির, চিত্রনায়ক আমিন খান প্রমুখ। সম্মেলনের তৃতীয় দিনে যোগ দেন সিলেট, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, বরিশাল, খুলনা, যশোরসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলের ১ হাজার ২৮০ জন ডিলার এবং সাব-ডিলার। তারা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হেড কোয়ার্টারে পৌঁছে বিশ্বের লেটেস্ট প্রযুক্তি ও মেশিনারিজ সমৃদ্ধ ওয়ালটনের অত্যাধুনিক কারখানায় বিভিন্ন পণ্যের উৎপাদন প্রক্রিয়া পরিদর্শন করেন। সম্মেলনের শুরুতে ওয়ালটনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রয়াত এসএম নজরুল ইসলামের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনায় এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। পরে একে একে বক্তব্য রাখেন ওয়ালটনের বিপণন বিভাগের প্রধান সমন্বয়ক ইভা রিজওয়ানা, এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর এমদাদুল হক সরকার, হুমায়ূন কবির, আলমগীর আলম সরকার ও সিরাজুল ইসলাম, ডেপুটি এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর মোহাম্মদ রায়হান এবং ওয়ালটনের ব্র্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। উদ্বোধনী বক্তব্যে এমদাদুল হক সরকার বলেন, পণ্যের বিক্রির সঙ্গে বিক্রয়োত্তর সেবা প্রদানেও আমরা খুবই আন্তরিক। আমাদের লক্ষ্য ১২ ঘণ্টার মধ্যে ক্রেতাকে বিক্রয়োত্তর সেবা প্রদান। বর্তমানে ৭০টি সার্ভিস সেন্টার আছে জানিয়ে তিনি বলেন, এ বছরের মধ্যে এ সংখ্যা ১০০ টিতে উন্নীত হবে। হুমায়ূন কবির বলেন, ওয়ালটনের আজকের সফলতার পেছনে চারটি বিষয় কাজ করছে। প্রথমটি হলো ওয়ালটন পণ্যের উচ্চমান। দ্বিতীয়ত, আমাদের পণ্যের দাম তুলনামূলক কম। তৃতীয়ত, পণ্যের সহজলভ্যতা। ওয়ালটন পণ্য যেন সব জায়গায় পাওয়া যায়, সেদিকে আমরা বিশেষ দৃষ্টি রাখি। চতুর্থত, সহজ ও দ্রুত বিক্রয়োত্তর সেবা প্রদান। ওয়ালটন সূত্রে জানা গেছে, ২১ থেকে ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত ওই সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন বাংলাদেশে ওয়ালটনের ২০টি অঞ্চলের এরিয়া ম্যানেজার, সার্ভিস সেন্টার প্রধান, ৮৮৭ জন ডিস্ট্রিবিউটর এবং ৪ হাজার ৬৩ জন ডিলার ও সাব-ডিলারসহ ৬ হাজারেরও বেশি ব্যবসায়ী। সম্মেলনে আরো যোগ দিচ্ছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা ওয়ালটনের ডিস্ট্রিবিউটররা। ফলে এটি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ীদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। এর আগে শনিবার উদ্বোধনী দিনে অংশ নিয়েছিলেন ওয়ালটনের ঢাকা অঞ্চলের ১ হাজার ৩৬৭ জন ডিলার এবং সাব-ডিলার। দ্বিতীয় দিনে যোগ দিয়েছিলেন ঢাকার আশপাশের অঞ্চলের ১ হাজার ৩৯৩ জন ডিলার এবং সাব-ডিলার। ছিলেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা ওয়ালটনের ডিস্ট্রিবিউটররা। আর সম্মেলনের চতুর্থ দিনে অংশ নেবেন বাংলাদেশে ওয়ালটনের ২০টি এরিয়ার ৮৮৭ জন ডিস্ট্রিবিউটর। ঢাকার উত্তরা থেকে সম্মেলনে এসেছিলেন ওয়ালটনের এক্সক্লুসিভ ডিলার মো. আনোয়ার হোসেন। উত্তরা ইলেকট্রনিক্স-এর সত্ত্বাধিকারী আনোয়ার হোসেন জানান, এই প্রথম তিনি ওয়ালটন কারখানা পরিদর্শন করেছেন। ওয়ালটনের অত্যাধুনিক উৎপাদন প্রক্রিয়া দেখে তিনি মুগ্ধ ও অভিভূত। তিনি বলেন, ৯ বছর ধরে আমি ওয়ালটন পণ্য বিক্রি করছি। কারখানার এই বিশাল কর্মযজ্ঞ সম্পর্কে তেমন জানা ছিল না। কিন্তু আজ এখানে এসে দেখতে পারলাম জাপান, জার্মানসহ বিশ্বের অত্যাধুনিক টেকনোলজি অনুযায়ী ওয়ালটন পণ্য উৎপাদন করছে। তিনি আরো বলেন, ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ বলে আমাদের কিছু ছিল না। কিন্তু এই বাক্যটাকে আমাদের করেছে ওয়ালটন। আমরা এখন গর্বের সঙ্গে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ পণ্য বিক্রি করছি এবং নিজেরাও ব্যবহার করছি। ** ** রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৩ এপ্রিল ২০১৮/অগাস্টিন সুজন/সাইফ