বিশেষ প্রতিবেদক : আগামী অর্থবছরের বাজেটে করপোরেট ট্যাক্স হার কমানোর বিষয়ে ব্যবসায়ীদের আশ্বাস দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেছেন, তরুণদের ওপর আমার বিশ্বাস আছে। তারা ঠিকমতো কর পরিশোধ করেন। তাদের ওপর বিশ্বাস রেখেই এবার বাজেটে করপোরেট ট্যাক্স হার কমানোর চিন্তা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। শনিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), দৈনিক সমকাল এবং চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের যৌথ উদ্যোগে প্রাক-বাজেট আলোচনায় প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার। বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম, এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, ডিসিসিআই সভাপতি আবুল কাসেম খানসহ অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী এবং বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। বৈঠকে ডিসিসিআই’র ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি কামরুল ইসলাম, সহ-সভাপতি রিয়াদ হোসেন, পরিচালক হোসেন এ সিকদার, ইমান আহমেদ, কে এম এন মঞ্জুরুল হক, মো. আলাউদ্দিন মালিক, ইঞ্জি. মো. আল আমিন, মোহাম্মদ বাশীর উদ্দিন, নূহের লতিফ খান, সেলিম আকতার খান, এস এম জিল্লুর রহমান, ওয়াকার আহমেদ চৌধুরীসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে চারটি বিষয়ের ওপর প্যানেল আলোচনা হয়। সেগুলো হলো- কর ও ভ্যাট, অবকাঠামো, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, শিল্প, অর্থনৈতিক অঞ্চল ও বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ, আর্থিক খাত ও পুঁজিবাজার সেশন। অর্থমন্ত্রী বলেন, সরকার দু’স্তরের ভ্যাট ব্যবস্থা কার্যকরের পরিকল্পনা নিয়েছে। এছাড়া করপোরেট করের হার কমানোর বিষয়টি সরকারের সক্রিয় বিবেচনাধীন রয়েছে। দেশে তরুণ করদাতার সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে, যা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক একটি বিষয়। তিনি বলেন, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (বিডা) ‘ওয়ান স্টপ’ সার্ভিস চালুর উদ্যোগ নিয়েছে, যার মাধ্যমে বিনিয়োগ প্রস্তাব জমা দেওয়ার সাত মাসের মধ্যে বিনিয়োগ সহায়তা দেওয়া যাবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, সঞ্চয়পত্রের সুদের হার বিষয়টি আগামী বাজেট ঘোষণার পর পর্যালোচনা করা হবে। দেশের বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সুষম প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ‘কমপিটিশন অ্যাক্ট’ জরুরি হয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা হচ্ছে। ২৬টি সরকারি প্রতিষ্ঠনের শেয়ার পুঁজিবাজারে না আসতে পারার বিষয়টি অত্যন্ত হতাশার বিষয় বলে তিনি মন্তব্য করেন। স্বাগত ভাষণে ডিসিসিআই সভাপতি আবুল কাসেম খান বলেন, ঢাকা চেম্বার মনে করে আগামী বাজেটে করনীতিমালার সহজীকরণসহ অন্যান্য নীতিমালার সংস্কার, বিদ্যমান কর হার হ্রাসকরণ, ট্যাক্স কার্ড প্রদান, ব্যবসায় ব্যয় হ্রাস, বৈদেশিক বিনিয়োগ আকৃষ্টকরণ, যোগাযোগ অবকাঠামোর আধুনিকায়ন এবং নিডমা প্ল্যাটফর্ম প্রবর্তনের ওপর গুরুত্বারোপ করা প্রয়োজন। তত্ত্ববধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, একটি দেশের অর্থনীতির ক্রমবিকাশের জন্য বিনিয়োগ বৃদ্ধি, অবকাঠামো, পরিবহন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি এবং সমুদ্রবন্দরগুলোর উন্নয়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অবকাঠামো খাতের উন্নয়নে ধীরগতি এবং উন্নয়ন কাজের গুণগতমান নিশ্চিতকরণের ওপর জোর দেওয়া উচিত। ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ের কাজ সম্পন্ন হওয়ার অল্প দিনের মধ্যেই তা সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যার ফলে সরকারের টাকার অপচয়ের পাশাপাশি অর্থনৈতিক উন্নতি ব্যাহত হচ্ছে। ড. এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম তার বক্তৃতায় অবকাঠামো খাতের উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে এগুলোর গুণগতমান নিশ্চিতকরণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, আগামী বাজেটে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ানোর পাশাপাশি কৃষি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, অবকাঠামো খাতের উন্নয়ন অগ্রাধিকার পাবে। তিনি বলেন, সরকার কর্তৃক আমদানিকৃত এলএনজি’র সাথে দেশীয় গ্যাস সংমিশ্রণ করার মাধ্যমে তা জাতীয় গ্রিডে দেওয়া হবে এবং এলএনজি’র দাম যেন সহনীয় মাত্রায় থাকে সে বিষয়ে সরকার সচেতন রয়েছে। ‘ট্যাক্সেশন এবং ভ্যাট’ সেশনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ, পিআরআই’র নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এএইচ মানসুর, আইসিএবি’র সাবেক সভাপতি আদিব এইচ হাসান এবং ফিকি’র সাবেক সভাপতি রূপালী চৌধুরী আলোচনায় অংশ নেন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ করপোরেট ট্যাক্স যৌক্তিক হারে পর্যায়ক্রমিকভাবে কমানোর প্রয়োজন এবং করের হার হ্রাসের ফলে রাজস্ব আহরণের পরিমাণের ওপর যেন কোনো অভিঘাত না আসে সে বিষয়ে যত্নবান হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। এ সময় তিনি দক্ষ জনবল তৈরি এবং গবেষণা কার্যক্রম বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন। পিআরআই’র নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এএইচ মানসুর বলেন, গত সাত বছরে জিডিপিতে রাজস্বের অবদান আশানুরূপভাবে বাড়েনি, যা উদ্বেগের বিষয়। আইসিএবি’র সাবেক সভাপতি আদিব এইচ হাসান বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের কর কাঠামোতে বেশ কিছু সংস্কার এসেছে, যা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। ফিকি’র সাবেক সভাপতি রূপালী চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ কেন দেশি/বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে পারছে না, তা আমাদের ভেবে দেখতে হবে। ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের সরকারগুলো বৈদেশিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রণোদনা দিচ্ছে, যা বাংলাদেশেও চালু করা প্রয়োজন। বৈঠকে ‘অবকাঠামো, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি’ সেশনে বুয়েটের পেট্রোলিয়াম এবং খনিজসম্পদ ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তামিম, পিডব্লিউসি বাংলাদেশ-এর ম্যানেজিং পার্টনার মামুন রশিদ, ডিসিসিআই’র পরিচালক হুমায়ুন রশিদ এবং কনফিডেন্স সিমেন্ট লিমিটেড-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইমরান করিম আলোচনায় অংশ নেন। ‘শিল্প এবং বাণিজ্য’ সেশনে ডিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি মতিউর রহমান, সিপিডি’র সম্মানিত ফেলো প্রফেসর ড. মোস্তাফিজুর রহমান, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক গ্রুপের সিনিয়র ইকোনোমিস্ট ড. মাশরুর রিয়াজ এবং ফিকি’র সভাপতি শেহজাদ মুনিম আলোচনায় অংশ নেন। ‘বিনিয়োগ, ফিন্যান্সিয়াল সেক্টর এবং পুঁজিবাজার’ সেশনে আইডিএলসি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফ খান, বিআইডিএস’র সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ, গ্রামীণফোন লিমিটেড-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাইকেল প্যাটরিক ফোলে এবং সিপিডি’র গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম আলোচনায় অংশ নেন। রাইজিংবিডি/ঢাকা/১২ মে ২০১৮/হাসনাত/মুশফিক