অর্থনীতি

বাজেটের সম্ভাব্য আকার চার লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা

কেএমএ হাসনাত: অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের ২১তম অধিবেশনে ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করবেন। আওয়ামী লীগ সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে অর্থমন্ত্রী টানা দশম এবং ব্যক্তিগত ১২ তম বাজেট উপস্থাপন করে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে যাচ্ছেন। আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকার হতে পারে চার লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। এই বাজেটের মোট আয় ধরা হয়েছে তিনলাখ ৩৯ হাজার ২৮০ কোটি টাকা। সামগ্রিক ঘাটতি গিয়ে দাঁড়াচ্ছে একলাখ ২৫ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার হবে এক লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকা। বাজেট ঘাটতি পূরণে ব্যাংক ঋণ নেওয়া হবে ৪২ হাজার কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য থাকছে ২৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা। নতুন বাজেটের আকার চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের চেয়ে ৬৪ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা বেশি হতে পারে। আর চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় এর আকার ৯৩ হাজার ৭৮ কোটি টাকা বেশি। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার রয়েছে চার লাখ ২৬৬ কোটি টাকা আর সংশোধিত বাজেটের আকার তিন লাখ ৭১ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা। জানা গেছে, সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য পে-স্কেল অনুযায়ী ৫ শতাংশেরও বেশি হারে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধির ঘোষণা থাকছে, বাড়ানো হচ্ছে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতা। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বাড়তি দুটি উৎসব ভাতা ঘোষণা দিতে পারেন অর্থমন্ত্রী।  বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে এক লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকা। অর্থমন্ত্রী ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে মোট তিন লাখ ৩৯ হাজার ২৮০ কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের পরিকল্পনা করেছেন। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) নিয়ন্ত্রিত কর থেকে দুই লাখ ৯৬ হাজার ২০১ কোটি টাকা, এনবিআর-বহির্ভূত কর ব্যবস্থা থেকে ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা এবং কর বহির্ভূত প্রাপ্তি ধরা হয়েছে ৩৩ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা। নতুন অর্থবছরে সামগ্রিক বাজেট ঘাটতি রাখা হচ্ছে এক লাখ ১৫ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা। এটি মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৪ দশমিক ৯ শতাংশ। অবশ্য বাজেটে চার হাজার ৫১ কোটি টাকা বৈদেশিক অনুদান পাওয়ার আশা থাকছে। ওই অনুদান পাওয়া গেলে ঘাটতি দাঁড়াবে এক লাখ ২১ হাজার ২৪২ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৪ দশমিক ৭ শতাংশ। বাজেটে এক লাখ ২৫ হাজার ২৯৩ কোটি টাকার ঘাটতি মেটাতে বৈদেশিক উৎস থেকে মোট ঋণ নেওয়া হবে ৬০ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা। সেখান থেকে ১০ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকা বিদেশি ঋণ পরিশোধে খরচ হবে। ফলে সরকারের নিট বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ দাঁড়াবে ৫০ হাজার ১৬ কোটি টাকা। ঘাটতির বাকি ৭১ হাজার ২২৬ কোটি টাকা নেওয়া হবে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে। এর মধ্যে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া হবে ৪২ হাজার ২৯ কোটি টাকা, সঞ্চয়পত্র থেকে নেওয়া হবে ২৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা। বাকি তিন হাজার কোটি টাকা অন্যান্য উৎস হতে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। আগামী বাজেট থেকে দেশি-বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধেই ব্যয় হবে ৫১ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে নেওয়া ঋণের সুদ বাবদ ব্যয় করতে হবে ৪৮ হাজার ৩৭৭ কোটি টাকা, বৈদেশিক ঋণের সুদ দিতে হবে দুই হাজার ৯৬৩ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ধরা হয় ৩৯ হাজার ৫১৩ কোটি টাকা আর বিদেশি ঋণের সুদ ধরা হয় এক হাজার ৯৪৬ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বাজেটে জিডিপির আকার ধরা হয়েছিল ২২ লাখ ২৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে হয়েছে ২২ লাখ ৩৮ হাজার ৪৯৮ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে জিডিপির আকার বেড়ে হবে ২৫ লাখ ৩৭ হাজার ৮৪৯ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৭ দশমিক ৪ শতাংশ। সংশোধিত বাজেটে তা বাড়িয়ে ৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হচ্ছে। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৮ শতাংশ। প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে বলে আশা করছেন অর্থমন্ত্রী। কমছে ভ্যাটের স্তর। বর্তমানে দেড়, আড়াই, তিন, চার, সাড়ে চার, পাঁচ, সাড়ে সাত, ১০ ও ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আদায় করা হয়। আগামী অর্থবছরে তা কমে নয়টি হারের পরিবর্তে ২, ৫, সাড়ে ৭, ১০ ও ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আদায় হতে পারে। একই সঙ্গে ব্যবসা শুরুর আগেই আদায়কৃত অগ্রিম ভ্যাটও (এটিভি) ১ শতাংশ বেড়ে ৫ শতাংশে উন্নীত হচ্ছে। কর্পোরেট কর কমছে। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংক ও তালিকাবহির্ভূত কোম্পানির করপোরেট করহার কিছুটা কমছে বলে এনবিআর সূত্র জানিয়েছে। ব্যাংকিং খাতে বিদ্যমান দুটি স্তর (তালিকাভুক্ত ও তালিকাবহির্ভূত) এ করহার দেড়-দুই শতাংশ কমানো হচ্ছে। সেই সঙ্গে পুঁজিবাজারের বাইরে থাকা কোম্পানির করপোরেট করহারও দেড় শতাংশ কমছে।

   

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৬ জুন ২০১৮/হাসনাত/শাহনেওয়াজ