অর্থনীতি

৪৬টি সরকারি প্রতিষ্ঠানের নিট মুনাফা কমতে পারে

কেএমএ হাসনাত : এক বছরের ব্যবধানে ৪৬টি সরকারি প্রতিষ্ঠানের নিট মুনাফা তিন গুণ কমতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। টাকার অঙ্কের যার পরিমাণ ৫ হাজার ৮৫৭ কোটি টাকা। সরকারি প্রকাশনা থেকে এ তথ্য জানা গেছে। সরকারি প্রকাশনায় বলা হয়েছে, গত ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে এসব প্রতিষ্ঠানে নিট মুনাফা হয়েছে ৯ হাজার ৪৬৩ কোটি টাকা। সেখানে চলতি ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে এসব প্রতিষ্ঠানের নিট মুনাফা প্রাক্কলন করা হয়েছে ৩ হাজার ৬০৬ কোটি ১৬ লাখ টাকা। এই মুনাফা কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে ধরা হয়েছে- বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি এবং বিদেশ থেকে বেশি দাম দিয়ে এলএনজি গ্যাস আমদানি করে তা দেশের বাজারে কম দামে বিক্রি করা। এ কারণে নতুন অর্থবছরে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনকে (বিপিসি) লোকসান গুণতে হবে। সরকারি এসব প্রতিষ্ঠানে যে শুধু নিট মুনাফাই কমে যাবে তা নয়, একই সঙ্গে সরকারকে দেওয়া লভ্যাংশের পরিমাণও প্রায় অর্ধেকে নেমে আসবে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে। গত অর্থবছর এসব প্রতিষ্ঠান লভ্যাংশ দিয়েছিল ২ হাজার ৩৫ কোটি টাকা। সেখানে চলতি অর্থবছরে এই লভ্যাংশের প্রাক্কলন করা হয়েছে ১ হাজার ২৬৪ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক হিসেবে এ তথ্য জানা গেছে। অর্থ বিভাগের মনিটরিং সেল কর্তৃক প্রকাশিত ‘রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানসমূহের ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের বাজেট সংক্ষিপ্তসার’ এ বলা হয়েছে, ‘লাভ/লোকসান পরিস্থিতি যেকোনো করপোরেশনের আর্থিক বিশ্লেষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। বাংলাদেশে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের প্রায় সমস্ত সম্পদ ও ঋণ সরকার অথবা রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক কর্তৃক যোগান দেওয়া হয়ে থাকে। সুতরাং এসব প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে সম্পদের ওপর মুনাফার হার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাপকাঠি।’ এতে আরো বলা হয়েছে, ‘২০১৮-২০১৯ প্রাক্কলিত অর্থবছরে মোট বিনিয়োগের ওপর শূন্য দশমিক ৯৪ শতাংশ পরিচালন লোকসান প্রাক্কলন করা হয়েছে। কিন্তু বিগত দুই অর্থবছরে এই প্রতিষ্ঠানগুলো লোকসান নয়, বরং মুনাফা করেছিল। যেমন: ২০১৭-২০১৮ সংশোধিত অর্থবছরে বিনিয়োগের ওপর পরিচালন মুনাফা ছিল শূন্য দশমিক ৫৪ শতাংশ এবং এর আগের অর্থাৎ, ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে বিনিয়োগের ওপর পরিচালন মুনাফা হয়েছিল ২ দশমিক ৮৭ শতাংশ।’ সম্পদের টার্নওভার পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, সরকারি এসব প্রতিষ্ঠানে সম্পদের ব্যবহারের ক্ষমতা পূর্ববর্তী অর্থবছরের মতো ২০১৭-২০১৮ সংশোধিত অর্থবছরের অপরিবর্তিত ছিল এবং ২০১৮-২০১৯  অর্থবছরে সম্পদ ব্যবহারের ক্ষমতা ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরের তুলনায় কিছুটা কমবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বাজেট সংক্ষিপ্তসারে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে অ-আর্থিক পাবলিক করপোরেশনসমূহের (৪৬টি) কর উত্তর নিট মুনাফা ছিল ৯ হাজার ৩৩৬ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। ২০১৭-২০১৮ সংশোধিত অর্থবছরে কর উত্তর নিট মুনাফা বৃদ্ধি পেয়ে ৯ হাজার ৪৬৩ কোটি ২৮ লাখ টাকায় দাঁড়ায়। তবে ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে কর উত্তর নিট মুনাফা কমে ৩ হাজার ৬০৬ কোটি ১৬ লাখ টাকা হবে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে।’ এসব প্রতিষ্ঠানের আগামী অর্থবছরে যে শুধু মুনাফা কমবে তা নয়, এর পাশাপাশি লভ্যাংশ দেওয়ার পরিমাণও কমবে। যেমন: ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে সংস্থাসমূহ সরকারি কোষাগারে ২ হাজার ৫০৩ কোটি টাকা লভ্যাংশ হিসেবে জমা দিয়েছে। অন্যদিকে, ২০১৭-২০১৮ সংশোধিত অর্থবছরে লভ্যাংশ দিয়েছে ২ হাজার ৩৫ কোটি টাকা। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে লভ্যাংশ হিসাব প্রাক্কলন করা হয়েছে ১ হাজার ২৬৪ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। লভ্যাংশ কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, ‘২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে লভ্যাংশ হ্রাস পাওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি এবং দেশে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি না পাওয়ায় বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে লোকসানের সম্মুখীন হবে। তাই এ বছর প্রতিষ্ঠানটি কোনো লভ্যাংশ প্রদান করবে না। অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, এসব সরকারি প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে বিপিসিকে আগামী অর্থবছরে বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি দেওয়ার প্রয়োজন হবে। রাইজিংবিডি/ঢাকা/৯ জুলাই ২০১৮/হাসনাত/রফিক