অর্থনীতি

সুদবিহীন গৃহনির্মাণ ঋণ দাবি কর্মচারীদের

কেএমএ হাসনাত: সুদবিহীন গৃহ নির্মাণ ঋণ দাবি করেছেন সরকারী কর্মচারিরা। তাদের দাবি, সরকারি কর্মকর্তাদের গাড়ি কেনার জন্য সুদবিহীন ৩০ লাখ টাকা ঋণ দেওয়া হলে তাদের কেন সুদমুক্ত গৃহনির্মাণ ঋণ দেওয়া হবে না। এছাড়াও গৃহ নির্মাণ ঋণের ক্ষেত্রে চাকরির বয়স তুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা ও কর্মচারী ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে গত বুধবার অর্থ সচিবের কাছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে একটি আবেদন করা হয়েছে বলে সংগঠনটির সূত্রে জানা গেছে। আবেদনপত্রে সহকারি সচিব (ক্যাডার বহির্ভূত) কল্যাণ ফোরামের সভাপতি মো. মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, ১৬/২০ গ্রেড কর্মচারি সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আলী এবং বাংলাদেশ কর্মকর্তা ও কর্মচারি ঐক্য পরিষদের মহাসচিব মো.রুহুল আমীন  স্বাক্ষর করেছেন। আবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারিদের ব্যাংকের মাধ্যমে ৫ শতাংশ সরল সুদে গৃহনির্মাণ ঋণ দেওয়ার সুযোগ করা হয়েছে। সেখানে আমরা কর্মচারিরা সুবিধা বঞ্চিত হয়ে পড়েছি। একজন কর্মচারি যদি ৪০ লাখ টাকা গৃহনির্মাণ ঋণ গ্রহণ করে তাহলে তাকে প্রতি মাসে ১৮ হাজার টাকা সুদ গুনতে হবে। একজন কর্মচারির চাকরি ৫ বছর পূর্ণ হলে তার আনুমানিক মূল বেতন ১০ হাজার ৫০০ টাকা দাঁড়াবে এবং সর্বসাকুল্যে তিনি ১৮ হাজার টাকা বেতন পাবেন। সে ক্ষেত্রে গৃহ নির্মাণ ঋণ বাবদ ব্যাংক তার কাছ থেকে কত টাকা কর্তন করবে তা আমাদের বোধগম্য নয়। বলা হয়েছে, আমরা ধরে নিতে পারি গৃহনির্মাণ ঋণের জন্য ব্যাংকগুলো আমাদের কাছ থেকে ১৮ হাজার টাকা কর্তন করবে। এরপর আর কোন বেতন উত্তোলন করতে পারবো না। তা হলে আমরা আমাদের সংসারের ব্যয় কি ভাবে নির্বাহ করবো? গৃহনির্মাণ ঋণ নিলে তা পরিশোধ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হবে না। ফলে কর্মচারিরা এই ঋণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত হলো, সব কর্মকর্তা কর্মচারিদের বাসস্থান সুবিধা নিশ্চিত করা এবং তার আন্তরিকতার প্রতি সন্মান রেখে আমাদের জন্য সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যেমন গাড়ী কেনার জন্য সুদবিহীন ৩০ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন একইভাবে সুদবিহীন ৩০ লাখ টাকা গৃহনির্মাণ ঋণ দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। যা আমরা ২০ বছরে পরিশোধ করবো। এ ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে কোন বয়সসীমা থাকবে না। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলা হয়েছে, ১৫ বছর আগে যারা পেনশনে গিয়েছেন তাদেরকে আবার পেনশনের অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। আমাদের আন্তরিক বিশ্বাস সরকারি কর্মচারিদের গৃহনির্মাণ ঋণের ক্ষেত্রেও কোন বয়সসীমা থাকবে না। বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা ও কর্মচারি ঐক্য পরিষদ সরকারের দেওয়া ২০১৫ সালের পে-স্কেলকে স্বাগত জানানোর পাশাপাশি তাদের টাইমস্কেল, সিলেকশন গ্রেড ও ইক্রিমেন্ট বন্ধ করার অভিযোগ তুলেছেন। এর পরিবর্তে যে ৫ শতাংশ হারে বাৎসরিক বেতন বাড়ানোর বিধান করা হয়েছে তাকে শুভংকরের ফাঁকি বলে অভিহিত করেছেন। নতুন ব্যবস্থায় চতুর্থ, তৃতীয় ও দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মচারিরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে। উদাহরন দিয়ে তারা বলেছেন, ২০ তম গ্রেডে জাতীয় পে-স্কেলে (৮২৫০-২০০১০)=৮২৫০ টাকা-এর ৫ শতাংশ মোট বাৎসরিক বেতন বৃদ্ধি পায় ৪১২ টাকা এবং একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বেদন বৃদ্ধি পায় চার হাজার টাকা। সুতরাং এই পর্যায়ে আমাদেরকে শুভংকরের ফাঁকি দেওয়া হয়েছে। নিম্ন বেতনভুক্ত কর্মচারিদেরকে যদি ইনক্রিমেন্ট ও টাইমস্কেল, সিলেকশন গ্রেড দেওয়া হতো তাহলে অনেকটাই এর চেয়ে বেশি উপকৃত হতে পারতো। আবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমান বাজারে ঊর্ধ্বগতি থামানো যাচ্ছে না। দিন দিন তা বেড়েই যাচ্ছে। যেমন, চাল, ডাল, তেল, মাছ, মাংস, তরিতরকারি ইত্যাদি নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বেড়ে চলেছে। এ অবস্থায় সংগঠনটির পক্ষ থেকে টাইম স্কেল, সিলেকশন গ্রেড, ইনক্রিমেন্ট যদি না দেওয়া হয় তাহলে তাদের ৫ শতাংশের পরিবর্তে ২০ শতাংশ মূল বেতনের সঙ্গে যোগ করার দাবি জানানো হচ্ছে। এছাড়াও আবেদনে পেনশন ভাতা শতকরা ২৩০ টাকার পরিবর্তে ৩০০ টাকা করার আহ্বান জানিয়েছে। যেহেতু বর্তমান পেনশন ভাতার অর্ধেক সরকারের কাছে সমর্পন করার বিধান রাখা হয়েছে। একজন কর্মচারি যদি আনুমানিক ২০ লাখ টাকা পেনশন পান তাহলে ১০ লাখ টাকা দিয়ে একটি মুদি দোকান করা সম্ভব হবে না। একইসঙ্গে তারা পেনশনের পুরোটা সরকারের কাছে বিক্রি করে পেনশন উত্তোলনের সুযোগ দাবি করেছেন।

   

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১১ এপ্রিল ২০১৯/হাসনাত/শাহনেওয়াজ