অর্থনীতি

চলতি বাজেটে আশাহত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক

কেএমএ হাসনাত : জাতীয় সংসদে সদ্য পাস হওয়া ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের বাজেট রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর জন্য কোন সুখবর বয়ে আনেনি, তারা আশাহত। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি পূরণে কোন বরাদ্দ রাখা হয়নি। ইতোমধ্যে গত ৩০ জুন জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের বাজেট পাস হয়ে গেছে।

এরআগে গত ১৩ জুন ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতির জন্য কোন বরাদ্দ না রেখেই জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা হয়। আশা করা হয়েছিল অর্থবিল পাস হওয়ার সময় বিষয়টি বিবেচনা করা হতে পারে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নতুন বাজেটে কোন বিষয়টি বিবেচনা করা হয়নি। ফলে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো মূলধন ঘাটতি পূরণের বিষয়টি অন্ধকারচ্ছন্ন রয়ে গেলো।

অর্থমন্ত্রনালয় সূত্রে জানা গেছে, সদ্য শেষ হয়ে যাওয়া ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের বাজেট থেকে দু’টি ব্যাংকের জন্য মাত্র ১৫১ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ছাড় করা হয়েছে। তবে এ অর্থ দেওয়া হয়েছে ভর্তুকি হিসেবে এবং একটি ব্যাংকের সরকারি অংশের শেয়ার টিকিয়ে রাখার জন্য। এক যুগ পর এবারই প্রথম মূলধন ঘাটতি পূরণে সরকারি ব্যাংকগুলো কোনো অর্থ পেল না। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো তাদের মূলধন ঘাটতি পূরণে সরকারের কাছে ১৯ হাজার কোটি টাকা চেয়েছিল।

সূত্র জানায়, ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের বাজেটে মূলধন পুনর্গঠন খাতে বরাদ্দ ছিল এক হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এ অর্থ থেকে গতকাল দু’টি ব্যাংকের বিপরীতে ছাড় করা হয় ১৫১ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংককে দেওয়া হয়েছে ১৫০ কোটি টাকা এবং গ্রামীণ ব্যাংকে থাকা সরকারি শেয়ার ধরে রাখার জন্য দেওয়া হয়েছে এক কোটি ৩৩ লাখ টাকা। মূলধন ঘাটতি পূরণে বা ভর্তুকি হিসেবে অন্য কোনো ব্যাংককে আর কোন অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়নি।

অর্থ মন্ত্রণালয় বলছে, সরকারি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতির মূল কারণ দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা। এ ঘাটতি মেটানোর জন্য জনগণের করের টাকায় প্রতি বছর এ ব্যাংকগুলোকে শত শত কোটি টাকা দেওয়া হয়। অর্থ দেওয়ার পরও এসব ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা ভালো করা সম্ভব হচ্ছে না। বিশেষ করে জনতা ও বেসিক ব্যাংকের অবস্থা আগের চেয়েও খারাপ হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে এ ব্যাংকগুলোকে অর্থ দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।

এদিকে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত ফেব্রুয়ারি মাসে সরকারি চার ব্যাংকের পক্ষ থেকে মূলধন ঘাটতি পূরণে প্রায় ১৯ হাজার কোটি টাকা চেয়ে একটি চাহিদাপত্র দেওয়া হয়। তাতে দেখা যায়, মূলধন ঘাটতি পূরণে সবচেয়ে বেশি অর্থ চেয়েছিল বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক। ঘাটতি পূরণের ব্যাকটির প্রয়োজন ৭ হাজার ৯৩৫ কোটি ৫৬ লাখ। এর পরের অবস্থানে জনতা ব্যাংক। সরকারি ব্যাংকের মধ্যে খেলাপি ঋণের শীর্ষে থাকা এ ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতি পূরণে প্রয়োজন ৬ হাজার কোটি টাকা। বেসিক ব্যাংকের দরকার ৪ হাজার কোটি টাকা এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক ৭৭৫ কোটি টাকা। অন্য দিকে গ্রামীণ ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধনের সরকারি অংশ পূরণে আরো এক কোটি ১২ লাখ টাকা প্রয়োজন।

বিগত চার অর্থবছরে সরকারি ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি মেটানোর জন্য অর্থ দেওয়া হয়েছে ১০ হাজার ৬৬৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেয়া হয়েছে বেসিক ব্যাংককে। এ ব্যাংকটিকে মোট দেওয়া হয়েছে ৩ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা। বরাদ্দের দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল সোনালী ব্যাংককে দেওয়া হয়েছে ৩ হাজার ৩ কোটি কোটি টাকা।

একইভাবে জনতাকে ৮১৪ কোটি টাকা, অগ্রণী ব্যাংককে এক হাজার ৮১ কোটি টাকা, রূপালী ব্যাংককে ৩১০ কোটি টাকা, কৃষি ব্যাংককে ৭২৯ কোটি ৮৬ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। এরপরও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণ সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে পারেনি।

সূত্র জানায়, নানা অনিয়ম আর দূর্নীতির কারণে ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি এক চরম আকার ধারন করেছে। ব্যাংকগুলোকে মূলধন ঘাটতি পূরণে আর অর্থ বরাদ্দ না দিয়ে খেলাপি ঋণ আদায়ের উপর গুরুত্ব দিতে বলা হবে।

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২জুলাই২০১৯/হাসনাত/লাকী