অর্থনীতি

অভিযুক্ত ব্যবসায়ীরা ব্যবসায় ফিরবেন : অর্থমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিবেদক : অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, অর্থ কেলেঙ্কারির অভিযোগ থাকা হলমার্ক ও বিসমিল্লাহ গ্রুপসহ অন্যান্য ব্যবসায়ীরা ব্যাংক থেকে নেয়া ঋণের অর্থ পরিশাধ করে আবারো ব্যবসায় ফিরে আসবেন। তাদের জন্য যে এক্সিট প্ল্যান ঠিক করা হয়েছে তারা সে সুযোগ নিয়েই আবার ব্যবসায় ফিরবেন বলে আমি আশা করি।

বুধবার সচিবালয়ের ৬ নম্বর ভবনে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নতুন সম্মেলন কক্ষে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেয়ার আগে আ হ ম মুস্তফা কামাল অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন, এরপর পরিকল্পনামন্ত্রী এবং পরে অর্থমন্ত্রী। ২০০৯-২০১৪ সালে সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান থাকাকালে তিনি ব্যাংকগুলো থেকে নেয়া ঋণ আদায়ের বিষয়ে অনেক সুপারিশ করেছিলেন। এরমধ্যে হলমার্ক গ্রুপের অর্থ উদ্ধারের বিষয়ে বেশকিছু সুপারিশ করেছিলেন তিনি।

এ বিষয়ে তার বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার আগের য়ে স্ট্যান্ড পয়েন্ট ছিল এখনো সেটাই আছে। এগুলো রিকভার করতে হবে, এগুলো আমরা রিকভার করব।

তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন, এরই মাঝে বিসমিল্লাহ গ্রুপ বলেছে, তারা ব্যবসা করবে এবং টাকা-পয়সা শোধ করবে। আমি মনে করি, আমরা যে এক্সিট প্ল্যান তৈরি করেছি এবং তা যদি বাস্তবায়ন করতে পারি, তাহলে প্রত্যেক ব্যবসায়ী লাভবান হবেন। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের ব্যবসায়ীদের আবার আমাদের মাঝে পাব, তারা আবার আসবে, তারা টাকা-পয়সা পরিশোধ করবে। আমাদেরও কষ্ট বাড়াবে না। আমাদেরও তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতে হবে না, এটা আমি বিশ্বাস করি।’

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমার টার্গেট একটাই- টু ব্রিং ব্যাক অল দ্য বিজনেজ হাউজেস, অল দ্য বিজনেস পিপল, ইভেন হু হ্যাভ মাইগ্রেটেড দিস কান্ট্রি ফর অ্যা বেটার লিভিং ফর অ্যা বেটার কমফোর্ট, বেটার হোপ।’

মুস্তফা কামাল বলেন, ‘আমি মনে করি, এগুলো (ব্যবসা ছেড়ে যাওয়া) সব উদ্দেশ্যবিহীন। বাংলাদেশের চেয়ে ভালো জায়গা আর পৃথিবীতে কোথাও নাই। যারা সুন্দর জীবন, অর্থ উপার্জন আর অর্থ ভালোভাবে উপভোগ করতে চায়, দিজ ইজ দ্য প্লেস। বেড়াতে যেতে পারে, যেকোনো দেশে বেড়াতে যেতে পারে ৭/১০ দিনের জন্য। বাট এ লংগার টার্ম, দিস কান্ট্রি অফার্স অল দ্য অপারচুনিটিজ ফর এভরিবডি।’

অর্থমন্ত্রী বলেন, এটা তো বোঝাই যায়, আমি গ্রাম থেকে শুরু করে ফ্রম নো হোয়ার, আমি আজকে আপনাদের সামনে এসে কথা বলছি। সুতরাং আমি যদি পারি তাহলে কে পারবে না, আমাকে বলেন। আমি একটা এক্সাম্পল। আর কোনো লাগবে বলে আমার মনে হয় না।’

রাজস্ব আয় বাড়াতে ফিসক্যাল ডিজিটাল মেশিন সংগ্রহ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, এসব মেশিন বসলে আমাদের রাজস্ব আদায় বাড়বে। মেশিনগুলো সফলভাবে বসানো গেলে করের হার না বাড়িয়েও রাজস্ব আদায় অনেক বেড়ে যাবে।

তিনি বলেন, চলতি বছর ১ লাখ মেশিন সংগ্রহ করা হবে। ইতোমধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে ১০ হাজার মেশিন ক্রয়ের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। খুব শিগগির এসব মেশিন দেশে আসবে। বাকি ৯০ হাজার মেশিন যাতে দ্রুত সংগ্রহ করা যায় সে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। আমারা দরপত্রের মাধ্যমে একাধিক সোর্স থেকে এসব মেশিন সংগ্রহ করব।

অর্থমন্ত্রী বলেন, এসব মেশিন প্রাথমিক পর্যায়ে এলাকাভিত্তিক বসানো হবে। এসব মেশিন এনবিআরের মূল সার্ভারের সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে। যেখানেই ভ্যাট আদায় হবে তার তথ্য সঙ্গে সঙ্গে মূল সার্ভারে যোগ হবে। ফলে ভ্যাট ফাঁকি দেয়ার প্রবণতা কমবে। এ বিষয়ে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে জনবল সংগ্রহ করে তাদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিয়ে কাজে নিয়োগ দেয়া হবে।

এর আগে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে দুটি ক্রয়প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয় বলে জানান অর্থমন্ত্রী। এরমধ্যে চট্রগ্রামে ‘শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিদ্যমান রানওয়ে ও টেক্সিওয়ে শক্তি বৃদ্ধিকরণ’ প্রকল্পে ব্যয় হবে ৪৭২ কোটি ৭৫ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। মেসার্স মীর আখতার–সিএএমসিই যৌথভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বলে অর্থমন্ত্রী জানান।

বৈঠকে অনুমোদিত অন্য প্রকল্পটি হচ্ছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের জ্বালানি দক্ষতা ও সংরক্ষণ বৃদ্ধি কার্যক্রমের অর্থায়ন প্রকল্পের কারিগরি সহযোগিতা প্রদানের জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ। এ প্রকল্পে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছে জাপানের মিৎসুবিশি রিসার্চ ইনস্টিটিউট। পরমার্শক প্রতিষ্ঠানের সবো নিতে ব্যয় হবে ৫৯ কোটি ৭৬ লাখ ৫৪ হাজার টাকা। রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩১ জুলাই ২০১৯/হাসনাত/রফিক