অর্থনীতি

আইএফসির বিনিয়োগে দেশে কর্মসংস্থান বাড়বে: অর্থমন্ত্রী

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, বাংলাদেশের বেসরকারি খাতের উন্নয়নে ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি) বিনিয়োগ বাড়ানোর আশ্বাস দিয়েছে। সম্ভাবনাময় অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বীকৃতি হিসেবে সংস্থাটি বাংলাদেশে আরো বেশি বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বার্ষিক বৈঠকে অংশ গ্রহণের জন্য অর্থমন্ত্রী বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থান করছেন। বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের বার্ষিক বৈঠকের অংশ হিসেবে আইএফসির আঞ্চলিক ভাইস প্রেসিডেন্ট স্নিজানা স্টিইল্জকোভিকের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদল জাপান ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশনের (জেবিআইসি) ডেপুটি গভর্নর   নবুমিতসু হায়াশির সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন।

এছাড়াও বিশ্ব ব্যাংকের দক্ষিণ এশীয় অঞ্চল আয়োজিত ইউএসএআইডির সঙ্গে ট্যাক্স রিফর্ম এবং সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে বৈঠক করেন অর্থমন্ত্রী। বৈঠক শেষে এক ব্রিফিংয়ে বৈঠকের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা গাজী তৈহিদুল ইসলাম।

বৈঠবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের অর্থ বিভাগের সচিব আবদুর রউফ তালুকদার, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মনোয়ার আহমেদ, বিশ্ব ব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া এবং ওয়াশিংটনে নিযুক্ত ইকনোমিক মিনিস্টার মো. সাহাবুদ্দিন পাটোয়ারী।

ব্রিফিংয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাংক থেকে শুরু করে এবার আমাদের সঙ্গে যারাই সাক্ষাৎ করেছে সবাই বলেছে আমাদের সক্ষমতা বেড়েছে। সবাই স্বীকৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ সঠিক পথে রয়েছে। সবার কাছ থেকে একটা স্পষ্ট বার্তা ছিল যে, সবাই বাংলাদেশকে দেয়া সহযোগিতা বাড়াতে চায়। এটা আমাদের জন্য বড় বার্তা। বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে বাড়তি ঋণ দিতে উন্মুখ হয়ে আছে। আশা করছি এবারই বিশ্বব্যাংক থেকে আমাদের সব থেকে বড় সহযোগিতা আসবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের বেসরকারি খাতের উন্নয়ন বিনিয়োগ বাড়াবে ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি)। এ খাতে সারা বিশ্বে সংস্থাটি মোট এক হাজার বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করার ঘোষণা দিয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশের একটি বেসরকারি কোম্পানি ইতিমধ্যে ১৯ মিলিয়ন ডলার নিয়েছে। এর আগে আরো অনেকগুলো বেসরকারি কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছে আইএফসি।

অর্থমন্ত্রী বলেন, বেসরকারি খাতে বিনিয়োগে ভাল ফলা পাওয়া গেছে। এজন্য এ দেশের বেসরকারি খাতের উন্নয়নে বিনিয়োগ বাড়াতে চায় সংস্থাটি। আইএফসির বিশাল বিনিয়োগ ঘোষণা লুফে নিতে পারে বাংলাদেশের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো। ফলে বাংলাদেশে কর্মসংস্থানের পরিধি আরো বাড়বে বলে মনে করছে বাংলাদেশ সরকার। আইএফসি ঋণে সুদহার ১০ শতাংশের কম হবে।

আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ইনকাম ট্যাক্স কালেকশনে সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ইউএসএআইডি সহায়তা দেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এছাড়া জাপান ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন (জেবিআইসি) বাংলাদেশে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এই প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিন অকার্যকর ছিল। এবার তারা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে এবং কার্যকরভাবে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তারা বিনিয়োগ করলে আমাদের আরেকটি নতুন উইন্ডো খুলে যাবে। তারা তাদের দেশের বেসরকারি  প্রতিষ্ঠানগুলোকে আমাদের দেশে নিয়ে আসবে যা আমাদের জন্য খুবই ইতিবাচক।

সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ক বৈঠক সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী বলেন, সড়কের নিরাপত্তা জোরদারকরণ অত্যন্ত জরুরি। অকাল মৃত্যু কারোর কাম্য হতে পারে না। সড়কে চলাচল ও ট্রাফিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। বিশ্ব ব্যাংক যদি এ বিষয়ে কাজ করে আশা করি অত্যন্ত ভাল করবে। তবে শুধু একটি কোন নির্দিষ্ট পদ্ধতি দিয়ে এটি সম্ভব নয়, যে দেশের জন্য যেটি উপযোগী সেটি সেদেশে প্রয়োগ করতে হবে। এটি একটি অত্যন্ত জরুরি এবং সময়ের দাবি।

তিনি বলেন, এ বিষয়ে প্রথমে যে কাজটি করতে হবে সেটি হচ্ছে সচেতনা বৃদ্ধি। সবার মধ্যে সচেতনা বৃদ্ধি করতে হবে এবং এটি শুরু করতে হবে স্কুলের বাচ্চাদের থেকে। তাদের বিভিন্নভাবে এ বিষয়ে শিক্ষা দিতে হবে। তারা তাদের পিতা-মাতাকে এবং পিতা-মাতারা সব আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে শেয়ারের মাধ্যমে এই সচেতনতা সৃষ্টি করা সম্ভব। পাশাপাশি সরকারকে জোরালো ভূমিকা পালন করতে হবে। ইতিমধ্যে আমরা বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে আইন পাশ হয়েছে। চার লেন-ছয়লেন রাস্তা তৈরি হচ্ছে, এগুলোর পাশ দিয়ে লোকাল যানবাহনের জন্য সার্ভিস লেন রাখা হচ্ছে। চালকদের বিশ্রামের জন্য বিশ্রামাগার তৈরি করা হচ্ছে।

 

ঢাকা/হাসনাত/সাইফ