অর্থনীতি

বিশেষ সুবিধার আওতায় জামদানি শিল্প

নকশা, বুনন ও সৌন্দর্যে দেশের গর্বের পণ্য জামদানি। ইউনেস্কোর ইনটেনজিবল কালচারাল হেরিটেজ তালিকাতেও রয়েছে ঐতিহ্যের প্রতিক জামদানি।

এই জামদানি শিল্পের সুরক্ষায় বাড়তি সুবিধা দিতে এবার সরকার আমদানিকৃত কাঁচামালের উপর প্রযোজ্য উৎসে আয়কর মওকুফের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বাংলাদেশের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে জামদানির স্বীকৃতি মিলেছে। তারপরও অনেকটাই দুর্দশায় এই জামদানি শিল্প। ভালো নেই কারিগরসহ শিল্প সংশ্লিষ্টরা। তাদের দাবি প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকতে না পেরে তাঁতিরা ঝুঁকছেন অন্য পেশায়।

গত ২৯ অক্টোবর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে এ বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন ইস্যু করেছে। যেখানে শর্ত সাপেক্ষে জামদানি শিল্পের জন্য আমদানিকৃত কাঁচামালের উপর উৎসে কর থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ফলে জামদানি সংশ্লিষ্ট কাঁচামাল আগের চেয়ে সস্তায় আমদানি করতে পারবেন তাঁতিরা। তবে সেজন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানটিকে তাঁত বোর্ডের নিবন্ধিত হতে হবে।

এনবিআর চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়ার সই করা আদেশে বলা হয়েছে, ‘১৯৮৪ সালের আয়কর অধ্যাদেশের ধারা ৪৪-এর ক্ষমতাবলে সরকার বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের নিবন্ধিত জামদানি তাঁত সমিতি কর্তৃক জামদানি শিল্পের জন্য আমদানিকৃত তাঁত কাঁচামালের উপর আয়কর অধ্যাদেশের অধীন আরোপিত উৎস আয়কর হতে শর্ত সাপেক্ষে অব্যাহতি প্রদান করা হলো।’

শর্তগুলো হলো- আমদানিকৃত কাঁচামাল শুধু জামদানি তাঁত শিল্পে ব্যবহার করতে হবে এবং আমদাকিতৃ কাঁচামাল কোনোভাবেই স্থানীয়ভাবে বিক্রয় বা স্থানান্তর করা যাবে না। আর ওই আদেশ ২৭ অক্টোবর থেকে কার্যকর ধরা হয়েছে।

বর্তমানে জামদানি শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে ৬৮ হাজারেরও বেশি মানুষ সম্পৃক্ত বলে তাঁত শিল্প সংশ্লিষ্টরা দাবি করেছেন। তাদের দাবি ছিল এ শিল্প টিকিয়ে রাখতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাব রয়েছে। এছাড়া কাঁচামাল ও উপকরণের মূল্যবৃদ্ধি, দেশি কাপড়ের বাজার তৈরিতে সংকট, নতুন প্রযুক্তির যন্ত্রচালিত তাঁতের সঙ্গে সক্ষমতায় পেরে না ওঠা, বিপণন ব্যর্থতা, যুগোপযোগী প্রশিক্ষণের অভাব ও পুঁজি সংকটে ধুঁকে ধুঁকে চলছে সম্ভাবনাময় এ শিল্প।

এসব বিষয় বিবেচনা করেই এনবিআর থেকে জামদানি কাঁচামালের উপর উৎসে কর মওকুফ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে এনবিআরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে এনবিআর সদস্য (কর প্রশাসন) কালিপদ হালদার রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আদেশটি করনীতি বিভাগ হতে ইস্যু হয়েছে। তবে আমি বলতে পারি জামদানি শিল্পকে বাঁচাতে হবে। এটা আমাদের ঐতিহ্যের বাহক। জামদানি শিল্পকে পুনর্জীবিত করতে যা করণীয় এনবিআর করবে।’

প্রাচীনকালের মিহি মসলিন কাপড়ের উত্তরাধিকারী হিসেবে জামদানি শাড়ি বাঙ্গালি নারীদের অতি পরিচিত বস্ত্র। মসলিনের উপর নকশা করে জামদানি কাপড় তৈরি করা হতো। জামদানি বলতে সাধারণতঃা শাড়িকেই বোঝানো হয়। তবে জামদানি দিয়ে নকশী ওড়না, কুর্তা, পাগড়ি, রুমাল, পর্দা প্রভৃতিও তৈরি করা হতো। ১৭০০ শতাব্দীতে জামদানি দিয়ে নকশাওয়ালা শেরওয়ানির প্রচলন ছিল। মূলত ঢাকা জেলাতেই মসলিন চরম উত্কর্ষ লাভ করে। ঢাকার সোনারগাঁও, ধামরাই, রূপগঞ্জ মসলিনের জন্য বিখ্যাত ছিল। তবে জামদানি শাড়ির সব বিখ্যাত ও অবিস্মরণীয় নকশা ও বুননের অনেকগুলোই বর্তমানে বিলুপ্তপ্রায়। এখন রূপগঞ্জ, সোনারগাঁ ও সিদ্ধিরগঞ্জের প্রায় ১৫৫টি গ্রামে এই শিল্প টিকে আছে।  

ঢাকা/এম এ রহমান/সনি/নাসিম