অর্থনীতি

‘স্বল্পমূল্যে ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া হবে’

এশিয়া-প্যাসিফিক ইনফরমেশন সুপার হাইওয়ের মাধ্যমে স্বল্পমূল্যে ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

বুধবার শেরে বাংলানগরে অর্থমন্ত্রীর নিজ দপ্তরে জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল এবং ইউনাইটেড নেশনস ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কমিশন ফর এশিয়া অ্যান্ড দ্য প্যাসিফিকের (এসক্যাপ) নির্বাহী সচিব আরমিদা সালসিয়াহ আলিসজাহবানার সাথে সৌজন্য সাক্ষাতে অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

বৈঠকে এশিয়া-প্যাসিফিক ইনফরমেশন সুপার হাইওয়ে, মানব সম্পদের দক্ষতা বৃদ্ধি, যোগাযোগ, বাণিজ্য সম্প্রসারণ ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করা হয়।

মুস্তফা কামাল বলেন, ‘বিশ্ব আজ প্রকৃতপক্ষেই জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে হুমকির সম্মুখীন। জলবায়ু পরিবর্তন থেকে উদ্ভূত বহুবিধ প্রভাবের মুখোমুখি হয়ে বিশ্বের ভবিষ্যৎ হুমকির মধ্যে রয়েছে। জলবায়ু দূষণে বাংলাদেশের কোনো ভূমিকা না থাকলেও বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের শিকার যা এর উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত করছে। ’

তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে জলোচ্ছ্বাস বেড়েছে। সাগরের পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে খরস্রোত। জলবায়ুর চরম ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের মতো দেশগুলো। আইসল্যান্ডের বরফ উষ্ণতার কারণে গলে যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন থেকে উদ্ভূত বহুবিধ প্রভাবকে টেকসইভাবে সমাধানের জন্য আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থাকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। ’

অর্থমন্ত্রী মতামত প্রকাশ করে বলেন, ‘এশিয়া-প্যাসিফিক ইনফরমেশন সুপার হাইওয়ের মাধ্যমে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোকে ট্রান্স এশিয়ান রেললাইন বরাবর ফাইবার অপটিক কেবল দিয়ে সংযুক্ত করে স্বল্পমূল্যে ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া সম্ভব হবে। এসডিজির উদ্দেশ্য পূরণে সুস্বাস্থ্য, গুণগত শিক্ষা, উদ্ভাবন, স্মার্ট সিটির মতো লক্ষ্য অর্জনে ইনক্লুসিভ ইন্টারনেট গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। তাই এসক্যাপের সদস্যভুক্ত দেশগুলোকে এশিয়ান-প্যাসিফিক ইনফরমেশন সুপার হাইওয়েতে যুক্ত করা ফলপ্রসূ হবে। ’

এসক্যাপের নির্বাহী সেক্রেটারি আরমিদা সালসিয়াহ এসব বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির প্রশংসা করে যেকোনো প্রয়োজনে তারা পাশে থাকবেন বলে আশস্ত করেছেন এসক্যাপ-এর নির্বাহী সেক্রেটারি।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন লক্ষণীয়। অর্থনৈতিক গতিশীলতার কারণে বাংলাদেশ গত বছর স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে মাপকাঠি অর্জনে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কাজের ক্ষেত্রে প্রতিটি পদক্ষেপে এসক্যাপ এলডিসি থেকে বাংলাদেশের উত্তরণে সহায়তার অংশ হিসেবে প্রয়োজনীয় গতির জন্য উন্নয়ন অ্যাজেন্ডা অর্থায়নের এই সুযোগ নিতে এবং এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

অর্থমন্ত্রী বাংলাদেশের অগ্রগতি সম্পর্কে বলেন, “বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় যদি কোনো দেশ অংশগ্রহণ করতে চায়, তাহলে তাদের আমরা স্বাগত জানাব। বাংলাদেশ ক্রমাগতভাবে অর্থনৈতিক খাতে উন্নতি সাধন করেছ চলেছে। গত অর্থবছরে আমরা ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছি। চলতি অর্থবছরেই আমরা ৮ দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে ৮ দশমিক ৩০ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের প্রত্যাশা করছি, যা ২০২৪ সাল নাগাদ দাড়াবে ১০ শতাংশ এবং সেটা অব্যাহত থাকবে।

‘বিশ্বে যে কয়েকটি দেশের রপ্তানি আয় খুব দ্রুত বাড়ছে, তার মধ্যে বাংলাদেশ একটি। আমাদের গড় আয়ু বেড়েছে, ক্ষুধা ও দারিদ্যের হার কমে হার কমেছে পূর্বের তুলনায় অনেক। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাতে যুগপযোগী করতে ঢেলে সাজানো হচ্ছে, গ্রাম ও শহরের বৈষম্য কমিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে কর্মসংস্থানের প্রতি জোর দেওয়া হয়েছে।”

বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ অত্যন্ত সুন্দর এবং অপার সম্ভাবনার দেশ। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সব চেয়ে ভালো বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ এবং অত্যন্ত আকর্ষণীয় প্রণোদনার সুযোগ গ্রহণের মাধ্যমে অধিক হারে মুনাফার সুযোগ রয়েছে বাংলাদেশে। বর্তমানে বাংলাদেশে জনমিতিক লভ্যাংশের (ডেমোগ্রাফিক ডেভিডেন্ট) সুযোগ বিদ্যমান। আগামী ২০৬১ সাল পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকবে বলে জানান মন্ত্রী। ঢাকা/হাসিবুল/সনি