অর্থনীতি

গাড়ি আমদানি কমেছে ৪৬ শতাংশ

বড় ধরনের শুল্ক বৈষম্যের কারণে রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানি দিন দিন কমছে। ফলে সরকারের রাজস্ব আয় আশঙ্কাজনক হারে কমেছে বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিকেলস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বারভিডা)।

শনিবার রাজধানীর বিজয়নগরে বারভিডার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সভাপতি আবদুল হক এ সংক্রান্ত পরিসংখ্যান তুলে ধরেন।

তিনি জানান, শুল্ক বৈষ্যমের কারণে কয়েক বছরের তুলনায় গাড়ি আমদানি কমেছে প্রায় ৪৬ শতাংশ। এর ফলে সরকার হাজার কোটি টাকার বেশি রাজস্ব হারিয়েছে।

আবদুল হক বলেন, রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানি ক্রমাগতভাবে কমার ফলে ব্যবসায়ীরা আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়েছেন। সরকারের রাজস্ব আয়ও লক্ষণীয়ভাবে হ্রাস পেয়েছে। রিকন্ডিশন্ড ও নতুন গাড়ির শুল্ক কাঠামো এমনভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে যে, নতুন গাড়ির চেয়ে রিকন্ডিশন্ড গাড়ির দাম কোনো কোনো ক্ষেত্রে দ্বিগুণ হচ্ছে। ফলে চাহিদা ও ক্রেতা কমেছে। এতে আমদানিও হ্রাস পেয়েছে।

তিনি বলেন, নতুন গাড়ির কোনো কোনো উৎপাদক/ এসেম্বেলর জাপান থেকে আমদানিকৃত রিকন্ডিশন্ড গাড়িগুলোকে ‘পরিবেশ দূষণকারী’ বলে অভিহিত করছেন, যা আসলে ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। দেশে বছরে নতুন গাড়ির চাহিদা কত, সে বিষয়ে কোনো সমীক্ষা না করেই নতুন গাড়ি উৎপাদন ও সংযোজনের সিদ্ধান্ত নেয়াটা কতটা যুক্তিযুক্ত তা ভেবে দেখা দরকার।

বারভিডার সভাপতি বলেন, ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানি হয়েছে ২৩ হাজার ৭৫টি। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আমদানি হয়েছে ১২ হাজার ৫০২টি।  অর্থাৎ গাড়ি আমদানি কমেছে মোট ১০ হাজার ৫৭৩টি।  এর ফলে এক বছরের ব্যবধানে রাজস্ব কমেছে হাজার কোটি টাকার বেশি। আমদানি কমে যাওয়ার প্রবণতা অব্যাহত থাকায় বর্তমান ২০১৯ সালের জুলাই মাস থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ৫ মাসে আমদানি হয়েছে মাত্র ৩ হাজার ৪৩৮টি গাড়ি এবং রাজস্ব আদায় হয়েছে ৬৮৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকা।

উদাহরণ দিয়ে আবদুল হক বলেন, একটি পুরনো এম/আউটল্যানডার, ডিবিএ-জিএফ সেফেন ডব্লিউ ২ হাজার সিসির ২০১৪ সালের রিকন্ডিশন্ড গাড়ির আগের মূল্য ৯ লাখ ৫০ হাজার টাকার ভিত্তিতে শুল্ক-কর গ্রহণ না করে নতুন ইয়েলো বুক হিসেবে গাড়ির মূল্য ১৩ লাখ ৮৬ হাজার টাকা ধরা হয়। অথচ ইয়েলো বুকের বছরওয়ারি পুরনো মূল্যে রিকন্ডিশন্ড গাড়ির শুল্কমূল্য নির্ধারিত হওয়াই আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। সেটা না করায় ২১২.০৪ শতাংশ শুল্ক ধরার কথা বললেও বাস্তবে কর আরোপিত হয় ৩০৮.০৪ শতাংশ।  অন্যদিকে, একই মডেলের ২০১৯ সালের নতুন গাড়ির প্রকৃত ক্রয়মূল্য ১৪ লাখ ৭৮ হাজার টাকার পরিবর্তে আমদানিকারক কর্তৃক ঘোষিত মূল্য ধরা হয় ১২ লাখ ৯ হাজার টাকা। এখানে ২১২.০৪ শতাংশ কর ধরা হলেও ক্রয়মূল্য কম ধরায় শুল্ক-কর বাস্তবে ১৭৭.০৪ শতাংশ পড়ে যায়। ফলে নতুন গাড়ির বাজারমূল্য পুরাতন গাড়ির চেয়ে কম হয়।

প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে এ খাতের অনেক আমদানিকারক ও উদ্যোক্তা ব্যবসা থেকে ছিটকে পড়ছেন, দাবি করে আবদুল হক বলেন, শুল্কায়ন নিয়ে বৈষম্যমূলক বিধিবিধানের কারণে সরকার যেমন রাজস্ব হারাচ্ছে, তেমনি ভোক্তারা সুলভ মূল্যে মানসম্পন্ন গাড়ি কেনা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন। ফলে অনিরাপদ যান নছিমন, করিমন ও ভটভটির মতো গাড়িগুলো অবাধে চলছে দেশের সড়ক ও মহাসড়কে, যা দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ।

তিনি বলেন, রিকন্ডিশন্ড মোটরযান শুল্কায়নে স্থায়ী কোনো নীতিমালা নেই। বছর বছর রিকন্ডিশন্ড মোটরযান শুল্কায়ন সংক্রান্ত নীতিমালা পরিবর্তন হয়ে আসছে। ব্রান্ড নিউ গাড়ি ও রিকন্ডিশন্ড গাড়ির ক্ষেত্রে মোট করাপতন আরোপে বৈষম্যের জটিল প্রক্রিয়ায় রিকন্ডিশন্ড গাড়ির শুল্কায়ন করা হচ্ছে। আমরা চাই, নতুন ও পুরনো গাড়ি নির্বিশেষে সকলের জন্য একটি সুষ্ঠু নীতিমালা হোক। সকলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা হোক।

একই সঙ্গে রিকন্ডিশন্ড গাড়ি নতুন গাড়ির থেকে বেশি পরিবেশবান্ধব, এ দাবি করে আবদুল হক পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে রিকন্ডিশন ও নতুন গাড়ির পরিবেশদূষণ নিয়ে একটি সার্ভে করারও দাবি জানান।

সংবাদ সম্মেলনে বারভিডার সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলামসহ সংগঠনের অধিকাংশ নেতা উপস্থিত ছিলেন। ঢাকা/এম এ রহমান/রফিক